ইবি: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে সিসিটিভি ফুটেজ নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডায়না চত্বর এলাকায় ঘটনার আগেরদিন (১৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৫টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত সময়ের ভিডিও ফুটেজ ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি পায়নি বলে দাবি করলেও, আইসিটি সেল বলছে—সব ফুটেজই সংরক্ষিত আছে, কোথাও কোনো ডেটা লস হয়নি।
ঘটনার এই পরস্পরবিরোধী দাবিকে কেন্দ্র করে ক্যাম্পাসে উত্তেজনা বাড়ছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিষয়টি নতুন করে ‘রহস্যজনক মোড়’ নিচ্ছে, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এর প্রতিবাদে সন্ধ্যায় প্রশাসন ভবনের সামনে মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।
তারা ফুটেজ সংক্রান্ত বিভ্রান্তির দ্রুত সুরাহা দাবি করে বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ সংক্রান্ত বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা না এলে আইসিটি সেল ঘেরাও কর্মসূচিতে যাবেন।
ঘটনার তদন্তে গঠিত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন জানান, “আইসিটি সেল নিয়ন্ত্রিত ডায়না চত্বর থেকে সাদ্দাম হলমুখী সিসিটিভি ফুটেজ ১৬ জুলাই বিকেল ৫ টার পর থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত তারা দিতে পারেনি। কিন্তু একই সময়ের অন্যান্য জায়গার ফুটেজ আমরা পেয়েছি। বিষয়টি আইসিটি সেলকে অবগত করলেও তারা কোনো ধরনের সাড়া দেয়নি। তাই আমরা ধরে নিয়েছি তাদের কাছে এই সময়ের ফুটেজ নেই এবং সে অনুযায়ী আমরা প্রতিবেদনে উল্লেখ করে দিয়েছি।”
অন্যদিকে, আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহজাহান আলী দাবি করেন, “সব ধরনের ফুটেজ আমাদের কাছে রয়েছে। হয়তো ফাইল কপি করার সময় কিছু ভুল হয়েছে—এটি নিছক যান্ত্রিক ত্রুটি। ঘটনার আগ-পরে কোনো ফুটেজ গায়েব হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগের দিনই আমি ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটির একজন সদস্যকে জানিয়েছিলাম যে ফুটেজ রয়েছে। তিনি কমিটির আহ্বায়ককে বিষয়টি জানিয়েছিল বলে আমাকে নিশ্চিত করেছেন। কিন্তু তারা আর পরে ফুটেজ চায়নি। তারা জরুরি মনে করলে ১০ মিনিটের জন্য এসে আইসিটি সেল থেকে ফুটেজ নিয়ে যেতে পারতেন। হয়তো তারা এর আগেই প্রতিবেদন রেডি করে ফেলেছিল।”
তবে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আগেরদিন আইসিটি সেল থেকে ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটিকে সকল ফুটেজ আছে বলে জানানোর বিষয়টি অস্বীকার করেছেন কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন। তিনি বলেন, প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পরদিন (৪ আগস্ট) ভিসি অফিসে দুপুরের পরে আইসিটি সেলের পরিচালক সকল ফুটেজ আছে বলে জানিয়েছিল।
এদিকে সাজিদের ভিসেরা রিপোর্টে শ্বাসরোধে হত্যা প্রমাণিত হওয়ার পর থেকেই ক্যাম্পাস উত্তাল। শিক্ষার্থীরা দাবি করছেন, “ফুটেজ গায়েব হওয়া মানেই বিষয়টি আড়াল করার চেষ্টা চলছে। এতে প্রশাসনের ভূমিকা সন্দেহজনক।”
তারা অভিযোগ করেন, “ফুটেজ লোপাটের পেছনে প্রভাবশালী কোনো গোষ্ঠীর ইন্ধন রয়েছে। প্রশাসন তাদের চাপে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে পারছে না।”
উল্লেখ্য, ৩ আগস্ট ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে উচ্চতর তদন্তের সুপারিশ করে একটি প্রতিবেদন জমা দেয়। তবে বিতর্কিত সময়সীমার ফুটেজ বিশ্লেষণ না করেই প্রতিবেদন জমা দেওয়ায় এর গ্রহণযোগ্যতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা।