Friday 11 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মিটফোর্ডে চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা, যুবদল নেতাসহ গ্রেফতার ৪

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১১ জুলাই ২০২৫ ২০:৩৭ | আপডেট: ১১ জুলাই ২০২৫ ২১:৩০

মাহমুদুল হাসান মহিন ও তারেক রহমান রবিনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

ঢাকা: রাজধানীর পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে লাল চাঁদ ওরফে মো. সোহাগ (৪৩) নামে এক ভাঙারি ব্যবসায়ীকে পাথর দিয়ে নির্মমভাবে মাথায় আঘাত করে হত্যা করা হয়েছে। দিনের আলোয় এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

গত ৯ জুলাই সন্ধ্যা ৬টার দিকে হাসপাতালের ৩ নম্বর গেটসংলগ্ন রজনী ঘোষ লেনে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটলেও মূলত শুক্রবার (১১ জুলাই) এসে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে।

ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, ৪-৫ জন যুবক সড়কে পড়ে থাকা একজন ব্যক্তিকে বড় আকারের একটি পাথর দিয়ে ওপর থেকে আঘাত করা হচ্ছে। কেউ নিথর শরীরে আঘাত করছে আবার কেউ মাথায় সজোরে আঘাত করছে। এতে ওই লোকটির মাথা থেতলে যায় এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

বিজ্ঞাপন

পুলিশের সংগ্রহ করা সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সড়কটিতে অনেক লোক চলাচল করছিল। এরপরেও কেউ এগিয়ে আসেনি। এতে সন্ত্রাসীরা সোহাগকে দীর্ঘ সময় ধরে পাথর দিয়ে থেতলে মৃত্যু নিশ্চিত করে।

হত্যাকাণ্ডের শিকার সোহাগের বাড়ী কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন পূর্ব নামাবাড়ি গ্রামে। তার পিতার নাম ইউসুফ আলী হাওলাদার। তিনি দীর্ঘ দিন ধরে মিটফোর্ড এলাকায় ভাঙ্গারির ব্যবসা করে আসছেন।

নিহত সোহাগের বন্ধু মামুন শুক্রবার (১১ জুলাই) সারাবাংলাকে বলেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরে চকবাজার থানা যুবদল নেতা মহিন, সোহাগের কাছে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। কিন্তু সোহাগ মোটা অঙ্কের টাকা দিতে রাজি হননি। এরপর প্রায় দুই মাস আগে মহিন বেশ কয়েকবার হুমকি দিয়ে যায়। এরপর সেদিন সোহাগকে একা পেয়ে মহিনসহ ৪-৫ জন মিলে তাকে পাথর দিয়ে আঘাত করে এবং উলঙ্গ করে নির্মমভাবে মারধর করে। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।’

মামুন আরও বলেন, ‘আমরা কেউ ভয়ে এগিয়ে যেতে পারিনি। কারণ, মহিন চকবাজার থানা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী ছিল। তার বিরুদ্ধে মিটফোর্ড হাসপাতালের ফুটপাত ও কেমিকেল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চাঁদা তোলার অভিযোগ রয়েছে। এমনকি হাসপাতালের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী নিয়োগেও মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে সুপারিশ করে চাকরি দেওয়ার কথা অনেকেই জানে।’

চকবাজার থানা যুবদল ও ছাত্রদলের বেশ কয়েকজন নেতা সারাবাংলাকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘মহিন যুবদলের একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী। দলের দুর্দিনে পাশে থাকলেও হত্যাকাণ্ডের মতো ঘটনায় জড়ানোয় হতবাক হয়েছি আমরা। একইসঙ্গে আমরা এ বিষয়টি নিয়ে লজ্জিতও। এ রকম হত্যাকাণ্ড যাতে আর না ঘটে সে ব্যাপারে সকলের এগিয়ে আসা উচিত বলে জানান নেতারা।’

এদিকে শুক্রবার ডিএমপির মিডিয়া বিভাগের উপ কমিশনার (ডিসি মিডিয়া) মো. তালেবুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত ৯ জুলাই রাজধানীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের তিন নম্বর গেটের সামনে পাকা রাস্তার ওপর একদল লোক লাল চাঁদ ওরফে সোহাগ (৩৯) নামে এক ব্যক্তিকে এলোপাতাড়িভাবে আঘাত করে ও কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করে। ঘটনার সংবাদ পাওয়ার পর কোতয়ালি থানা পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে যায় এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরবর্তীতে পুলিশ নিহতের মরদেহ সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে এবং ময়নাতদন্তের জন্য তা হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।’

হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বড় বোন বাদী হয়ে কোতয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

এ ঘটনায় নিহতের বোন মঞ্জুয়ারা বেগম কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় নাম উল্লেখ করে ১৯ জন এবং অজ্ঞাতপরিচয় আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আসামিদের মধ্যে রয়েছেন— ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত মাহমুদুল হাসান মহিন, সারোয়ার হোসেন টিটু, মনির ওরফে ছোট মনির, আলমগীর, মনির ওরফে লম্বা মনির, নান্নু, সজীব, রিয়াদ, টিটন গাজী, রাকিব, সাবা করিম লাকী, কালু ওরফে স্বেচ্ছাসেবক কালু, রজব আলী পিন্টু, মো. সিরাজুল ইসলাম, রবিন, মিজান, অপু দাস, হিম্মত আলী ও আনিসুর রহমান হাওলাদার।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, নিহত সোহাগ এবং হামলায় নেতৃত্ব দেওয়া মহিন ও টিটুসহ অধিকাংশ আসামি ৩০ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তবে তাদের সংগঠনে কোনো আনুষ্ঠানিক পদ ছিল কিনা, তা নিশ্চিত করা যায়নি।

নিহত সোহাগের বোনের মেয়ে (ভাগনী) সাদিয়া আক্তার মীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘মামাকে বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিকেলে বরগুনা সদরে দাফন করা হয়েছে। মামার এক ছেলে (১১), এক মেয়ে (১৪) ও স্ত্রী রয়েছে। তাদের নিয়ে কেরানীগঞ্জে বাসা ভাড়া করে থাকতেন মামা। মামাকে যেভাবে পাথর দিয়ে পিটিয়ে হত্যা করেছে তা এর আগে কেউ দেখেছে কিনা সন্দেহ রয়েছে। আমি এই হত্যার বিচার চাই। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেফতার করে ফাঁসি চাই।’

ডিসি মিডিয়া বলেন, ‘পুলিশ ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে এবং রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আসামি মাহমুদুল হাসান মহিন (৪১) ও তারেক রহমান রবিনকে (২২) গ্রেফতার করে। এ সময় গ্রেফতার আসামি তারেক রহমান রবিনের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল জব্দ করা হয়।’

অন্যদিকে র‌্যাব জানিয়েছে, নির্মমভাবে পাথর দিয়ে আঘাত করে খুনের ঘটনায় আরও দুজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। তবে তাদের নাম জানাতে পারেনি র‌্যাব।

পুলিশ সূত্র জানিয়েছে, গ্রেফতার চার আসামিদের সকলেই বিএনপির অঙ্গ সংগঠন যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মী। মূলত এলাকার আধিপত্য ও চাঁদা চাওয়াকে কেন্দ্র করে এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। আসামিরা নিহত ওই ব্যবসায়ীর কাছে থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চেয়ে না পাওয়ায় পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ডটি ঘটানো হয়েছে বলে পুলিশের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে। হত্যাকাণ্ডে জড়িত অন্যান্যদেরও গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

কোতোয়ালি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়াসীন শিকদার বলেন, ‘চাঁদা দেওয়া নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব চলছিল। সেই বিরোধ থেকেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি। ঘটনার দিন দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শুক্রবার র‌্যাব দুজনকে গ্রেফতার করে থানায় হস্তান্তর করেছে।’

সারাবাংলা/ইউজে/এইচআই

খুন নিহত ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা ভাঙারি ব্যবসায়ী যুবদল নেতা হত্যা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর