Monday 11 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড
ক্যামেরা ঘুরিয়ে গুলি করা পুলিশদেরও লাইভে দেখানো হয়

রাশেদ মামুন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
৭ আগস্ট ২০২৫ ০০:০৬

শহিদ আবু সাঈদ। ফাইল ছবি

ঢাকা: একেএম মঈনুল হক। পেশায় সাংবাদিক। থাকেন রংপুরে। খবরের খোঁজে গিয়ে এখন পর্যন্ত হয়েছেন নানান ঘটনার সাক্ষী। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহিদ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শীও তিনি। পেশাগত দায়িত্বপালনের সময় মর্মান্তিক সেই দৃশ্য উঠে আসে তার সহকর্মীর ক্যামেরায়। আজ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সেদিনের মর্মান্তিক ঘটনার আদ্যোপান্ত তুলে ধরেন এই সাক্ষী।

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় সাক্ষ্য দেন সাংবাদিক মঈনুল। এদিন দুপুর ২টা ২০ মিনিটে সাক্ষীর ডায়াসে ওঠেন তিনি। তবে কিছুটা শারীরিক অসুস্থ থাকায় অনুমতি নিয়ে বসেই দেন নিজের জবানবন্দি। শুরুতেই তুলে ধরেন পরিচয়। এর পর আবু সাঈদ হত্যার আগে-পরের ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

জবানবন্দিতে মঈনুল বলেন, ‘২০২৪ সালের ১৬ জুলাই দুপুর ২টার আগ থেকে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে পার্কের মোড় এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলাম আমি ও আমার সহকর্মী ভিডিও জার্নালিস্ট আসাদুজ্জামান আরমান। ওই সময় রংপুর প্রেসক্লাব এলাকা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেন ব্যানারে এদিকে একটি মিছিল নিয়ে আসে। মিছিলটি আসতেই আগে থেকে উপস্থিত পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ ও সরকারি দলের সমর্থকরা বাধা দেয়। পুলিশের আশপাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দেখতে পাই। আন্দোলনকারীরা গেটের সামনে একটি সমাবেশের চেষ্টা করেন। দুয়েকজন কথা বলারও চেষ্টা করেন। পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে যেতে চান।’

‘ওই সময় তাদের বাধা দেয় পুলিশ ও তাদের সঙ্গে থাকা ছাত্রলীগ-যুবলীগসহ অন্যরা। এক পর্যায়ে আন্দোলনকারীদের ওপর লাঠিচার্জ শুরু করে পুলিশ। আন্দোলনকারীরা আত্মরক্ষার্থে স্লোগান দিয়ে জমায়েত ধরে রাখার চেষ্টা করেন। কিন্তু পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ, রাবার বুলেট ও শটগানের গুলিবর্ষণ শুরু করে। তখন দুপুর ২টা পার হয়ে গেছে। এনটিভির দুপুর ২টার খবরও শুরু হয়ে গেছে।’

এই সাক্ষী বলেন, ‘আমরা টিয়ারশেল, গুলিবর্ষণসহ সেখানকার ভীতিকর অবস্থার ভিডিও ফুটেজ সরাসরি এনটিভিতে পাঠানো শুরু করি। সেই ফুটেজ দেখে আমাকে লাইভে সম্পৃক্ত হওয়ার নির্দেশ দেন এনটিভি কর্তৃপক্ষ। দুপুর আনুমানিক ২টা ১৩ মিনিটে আমি লাইভে যুক্ত হই। সেখানকার সামগ্রিক পরিস্থিতি এনটিভির মাধ্যমে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরি।’

তিনি বলেন, ‘২টা ১৭ মিনিটের দিকে ১ নম্বর গেটের সামনে রোড ডিভাইডারের একটি ছোট কাটা অংশ দিয়ে কালো টি-শার্ট ও কালো প্যান্ট পরা একজন যুবক এসে দাঁড়িয়ে পড়ে। এ সময় তিনি দুদিকে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ান। সেখান থেকে মাত্র কয়েক হাত দূরত্বে গেটের সামনে অবস্থানরত পুলিশ (যারা আগে থেকে গুলি করছিলেন) ওই যুবককে উদ্দেশ্য করে গুলি করে। এই দৃশ্য তখন আমাদের এনটিভিতে লাইভ সম্প্রচার চলছিল। পুলিশের গুলি এই যুবকের সামনের দিকে অর্থাৎ বুক ও পেটে লাগে।’

জবানবন্দিতে মঈনুল আরও বলেন, ‘গুলিবিদ্ধ হওয়ার পর ওই যুবক কয়েক পা পিছিয়ে যান এবং বসে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে আবার দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তিনি দেহের ভারসাম্য রাখতে না পেরে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। এ সময় কয়েকজন সহযোগী তাকে তুলে নিয়ে পার্কের মোড়ের দিকে নিয়ে যান। তবে এনটিভির লাইভে তাকে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য যতক্ষণ পর্যন্ত ক্যামেরায় আসছিল ততক্ষণ পর্যন্ত সম্প্রচার করা হয়।’

‘এছাড়া ক্যামেরা ঘুরিয়ে গেটের সামনে থেকে গুলি করা পুলিশদেরও লাইভে দেখানো হয়। আর ওই মুহূর্তে ঘটনাটি একমাত্র লাইভ সম্প্রচার করে এনটিভি। এর পর আমরা অন্য সহকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পারে গুলিবিদ্ধ ওই যুবককে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে তার নাম-পরিচয়ও (আবু সাঈদ, ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী) জানতে পারি। বিকেল সাড়ে ৩টায় আমরা জানতে পারি রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গুলিবিদ্ধ আবু সাঈদ মারা যান।’ এ সময় আবু সাঈদ হত্যার ভিডিও ফুটেজটি ট্রাইব্যুনালে প্রদর্শন করা হয়। একইসঙ্গে নথিভুক্ত করা হয়।

এনটিভির এই সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট বলেন, “ভিডিও ফুটেজের একটি কপি পিবিআই নিয়েছে। মূল ভিডিও বা ‘র’ ফুটেজ আমি নিয়ে এসেছি আজ। লাইভ সম্প্রচারের একটি কপি বন্ধু-বান্ধবের মাধ্যমে সংগ্রহ করে নিয়ে এসেছি। সেই ফুটেজ দুটি একটি পেনড্রাইভে রয়েছে।”

প্রায় ৫০ মিনিটের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে সাংবাদিক মঈনুল হককে জেরা করেন শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। জেরায় সাক্ষীর উদ্দেশ্যে এই আইনজীবী বলেন, ‘এ ঘটনাটি যখন ঘটে তখন আপনি গুলির দৃশ্য ও আসামির দৃশ্য একসময়ে একসঙ্গে ভিডিও করতে পারনেন না।’ তবে আদালত বলেন, ‘এ প্রশ্ন যুক্তিতর্কের সময় বলবেন, এখন নয়।’ পরে তিনি বলেন, ‘আবু সাঈদ হত্যার ভিডিও ফুটেজটি এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা প্রযুক্তি) দিয়ে তৈরি করা হয়েছে।’ জবাবে মঈনুল হক বলেন, ‘এটি সত্য নয়।’ অর্থাৎ ‘ইহা সত্য নয় যে, আমার দাখিলকৃত ভিডিও দুটি এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা প্রযুক্তি) ব্যবহার করে তৈরি করা।’

ট্রাইব্যুনালে আজ বেলা ১১টার পর থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত সাক্ষ্যগ্রহণ চলে। তবে মাঝে কিছুক্ষণ বিরতি দেওয়া হয়। সাংবাদিক মঈনুল হক ছাড়াও চতুর্থ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষার্থী রিনা মুরমু। তিনিও আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডের আগে-পরের ঘটনার বিবরণ দিয়ে শেখ হাসিনাসহ সেই সংশ্লিষ্টদের দায়ী করেন। এ মামলায় এখন পর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন পাঁচজন। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণ হবে আগামী ১৭ আগস্ট।

সারাবাংলা/আরএম/পিটিএম

আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ড ক্যামেরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পুলিশ লাইভ

বিজ্ঞাপন

ঢাকার বাতাসে স্বস্তি
১১ আগস্ট ২০২৫ ০৯:৪১

আরো

সম্পর্কিত খবর