চট্টগ্রাম: উন্নয়ন কাজের নামে সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি নিয়ে ওয়াসা কোনো আইন মানছে না বলে অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন। এ অবস্থায় চট্টগ্রাম ওয়াসার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া উপায় নেই বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
রোববার (২৭ জুলাই) দুপুরে নগরীর টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মেয়র একথা বলেন। ২২ দিনের কানাডা সফর শেষে চট্টগ্রামে ফিরে সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত কয়েকটি বিষয় নিয়ে নিজের অবস্থান তুলে ধরতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মেয়র।
ওয়াসার খোঁড়াখুঁড়ির প্রসঙ্গে সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘হালিশহর এলাকায় সড়কের এই বেহাল অবস্থা কেন? কারণ ওয়াসা কোনো রুলস মানছে না। তারা তাদের মতো করে ঘেরাও দিয়ে সড়ক কাটছে। এতে সড়ক ভাঙছে। ঠিকমতো মেরামত করছে না। আমরা বারবার তাগাদা দিচ্ছি। এখন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া আর কোন উপায় দেখছি না।’
‘আসলে একটি সংস্থার অধীনে পুরো শহরকে পরিচালনা করা না গেলে এসব সমস্যার সমাধান হবে না। পরিকল্পিত শহর গড়তে হলে নগর সরকার প্রয়োজন, যেটির প্রধান হবেন সিটি মেয়র।’
উল্লেখ্য ‘চট্টগ্রাম মহানগরীর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্প’র আওতায় নগরীর হালিশহরে সড়ক কাটছে ওয়াসা। সিটি করপোরেশন বর্ষার সময় চার মাস সড়ক কাটা বন্ধ রাখার জন্য বললেও ওয়াসা সেটা অগ্রাহ্য করেছে।
গত ৯ জুলাই নগরীর হালিশহরের আনন্দিপুর এলাকায় নালায় পড়ে তিন বছরের শিশু নিহতের বিষয়ে মেয়র বলেন, ‘নালাটি ১৪ ইঞ্চির কম। এত ছোট নালায় স্ল্যাব দেওয়ার সুযোগ নেই। এখানে শিশুটির পরিবার, তার মায়ের কর্মস্থলের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। তাদের শিশুটিকে দেখে রাখার দরকার ছিল। শিশুদের দেখাশোনার দায়িত্ব তো পরিবারের। সিটি করপোরেশনের পক্ষে তো প্রতিটি শিশুর পেছনে গার্ড রাখা সম্ভব নয়। এটি অযৌক্তিক। তবে প্রাপ্তবয়স্ক কেউ যদি এভাবে মারা যেত তাহলে সিটি করপোরেশন দায়িত্ব নিত।’
বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহের কাজ বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেয়ার বিষয়ে মেয়র শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘ডাস্টবিন থেকে ময়লা আবর্জানাগারে নিয়ে যাওয়ার জন্য কর নেওয়া হয়। বাসা থেকে ডাস্টবিনে আনার জন্য সিটি করপোরেশন কোনো ট্যাক্স নেয় না। বাসা-বাড়ির লোকজনকে সুনির্দিষ্ট স্থানে ময়লাটা ফেলতে হবে। ডাস্টবিন যখন বাড়ির সামনে দেওয়া হয় তখন সেটি সরিয়ে ফেলতে বলা হয়। পরে তারা খাল-নালায় ময়লা ফেলেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে কাজটি করতে দেওয়া হয়েছে। তারা ৫০ থেকে ৭০ টাকা পর্যন্ত ন্যূনতম ফি নেবেন।’
‘আগেও বাসা-বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহের জন্য টাকা নেওয়া হতো। কোনো নিয়ম ছিল না। এখন নিয়ম করা হয়েছে। যাতে প্রতিষ্ঠানগুলো ফাঁকি দিতে না পারে এবং বেশি টাকা নিতে না পারে।’
বিএনপি নেতাকর্মীদের কাজ পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী যোগ্যতার ভিত্তিতে কাজ দেওয়া হয়েছে। কাজ করতে গেলে আমার অত্যন্ত কাছের কেউ যদি অনিয়ম করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। আমার ছোট ভাই হলেও ছাড় পাবে না। এক টাকাও বেশি নেওয়ার সুযোগ নেই। কেউ যদি বেশি চায়, বিষয়টি আমাদের লিখিত জানালে ব্যবস্থা নেবো।’
কানাডা সফর প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, ‘কানাডার টরন্টো ও মন্ট্রিয়ালে কূটনীতিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি। চট্টগ্রামের উন্নয়ন কার্যক্রম, আধুনিক নগর ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তিনির্ভর সেবা, পরিবেশবান্ধব নগর গড়ে তোলার পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। কানাডার কনকর্ডিয়া ইউনিভার্সিটি ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির মধ্যে যৌথ সহযোগিতার জন্য একটি চুক্তি হয়েছে। এর মাধ্যমে উচ্চশিক্ষা, গবেষণা ও শিক্ষার্থী বিনিময়ের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।’
মেয়র বলেন, ‘চট্টগ্রামের জন্য আন্তর্জাতিক সিটি-টু-সিটি সম্পর্ক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। টরন্টো সিটির সঙ্গে একটি সহযোগিতা চুক্তি (সিস্টার সিটি) স্বাক্ষরের বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এটি বাস্তবায়িত হলে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে এবং নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।’
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন- সিটি করপোরেশনের সচিব মো. আশরাফুল আমিন, প্রধান প্রকৌশলী মো. ফরহাদুল আলম, ম্যালেরিয়া ও মশক নিধন কর্মকর্তা শরফুল ইসলাম মাহি, উপ প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা প্রণব কুমার শর্মা, মেয়রের একান্ত সহকারী মারুফুল হক চৌধুরী ও জিয়াউর রহমান জিয়া।