Monday 21 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জুলাই গেজেটে নাম লিপিবদ্ধ নিয়ে শঙ্কায় আন্দোলনে আহত শাহপরান

সোহেল রানা, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২১ জুলাই ২০২৫ ১১:৪৫ | আপডেট: ২১ জুলাই ২০২৫ ১৪:২৭

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি আহত রাজমিস্ত্রী শাহপরান। ছবি: সারাবাংলা

ঢাকা: জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আহত হন রাজমিস্ত্রী শাহপরান (২৫)। ছেলের চিকিৎসার খরচ জোগাতে সর্বস্ব শেষ হতে চলেছে মায়ের। এমনকি জুলাই গেজেটেও শাহপরান নাম লিপিবদ্ধ নিয়ে আছেন শঙ্কায়। বুধবার (২০ জুলাই) দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি রাজমিস্ত্রী শাহপরানের সঙ্গে কথা বলতে গেলে এমনটাই জানান তিনি। গত বছর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যাত্রাবাড়ী এলাকায় পুলিশের গুলিতে আহত হন তিনি।

আহত শাহপরান বলেন, তাদের বাড়ি জামালপু জেলার ইসলামপুর উপজেলায়। যাত্রাবাড়ীর শনিরআখড়ায় মৃধাবাড়ি এলাকায় ভাড়া থাকেন। সেখানে থেকে রাজমিস্ত্রীর কাজ করেন। জুলাইয়ে আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে আহত হন। আগস্টে মাসে জুলাই ফাউন্ডেশন থেকে এক লাখ টাকা পাইছিলাম। এরপর আর কোনো টাকাও পাইনি, কেউ খোঁজ খবর নেয় না। এমনকি জুলাই গেজেটে নামও লিপিবদ্ধ হয়নি।

বিজ্ঞাপন

শাহপরান জানান, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন আস্তে আস্তে বড় আকার ধারণ করে। রাজমিস্ত্রীর কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এক পর্যায়ে ঘরেই বসে দিন কাটছিল তার। আন্দোলনে শিক্ষার্থীর সঙ্গে মাঝে মাঝে রাস্তায় নামতানে। তবে ২০ জুলাই সন্ধ্যার দিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে শনিরআখড়া এলাকায় যান। সেখানে পুলিশের গুলিতে কযেকজন মারা যান এবং তার ডান পায়েও গুলি লেগে পায়ের হাড় কয়েক টুকরো হয়ে যায় শাহপরানের।

তিনি বলেন, সে সময় আন্দোলনকারীরা এদিক ওদিক ছুটতে থাকে। চারপাশে শুধু গুলির আওয়াজ। তখন ভেবেছিলাম এটাই আমার শেষ দিন।

শাহপরান আরও বলেন, কয়েক জনের সহায়তায় প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাই। তবে সেখানে পুলিশের ঝামোলা ছিল। এমনকি, চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন পা কেটে ফেলতে হবে। তখন সেখান থেকে শেরে বাংলানগরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হই। সেখানে পায়ের অপরেশন হয়। অপরেশনে চিকিৎসকরা তার পায়ে কয়েক জায়গায় রড লাগিয়ে দেয়। এরপর সেখান থেকে যাত্রাবাড়ীর বাসায় ফিরি। এই বছরের মে মাসে আবার ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হই। পায়ের একটি রড খুলে বাসায় চলে যাই। সর্বশেষ গত ২১ জুন পায়ে ইনফেকশন হলে আবার ঢাকা মেডিকেলে বার্ন ইউনিটে ভর্তি হই।

হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে আহত শাহপরানের মা ছালমা বেগম বলেন, অনেক আগেই আমার স্বামী কবির আলী মারা গেছেন। আমার পাঁচ ছেলে, শাহপরান সবার ছোট। চার ছেলে তাকে ছেড়ে অন্যত্র থাকে। আমার ছোট ছেলে শাহপরান আমাকে দেখভাল করতো। আজ আমার ছেলে কাজ করতে পারে না। অনেক কষ্টে দিন চলছে। ওর চিকিৎসার জন্য কিস্তিতে অনেক টাকা নিয়েছি। সেই টাকা পরিশোধ করতে পারছি না। এক লাখ টাকা অনুদান পেয়েছি। কিন্তু ছেলের চিকিৎসায় এ পর্যন্ত পাঁচ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। আর কুলাতে পারছি না।

এক পর্যায়ে এসব কথা বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন ছালমা বেগম। তিনি বলেন, আমাদের সাহায্য না করলে আর শাহপরানের চিকিৎসা করাতে পারব না।

বার্ন ইউনিটে ভর্তি আরেক শিক্ষার্থী কাজী মেহেদী হাসান (২২)। তিনি জানান, গত ১৯ জুলাই দুপুরে নারায়ণগঞ্জের চাষারা কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার এলাকায় পুলিশের সর্টগানের গুলিতে আহত হন। সেই অবস্থায় আন্দোলনে আসেন যাত্রাবাড়ী এলাকায়। সেখানে ছাত্রলীগের হামলায় ডান পা ভেঙ্গে যায়। এ ছাড়া শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাতও লাগে। সেদিন ভর্তি হন রাজধানীর ধানমন্ডিতে সুপারম্যাক্স নামে একটি হাসপাতালে। পরে সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সিএমএইচ হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে। সেখানে চিকিৎসা শেষে বাসায় চলে যান। এলাকায় তিনি ছাত্রদলে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন এবং মুরাপাড়া সরকারি কলেজে অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মেহেদী।

তিনি আরও বলেন, এ বছরের জুনে মুরাপাড়া এলাকায় মাদক নিয়ন্ত্রণে অভিযানে নামেন। সেখানে ছাত্রলীগের লোকজন আবার তার ওপর হামলা করে দুই পা ভেঙ্গে দেয়। সেদিন আবার ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হন তিনি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন প্রায় তিন হাজার রোগী। আর বর্তমানে ভর্তি আছেন দুইজন। তবে তাদের সবার অবস্থা গুরুতর নয়। তাদের একজনের পায়ে ইনফেকশন হয়েছে। আরেকজনের পা ভাঙ্গা আছে। তাদের চিকিৎসা চলছে। আমাদের হাসপাতাল থেকে সাতজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া মোট ২৫২ জনের মৃত্যুর তথ্য রয়েছে। তাদের মধ্যে ১৬২ জনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয় হয়। বাকি ৮৯ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সারাবাংলা/এসএসআর/ইআ

জুলাই গেজেট বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর