ঢাকা: লন্ডনের সকাল। শহরের উত্তরে এক নিরিবিলি বাসস্টপে অপেক্ষমাণ একজন মধ্যবয়সী মানুষ। হাতে মোবাইল, পরনে হালকা নীল শার্ট, খাকি রঙের প্যান্ট, আর পায়ে সাধারণ একজোড়া স্নিকার্স। তিনি বসে আছেন জনসাধারণের জন্য নির্ধারিত লাল বেঞ্চে। কিছুক্ষণ পরেই এসে থামে একটি লাল ডাবল-ডেকার বাস। মানুষজনের সঙ্গে সঙ্গে তিনি ওঠে পড়েন সেই বাসে—কোনো নিরাপত্তা রক্ষী, ঝলমলে প্রটোকল বা গাড়ির বহর নেই।
এই মানুষটিই বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত রাজনীতিক, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সাধারণ মানুষের মতো এমন জীবনধারার বিরল দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
১ আগস্ট মধ্যরাতে, বিএনপির অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে এ সম্পর্কিত কয়েকটি ছবি শেয়ার করা হয়েছে। ছবির ক্যাপশনের লেখা হয়েছে “সাধারণ জীবন যাপনে অভ্যস্ত তারেক রহমান। যুক্তরাজ্যে বসবাসকালেও কোনো ভিআইপি সুবিধা গ্রহণ না করে পাবলিক ট্রান্সপোর্টে চলাচল করেন সাধারণ মানুষের মতো।
২০০৮ সালের পর থেকে তারেক রহমান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। চিকিৎসা, মামলা এবং রাজনীতি—এই তিন অক্ষরে আবদ্ধ তারেকের প্রবাস জীবন। তবে রাজনীতি কখনোই তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়নি। ভিডিও বার্তায়, ভার্চুয়াল বৈঠকে, দলের দিকনির্দেশনায় তিনি আজও সক্রিয়। অথচ এ সময়ের সবচেয়ে আলোচিত প্রবাসী রাজনীতিক যখন লন্ডনের রাস্তায় জনসাধারণের সঙ্গে সাধারণ যাত্রায় নিজেকে মিশিয়ে দেন—তা নিঃসন্দেহে রাজনৈতিক ও সামাজিক দৃষ্টিকোণ থেকে তাৎপর্যপূর্ণ।
এই ছবিগুলোর কমেন্টে দেখা যায়, অনেকেই দেখছেন এক ধরনের ‘অ্যান্টি-ভিআইপি’ রাজনীতির বার্তা হিসেবে। যেখানে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে নেতাদের জন্য আলাদা গেট, নিরাপত্তা বলয় ও বিলাসবহুল বাহনই নিয়ম—সেখানে একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা সাধারণ বাসে যাতায়াত করছেন, তা নিঃসন্দেহে এক ভিন্ন বার্তা বহন করে।
ছবিগুলোর নিচে হাজার হাজার মন্তব্যে ভরে গেছে “জনতার নেতা”, “সত্যিকারের সাদা মনের মানুষ”, “এটাই প্রকৃত নেতৃত্বের পরিচয়” এমন সব বাক্যে।
একজন মন্তব্য করেছেন, “যে নেতা নিজের জীবনেও সরলতা ধরে রাখেন, তিনিই প্রকৃত মানুষের প্রতিনিধি হতে পারেন।”
সমালোচনার কন্ঠও থেমে নেই। সব প্রতিক্রিয়া ইতিবাচক নয়। কেউ কেউ একে ‘পাবলিক ইমেজ ম্যানেজমেন্ট’ হিসেবে দেখছেন। রাজনৈতিক দর্শন নয়, বরং সচেতনভাবে নির্মিত এক ‘পাবলিক পারসোনা’ বলে মন্তব্য করছেন অনেকে।
একজন সমালোচক লিখেছেন, “ক্যামেরা ছাড়া কি কখনো তিনি বাসে চড়েন? দলীয় ফেসবুক পেজেই কেন এমন মুহূর্ত শেয়ার করতে হলো?”
এই একটি ছবি এখন বৃহত্তর প্রশ্ন উসকে দিচ্ছে—ভবিষ্যতের বাংলাদেশে রাজনীতি কি ধীরে ধীরে সরলতার দিকে ফিরছে? নাকি এটি শুধুই নির্বাচনী প্রচারণার আগাম প্রস্তুতি?