Sunday 29 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দাম বাড়তে পারে, তাই বন্ধ ছিল অকটেন বিক্রি!

উজ্জল জিসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২৯ জুন ২০২৫ ১৮:৫৯

পেট্রোল পাম্প। ফাইল ছবি

ঢাকা: শনিবার (২৮ জুন) হঠাৎ করেই রাজধানীর পেট্টোল পাম্পগুলোতে অকটেনের সংকট দেখা দেয়। এদিন মধ্যরাত থেকে পাম্পগুলো অকটেন বিক্রি বন্ধ করে দেয়। পাম্পগুলো ক্রেতাদের জানায়, অকটেন নেই। তখন কিছু কিছু বাইকারকে পেট্টোল নিতে দেখা যায়। মোটরসাইকেল ও বিভিন্ন যানবাহনে ব্যবহার করা এই জ্বালানি বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয় না। এটিকে বাংলাদেশেই রিফাইন করে তৈরি করা হয়। এর পরেও কেন হঠাৎ করে অকটেন উধাও হয়ে যায়? এ নিয়ে অকটেন ব্যবহারকারীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয়।

রোববার (২৯ জুন) দুপুর ২টার দিকে রাজধানীর বেশ কয়েকটি পাম্প স্টেশন থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়। পাম্পগুলো থেকে জানানো হয়, মধ্যরাত থেকে অকটেন ছিল না, তবে অন্যসব কিছুই ছিল। যারা অকটেন পায়নি তারা তাৎক্ষণিক পেট্টোল নিয়ে গেছে। আজ দুপুর ২টার পর থেকে অকটেন মিলছে। রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ে রমনা পাম্পে গিয়ে দেখা যায়, অকটেনের মেশিনে মোটরসাইকেলের দীর্ঘ সারি। সবাই অকটেন কিনছেন। কারণ, বাইকারদের বেশিরভাগই জ্বালানি হিসেবে অকটেন ব্যবহার করেন। প্রতিলিটার অকটেন ১২২ টাকা হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। আর পেট্টোল বিক্রি হচ্ছে ১১৮ টাকা লিটার।

বিজ্ঞাপন

রাজধানীর শাহবাগের পরীবাগে যমুনা পেট্টোল পাম্পেও একই অবস্থা দেখা যায়। সেখানেও ১২২ টাকা লিটারে অকটেন বিক্রি হচ্ছে। এ সময় অকটেন নেওয়ার দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এছাড়া রাজধানীর ডি এল (এয়ারপোর্ট), নিকুঞ্জ পেট্রোল পাম্প (খিলক্ষেত), সিএসডি বা ট্রাস্ট (বিজয় সরণি এবং মহাখালী রাওয়া ক্লাবের বিপরীতে), ক্লিন ফুয়েল (মহাখালী বাস টর্মিনাল বিপরীতে), সাউদার্ন ফুয়েল (তেজগাঁও নাবিস্ক, রমনা পেট্রোল পাম্প ( মৎস ভবন), যমুনা পেট্রোল পাম্প (পরীবাগ হোটেল কন্টিনেন্টাল এর বিপরীতে), খান অ্যান্ড সন্স (মতিঝিল), এসপি পাম্প (গাবতলী মজার রোড), দিগন্ত পাম্প (মিরপুর ১৪) ও সিএসডি (মিরপুর ক্যান্টনমেন্ট) পাম্পে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অকটেনের দাম বাড়বে এই খবর প্রায় সবাই জানতো। মূলত মন্ত্রণালয় থেকে এই ভুয়া তথ্য পাম্প মালিকদের ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই ভুয়া সংবাদের ভিত্তিতে পাম্পগুলোর মালিকরা অকটেনের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। আর প্রচারণা চালায় যে, অকটেন নেই। তবে মন্ত্রণালয় থেকে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হলে পুনরায় অকটেন বিক্রি শুরু করে।

মোটরসাইকেল চালকরা জানান, রাত থেকে অনেকে অকটেন নিতে পারেননি। দাম বাড়বে এরকমটাও অনেকে শুনেছেন। তবে এখন আগের দামেই অকটেন পাওয়া যাচ্ছে। তাই একটু বেশি ভরে রাখছেন। চাকরিজীবী ইমরান রহমান সারাবাংলার এই প্রতিবেদককে জানান, গতকাল রাতে তিনি অকটেন নিতে গিয়ে ফেরত এসেছেন। আজ সকালেও তিনি পাম্পে গিয়ে অকটেন নিতে পারেননি। পরে তিনি পেট্টোল নিয়ে আসেন। আরেক বাইকার ইয়ামীন হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘দুপুর ১২টার দিকে তেজগাঁওয়ে গিয়ে অকটেন না পেয়ে ফিরে আসি। তবে ২টার পর রমনা পাম্প থেকে আগের দামেই অকটেন কিনেছি।’

গত ১ জুন জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে জ্বালানির যে দাম নির্ধারণ করা হয়েছিল। সেই একই দাম বজায় রেখে (২৯ জুন) নতুন করে আরও একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রণালয়। সেই প্রজ্ঞাপন জারির পর পাম্পগুলো তড়িঘড়ি করে অকটেন বিক্রি শুরু করে। এদিনের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, অকটেনের দাম ১২২ টাকা, পেট্টোলের দাম ১১৮ টাকা, কেরোসিন ১১৪ টাকা ও ডিজেল ১০৪ টাকা ধরে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে। যা গত ১ জুনের প্রজ্ঞাপনের দামের সঙ্গে হুবহু মিল রয়েছে। নির্ধারণ করা নতুন দাম আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয় নতুন প্রজ্ঞাপনে।

পেট্টোল পাম্পে কর্মরতরা জানান, গতকাল রাতে মালিকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে অকটেন বিক্রি বন্ধ রাখতে। সেজন্য আজ দুপুর পর্যন্ত অকটেন বিক্রি বন্ধ ছিল। তবে মালিকের নির্দেশেই আবার অকটেন বিক্রি শুরু হয়েছে। রমনা পাম্পের এক হিসাবরক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘দাম বাড়বে সেজন্য অকটেন বিক্রি সব পাম্পেই বন্ধ ছিল। আজ সরকারি প্রজ্ঞাপনের পর অকটেন বিক্রি শুরু হয়েছে।’ কেন এমন করা হলো জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা চাকরি করি। মালিক যে নির্দেশনা দেয় তাই করি। এতে আমাদের কিছুই করার নাই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পেট্টোল পাম্প মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়ক জুবায়ের আহাম্মেদ চৌধুরী সারাবাংলাকে বলেন, ‘দাম বাড়বে এজন্য বিক্রি বন্ধ ছিল এ খবর সত্য নয়। গতকাল থেকে কিছু কিছু পাম্পে অকটেনের গাড়ি আসেনি। তাই বিক্রি বন্ধ ছিল। আজ গাড়ি আসায় ফের বিক্রি শুরু হয়েছে।’ অন্তত ১৪টি পাম্পে অকটেন বিক্রি বন্ধ ছিল এমন প্রশ্ন করতেই তিনি ক্ষেপে যান। এরপর কলটি কেটে দেন ।

সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম

অকটেন বিক্রি দাম বাড়তে পারে পেট্রোল বন্‌ধ