ঢাকা: মার্কিন প্রকাশনা সংস্থা গডিবয় থেকে প্রকাশিত মজিদ মাহমুদের উপন্যাস ‘মেমোরিয়াল ক্লাব’র দ্বিভাষিক প্রকাশনা উৎসব শনিবার (১২ জুলাই) সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এদিন সন্ধ্যা ৭ টা থেকে রাত সাড়ে ৮ টা পর্যন্ত ৫৭ ডাক্সটন রোডের বুক বারে প্রকাশনা উৎসবটি হবে।
প্রখ্যাত বাংলাদেশি কবি, ঔপন্যাসিক ও গবেষক মজিদ মাহমুদ এ অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে শুক্রবার (১১ জুলাই) ভোরে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সিঙ্গাপুরের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।
সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত এবং বিনামূল্যে, এই অনুষ্ঠানে মার্কিন জি লং কোহ, কবি এ কে জিলানী এবং অধ্যাপক দার্শনিক নূর আমালি ইব্রাহিমের অংশগ্রহণে ইংরেজি এবং বাংলা উভয় ভাষায় পাঠ এবং আলোচনা থাকবে।
মেমোরিয়াল ক্লাব, মূলত বাংলায় লেখা এবং লেখক নিজেই ইংরেজিতে অনুবাদ করেছেন। এটি ঢাকার আধুনিক জীবনের একটি আত্মদর্শী এবং উজ্জ্বল প্রতিকৃতি।
এটি ব্যক্তিগত অসন্তোষ এবং পেশাদার অসন্তোষের মধ্যে আটকে থাকা একজন হতাশ সাংবাদিক হাসানকে অনুসরণ করে। বেপরোয়াতার একটি মুহূর্ত তার জীবনকে অশান্তিতে ফেলে দেয়, আকাঙ্ক্ষা, বিচ্ছিন্নতা এবং ন্যায়বিচারের গভীর প্রশ্ন উত্থাপন করে।
উপন্যাসটি নিয়ে মজিদ মাহমুদ বলেন, ‘এই উপন্যাসটি কেবল একজন মানুষের সংকটের কথা নয়, এটি আমাদের সামাজিক কাঠামোর গভীর ক্ষত এবং দ্বন্দ্বের কথা। সিঙ্গাপুরের পাঠকদের কাছে এটি তুলে ধরতে পেরে আমি সম্মানিত।’
স্থানীয় লেখক ও শিল্পীদের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমন্ত্রিত লেখক বলেন যে, তিনি আন্তর্জাতিক দর্শকদের কাছে বাংলাদেশি সাহিত্য তুলে ধরতে পেরে আনন্দিত হবেন।
অনুষ্ঠানের আগের রাতে ক্যাপাডোসিয়ায় লেখকের সম্মানে একটি নৈশভোজের আয়োজন করা হবে। ১৩ জুলাই, লেখক সিঙ্গাপুরের বিশিষ্ট লেখক, সম্পাদক এবং নাট্যকার এনজি জি শেং আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে সিঙ্গাপুরের অন্যান্য লেখকদের সঙ্গে যোগ দেবেন।
মজিদ মাহমুদ বাংলাদেশের একজন প্রতিশ্রুিতশীল সাহিত্যিক। তার কাব্যগ্রন্থ ‘মাহফুজামঙ্গল’ এবং নজরুল জীবনীমূলক উপন্যাস ‘তুমি শুনিতে চেয়ো না’র জন্য সর্বাধিক পরিচিত। সাহিত্যকৃর্তির স্বীকৃতি হিসেবে তিনি দেশি-বিদেশি অনেক পুরস্কার পেয়েছন।
মেমোরিয়াল ক্লাব সম্প্রতি গডি বয় নামক মার্কিন প্রকাশনি সংস্থা প্রকাশ করেছে। এ প্রকাশনা বাংলা সাহিত্যকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে পরিচিত করার সুযোগ তৈরি করবে।
বইটির মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান শুরু হবে গডি বয় এলএলসির প্রকাশক জি লিওং কোহের উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে লেখক পাঠক এবং বইটির সাথে অন্যান্যের পরিচয় করিয়ে দেবেন।
মঞ্চে মাহমুদের সাথে যোগ দেবেন সিঙ্গাপুর-ভিত্তিক বাংলাদেশি কবি এবং অভিবাসী অধিকারকর্মী এ কে জিলানি। জিলানির লেখার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে বৈষম্য, লিঙ্গ এবং মানবাধিকার। তিনি মাইগ্রেন্ট কালচারাল শো সিঙ্গাপুরের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং বার্ডস মাইগ্রেন্ট থিয়েটারের সদস্য।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেবেন সিঙ্গাপুরের জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানী ড. নূর আমালি ইব্রাহিম। ইব্রাহিমের গবেষণা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ধর্ম, নাগরিক সমাজ এবং শ্রমের ওপর আলোকপাত করে। উপন্যাসের বিষয়বস্তুকে আঞ্চলিক দৃষ্টিকোণ থেকে তিনি উপস্থাপন করবেন।
আয়োজকরা বলছেন, অনুষ্ঠানটি ‘আন্তঃসাংস্কৃতিক বিনিময় এবং অনুবাদে বাংলাদেশি সাহিত্যের সঙ্গে গভীর সম্পৃক্ত’ বৃদ্ধি করবে এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বাংলাদেশী প্রবাসীদের বৈচিত্র্য তুলে ধরবে।
এর আগেও কবি মজিদ মাহমুদের রচনা ল কমনওয়েলথ ফাউন্ডেশনসহ আন্তর্জাতিক প্রকাশ মাধ্যমে সমাদৃত হয়েছে। তিনি প্রায় চার দশক ধরে তিনি সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় কাজ করে যাচ্ছেন। তিন দশক আগে প্রকাশিত ‘মাহফুজামঙ্গল’ কাব্যগ্রন্থের মাধ্যমে তিনি ব্যাপকভাবে পাঠকপ্রিয়তা লাভ করেন। কবিতার পাশাপাশি মননশীল প্রবন্ধ-গবেষণা ও কথা-সাহিত্যেও তার খ্যাতি আছে।
তিনি ২০০৭ সাল থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ম্যাগসাইসাই পুরস্কারের জুরি ছিলেন। ইন্টারন্যাশনাল ইংলিশ লিটারারি জার্নাল, সিঙ্গাপুরভিত্তিক আন্তর্জাতিক জার্নাল কিতাব, ভোপাল সাহিত্য একাডেমিসহ অনেক খ্যাতিমান সংস্থা দ্বারা তিনি সম্মানিত হয়েছেন।
ইংরেজি, ফরাসি, চায়না ও হিন্দিসহ বিভিন্ন ভাষায় তার বই অনূদিত হয়েছে। মজিদ মাহমুদের আটটি বই লাইব্রেরি অব কংগ্রেসের মাধ্যমে ২৮টি বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিতে পাওয়া যায়। আমাজান ডটকমেও তার বেশ কিছু বই প্রকাশিত হয়েছে। নজরুল ইনসটিটিউট ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের বৃত্তি নিয়ে তিনি ‘নজরুল তৃতীয় বিশ্বের মুখপাত্র’ এবং ‘রবীন্দ্রনাথের ভ্রমণ সাহিত্য’ নিয়ে অভিসন্দর্ভ রচনা করেন। তার মোট গ্রন্থ সংখ্যা ৫০।
মজিদ মাহমুদ বাংলাদেশ রাইটার্স ক্লাব, জাতীয় প্রেস ক্লাব, জীবনানন্দ দাশ, অরণি, পদক্ষেপ ও বিনয় মজুমদারসহ বেশ কিছু পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। তিনি দৈনিক বাংলা, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা, অর্থনীতি প্রতিদিনসহ বেশি কিছু পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছেন।
এ ছাড়া, মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব অলটারনেটিভে শিক্ষকতা করেন। তিনি বর্তমানে ওসাকা নামের এক বেসরকারি সংস্থার প্রধান নির্বাহী। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল থেকে বাংলা ভাষা-সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। মজিদ মাহমুদ ১৯৬৬ সালের ১৬ এপ্রিল পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার চরগড়গড়ি গ্রামের মোহাম্মদ কেরামত আলী ও সানোয়ারা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করেন।