ঢাকা: রাজধানীর উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভেতরে বিমান বাহিনীর যে ফাইটার জেট বিধ্বস্ত হয়েছে সেটি ‘এফ-সেভেন বিজিআই’ মডেলের যুদ্ধবিমান। এই বিমানটি তৈরি করেছে চীনের চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন। এটিকে ‘চেংদু জে-সেভেন’ মডেলের সবচেয়ে আধুনিক সংস্করণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এটি মূলত সোভিয়েত আমলের মিগ-টোয়েন্টি ওয়ানের উন্নত চীনা সংস্করণ।
যুদ্ধবিমান ও বিমানের যন্ত্রাংশের নকশা প্রণয়ন ও উৎপাদানকারী কোম্পানি চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশনের তৈরি এফ-৭ বিজিআই মূলত বহুমুখী অভিযান ও উন্নত প্রশিক্ষণে সক্ষম একটি হালকা যুদ্ধবিমান। বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী বিশেষভাবে এই বিমান তৈরি করে চেংদু এয়ারক্রাফট করপোরেশন।
২০০৮ সাল থেকে ২০২৫ সালের মধ্যে এফ-৭ ফাইটার জেড সিরিজের বিমানগুলো বাংলাদেশসহ ছয়টি দেশে ১৪টি দুর্ঘটার শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়া অন্য যে দেশগুলো দুর্ঘটনাগুলো ঘটেছে সেগুলো হলো- পাকিস্তান, চীন, মিয়ানমার, ইরান ও জিম্বাবুয়ে।
প্রশিক্ষণ ও ইন্টারসেশপনের ভূমিকায় ব্যবহৃত বিমানগুলোর মধ্যে রয়েছে- এফটি-৭, এফ-৭বিজি, এফ-৭এমবি, এফ-৭এম, এফ-৭ বিজিআই।
দেশ অনুযায়ী দুর্ঘটনা
বাংলাদেশ
- চারটি দুর্ঘটনা (২০০৮, ২০১৫, ২০১৮, ২০২৫)।
- ভ্যারিয়েন্ট: এফ-৭, এফ-৭এমবি, এফ-৭বিজি, এফ-৭ বিজিআই।
- হতাহত: ২২ জন (পাইলট ও সাধারণ নাগরিক, বিশেষ করে ২০২৫ সালে স্কুলে দুর্ঘটনায় ২০ জন)
চীন
- চারটি দুর্ঘটনা (২০১০, ২০১১, ২০১২, ২০২২)।
- ভ্যারিয়েন্ট: এফ-৭/জে-৭
- হতাহত: দুই জন পাইলট, একজন সাধারণ নাগরিকের মৃত্যু, আহত চার।
পাকিস্তান
- দুটি দুর্ঘটনা (২০১৫, ২০২০)।
- ভ্যারিয়েন্ট: এফটি-৭পিজি, এফটি-৭
- হতাহত: তিন জন পাইলট।
মিয়ানমার
- দুটি দুর্ঘটনা (২০১৮, ২০২৫)।
- ভ্যারিয়েন্ট: এফ-৭এম
- হতাহত: দুই জন পাইলট, ছয় জন সাধারণ নাগরিক।
ইরান
- একটি দুর্ঘটনা (২০২২)।
- ভ্যারিয়েন্ট: এফটি-৭
- হতাহত: দুই জন পাইলট।
জিম্বাবুয়ে
- একটি দুর্ঘটনা (২০২৫)।
- ভ্যারিয়েন্ট: এফ-৭
- হতাহত: একজন পাইলট।
ভ্যারিয়েন্ট অনুযায়ী দুর্ঘটনা
- এফ-৭/জে-৭: ৫টি (চীন: ৪, জিম্বাবুয়ে: ১)
- এফটি-৭: ৩টি (পাকিস্তান: ২, ইরান: ১)
- এফ-৭এম: ২টি (মিয়ানমার)
- এফ-৭এমবি: ১টি (বাংলাদেশ)
- এফ-৭বিজি: ১টি (বাংলাদেশ)
- এফ-৭ বিজিআই: ১টি (বাংলাদেশ)
দুর্ঘটনার কারণ (এখন পর্যন্ত শনাক্ত)
- ইজেকশন ত্রুটি: ১টি (২০০৮, বাংলাদেশ)
- ইঞ্জিন বিকল: ১টি (২০১০, চীন)
- জ্বালানি ট্যাঙ্কে আগুন: ১টি (২০১৮, বাংলাদেশ)
- কুয়াশা: ১টি (২০১৮, মিয়ানমার)
- প্রশিক্ষণ-সংক্রান্ত: ৩টি (২০১১, ২০২০, ২০২২)
- টেকঅফ ব্যর্থতা: ১টি (২০২৫, জিম্বাবুয়ে)
- অনির্দিষ্ট: ৬টি
হতাহতের পরিসংখ্যান
মোট হতাহত: প্রায় ৩৭ জন (১৫ জন পাইলট, প্রায় ২২ জন-শিক্ষার্থী, শিক্ষক, পাইলট)।
পাইলট: ১৫ জন (প্রতি দুর্ঘটনায় ১-২ জন, ২০১০ সালের চীনের দুর্ঘটনায় পাইলট বেঁচে যান)
সাধারণ নাগরিক: প্রায় ২২ জন (বিশেষ করে ২০২৫ সালে বাংলাদেশে স্কুলে দুর্ঘটনায় ২০ জন, ২০২৫ সালে মিয়ানমারে ৫ জন, ২০২২ সালে চীনে ১ জন, ২০১৮ সালে মিয়ানমারে ১ জন)।
আহত: ৪ জন সাধারণ নাগরিক (২০১২, চীন)
ঝুঁকিপূর্ণ দেশ
বাংলাদেশ এবং চীন প্রত্যেকে চারটি দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।
সবচেয়ে মারাত্মক ঘটনা
২১ জুলাই ২০২৫, বাংলাদেশ (এফ-৭ বিজিআই) স্কুলে বিধ্বস্ত, ২০ জন নিহত (পাইলট, শিক্ষার্থী, শিক্ষক)।
প্রশিক্ষণের ঝুঁকি
কমপক্ষে ৩টি দুর্ঘটনা প্রশিক্ষণের সময় ঘটেছে (২০১১, ২০২০, ২০২২)।
সাধারণ নাগরিকের ক্ষতি
চারটি ঘটনায় সাধারণ নাগরিক হতাহত বা আহত হয়েছেন, ২০২৫ সালে বিশেষ করে মারাত্মক (দুটি দুর্ঘটনায় ২৬ জন নাগরিক নিহত)।
২০২৫ সালে তিনটি দুর্ঘটনা এফ-৭ পরিচালনা বা রক্ষণাবেক্ষণে সম্ভাব্য চলমান সমস্যাকে নির্দেশ করে।