ঢাকা: স্বল্পোন্নত দেশ থেকে চূড়ান্ত উত্তরণের প্রক্রিয়ায় রফতানি খাতে নগদ সহায়তা বা প্রণোদনা প্রদান থেকে পিছু হটছে সরকার। রফতানিতে নগদ সহায়তা প্রত্যাহারে বিগত সরকারের আমলে গৃহীত চার ধাপের একটি কর্মপরিকল্পনা গত বছর ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এবং ইতোমধ্যে দুটি ধাপ কার্যকর করা হয়েছে। পরিকল্পনার তৃতীয় ধাপটি চলতি ২০২৫ সালের গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল এবং ও চতুর্থ ধাপটি আগামী ২০২৬ সালের ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে তৃতীয় ধাপ কার্যকরে ৬ মাস এবং চতুর্থ ধাপ কার্যকরে ৫ মাস সময় পেছানো হচ্ছে।
উল্লেখ্য, জাতিসংঘের নির্ধারিত মানদণ্ড অনুযায়ী, সংস্থাটির কমিটি ফর ডেভলেপমেন্ট পলিসি (সিডিপি)-এর সুপারিশ অনুযায়ী আগামী ২০২৬ সালের ২৪ নভেম্বর বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হবে। স্বল্পোন্নত দেশ হতে উত্তরণের পরবর্তী সময়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও)-এর এগ্রিমেন্ট অন সাবসিডিস অ্যান্ড কাউন্টারভেলিং মেজারস (এএসসিএম) অনুসারে রফতানি নির্ভর কোনো পণ্যে ভর্তুকি বা আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করা যাবে না।
অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, রফতানিতে বিদ্যমান প্রণোদনা বা আর্থিক সহায়তা একসঙ্গে সব ও পুরোপুরি প্রত্যাহার করা হলে রফতানিকারকরা হঠাৎ করে চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারেন। ফলে রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। সে বাস্তবতায় বিগত সরকারের আমলে রফতানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা ধাপে ধাপে বা ক্রমান্নয়ে কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সময়ের কর্মপরিকল্পনা অনুসারে প্রথম ধাপে গত ২০২৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৪৩টি খাতের সকল পণ্যের রফতানি প্রণোদনা বা নগদ সহায়তা আংশিক হ্রাস করা হয়। দ্বিতীয় ধাপে গত বছরের ১ জুলাই থেকে ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত নগদ সহায়তা আরও কিছুটা কমানো হয়েছে।
সূত্র মতে, তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপ কার্যকরের সময় ছিল যথাক্রমে চলতি বছরের গত ১ জুলাই এবং আগামী ২০২৬ সালের ১ জুলাই। পরিবর্তিত সময়সীমা অনুযায়ী, তৃতীয় ধাপটি ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে এবং চতুর্থ ধাপটি ওই বছর নভেম্বর থেকে কার্যকর করা হবে।
সূত্র মতে, ক্ষমতার পট পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে রাজনৈতিক কারণে শিল্প খাতে অস্থিরতা, ট্রাম্প প্রশাসন কর্তৃক বাংলাদেশের পণ্যের ওপর অধিকহারে শুল্কারোপ, স্থল বন্দর দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য রফতানিতে ভারতের বিধি-নিষেধ- এ তিন কারণে রফতানিতে বিদ্যমান প্রণোদনা বা আর্থিক সহায়তা প্রত্যাহারের সময়সীমা বাড়ানো হচ্ছে। ইতোমধ্যেই প্রস্তাবটি অর্থ উপদেষ্টা অনুমোদন দিয়েছেন বলে সূত্র জানায়।
জানা যায়, বিগত সাত অর্থবছরে রফতানি খাতে প্রদত্ত প্রণোদনার পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৭১৫ কোটি টাকা। এর সিংহভাগ (৮০ ভাগেরও বেশি) পেয়েছে রফতানিমুখি তৈরি পোশাক শিল্প।