ঢাকা: ‘জুলাই ঘোষণা’তে আলেম-ওলামাদের আন্দোলন ও অবদানের যথাযথ মূল্যায়ন করা হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামি। ঘোষণাপত্রের বাস্তবায়ন কৌশল অস্পষ্ট এবং সাম্প্রতিক মাদরাসাভিত্তিক আন্দোলনের কথা উপেক্ষিত।
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাজধানীর মগবাজারে আল-ফালাহ মিলনায়তনে আয়োজিত এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জামায়াতের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, “এই ঘোষণায় জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। ঘোষণায় কীভাবে, কখন এসব বাস্তবায়ন হবে, তার কোনো রূপরেখা নেই। এর মাধ্যমে আলেম-ওলামাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন কওমি ও আলিয়া মাদরাসার ছাত্র ও শিক্ষকরা সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু ঘোষণায় তাদের ভূমিকা কোথাও উল্লেখ করা হয়নি। এমনকি ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনার কথাও এখানে উঠে আসেনি, যা ইসলামী ঘরানার রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়।”
ঘোষণাপত্রে উপনিবেশবিরোধী লড়াইয়ের কথা বলা হলেও ১৯৪৭ সালের ভাষা ও অধিকারভিত্তিক আজাদী অনুল্লেখিত রয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জামায়াত মনে করে, এই ঘোষণাপত্র মূলত একটি নির্দিষ্ট শ্রেণির চিন্তা ও দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দিয়েছে, যা জাতীয় ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজন সৃষ্টি করতে পারে।
তাহের অভিযোগ করেন, “জুলাই ঘোষণা দেওয়ার সময় দেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনোরূপ আলোচনা হয়নি, যা দুঃখজনক। আলোচনা হলে এটি আরও গ্রহণযোগ্য ও ঐক্যবদ্ধ হতো।”
তিনি বলেন, “জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এবং জনগণের আন্দোলনের ফসল রক্ষা করতে হলে জাতীয় নির্বাচন অবশ্যই জুলাই সনদের ভিত্তিতে হতে হবে। আমরা মনে করি, জুলাই ঘোষণা ও সনদকে সংবিধানিক স্বীকৃতি দিতে হবে এবং তা সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।”
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত নির্বাচনকালীন সরকার প্রধানের ভাষণের প্রতিক্রিয়া জানিয়ে তাহের বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, নির্বাচন আগামী ফেব্রুয়ারির মধ্যে হবে। আমাদের দলীয় আমির আগেই রমজানের আগেই নির্বাচন চেয়েছেন। আমরা এই ঘোষণা ইতিবাচকভাবে দেখছি।”
প্রতিনিধিত্বমূলক (PR) নির্বাচন ব্যবস্থা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা মনে করি পিআর পদ্ধতি একটি সময়োপযোগী ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাইলফলক। ৫৪ বছর আগের ট্র্যাডিশনাল নির্বাচন পদ্ধতি এখনকার বাস্তবতায় কার্যকর নয়। রাতে ব্যালট বাক্স ভরার সংস্কৃতি আর চলতে পারে না।”
জামায়াত নেতা আরও বলেন, “সংলাপ, ঐক্য এবং রাজনৈতিক সমঝোতা ছাড়া এই সংকট উত্তরণ সম্ভব নয়। আমরা আশাবাদী, অন্তর্বর্তী সরকার এই সুযোগ কাজে লাগাবে এবং এক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করবে।”