ঢাকা: চামড়া সংরক্ষণকারী/ব্যবসায়ীদের চাহিদা অনুযায়ী ঢাকার অদূরে চামড়া সংরক্ষণের জন্য জায়গা বরাদ্দ প্রদান ও প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করা এবং কোরবানির সময় উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণে বিদ্যমান সিইটিপি/ইটিপিগুলোকে উপযোগী করে গড়ে তোলার সুপারিশ করেছে ‘কোরবানি সম্পর্কিত বিষয়াদির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ কমিটি’।
বুধবার (০৬ আগস্ট) সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত কমিটির তৃতীয় সভায় এসব সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দীন-এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান, বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান, শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সুফিয়ানসহ সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে জানানো হয়, গত ঈদুল আজহায় অভ্যন্তরীণ বাজারে বিপুল পরিমাণ কাঁচা চামড়া সংগৃহীত হয়েছিল। সে সময় ৯১ লাখ ৩৬ হাজার ৭৩৪ সংখ্যক পশু কোরবানি হয়েছে। এর মধ্যে মাদরাসা, এতিমখানা, লিল্লাহ বোর্ডিং এবং স্থানীয় ট্যানার্স থেকে ৬০ লাখ ৪৫ হাজার ২২০টি চামড়া সংরক্ষণ হয়েছে। এর মধ্যে মাদরাসা, এতিমখানা ও লিল্লাহ বোডিংয়ে সরক্ষণ হয়েছে ১৭ লাখ ৬১ হাজার ৫১টি চামড়া। সবচেয়ে বেশি সংরক্ষণ হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগে, ১৫ লাখ ৪৮ হাজারটি। এরপর ঢাকায় ১৪ লাখ ৯ হাজার, রাজশাহী ১৩ লাখ ৯০ হাজার চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
বৈঠকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, এ বছর যারা চামড়া সংরক্ষণ করেছেন, তারা পরবর্তীতে ভালো দাম পেয়েছেন। যে কারণে এবার যারা চামড়া সংরক্ষণ করেননি আর যারা করেছেন, তাদের মধ্যে একটা পার্থক্য তৈরি হয়েছে। এবারের মতো আগামী বছরও সরকার চামড়া সংরক্ষণে সহযোগিতা করলে অনেক বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করবে।
বৈঠকে কোরবানির চামড়া ব্যবস্থাপনা বেশকিছু চ্যালেঞ্জ তুলে ধরা হয়। সেগুলো হচ্ছে- কোরবানি পশুর হাট ব্যবস্থাপনা; অনুনমোদিত হাট অপসারণ ও বিক্রিত পশুর হাসিল আদায়ের হার; কোরবানিদাতা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী পর্যায়ে চামড়ার ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতকরণ; এলাকাভিত্তিক পশু কোরবানির জন্য নিদিষ্ট স্থান/অবকাঠামো অনুপস্থিতি; চামড়া সংরক্ষণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের যথাযথ জ্ঞান না থাকা; কোরবানির বর্জ্যের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা; বিদ্যমান ট্যানারিসমূহের সক্ষমতা ও কমপ্ল্যায়েন্স ইস্যু; কোরবানির চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণ বিষয়ক নীতিমালা না থাকা এবং ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ জেলায় কাঁচা চামড়া সংরক্ষণের স্থায়ী অবকাঠামোর অভাব।
এ প্রেক্ষিতে বৈঠকে আগামী ঈদুল আজহা-কে সামনে রেখে কোরবানির পশুর চামড়া ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উল্লেখিত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় আরও ৫ দফা সুপারিশ করা হয়। এগুলো হচ্ছে- কোরবানি পশুর হাট দক্ষভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে স্থানীয় সরকার বিভাগ কর্তৃক কোরবানির পশুর হাট ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন;
কোরবানির বর্জ্য ব্যবস্থাপনা জন্য একটি ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর প্রণয়ন করা এবং সেটি অনুসরণের জন্য সব সিটি কপোরেশন, পৌরসভা ও অন্যান্য স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা প্রদান;
কোরবানি পশুর চামড়া সংগ্রহ, সংরক্ষণ, পরিবহন ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রতিষ্ঠানিক সক্ষমতা তৈরি করা;
জেলা অনুযায়ী স্থায়ী ও মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ী ও পশু জবাইকারীদের (কসাই) একটি ডাটাবেজ তৈরি করা এবং তাদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ; এবং
গবাদি পশুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ এবং অন্যান্য যে কোন রোগবালাই দমনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়-কে অনুরোধ জানানো।