ঢাকা: সড়ক পরিবহণে শৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ২০৩১ সাল পর্যন্ত তিন ধাপে স্বল্পমেয়াদি, মধ্যমেয়াদি ও দীর্ঘমেয়াদি রূপরেখার আওতায় ১৮টি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশন।
রোববার (১০ আগস্ট) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘সড়ক পরিবহণ ব্যবস্থাপনা সংস্কারে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের রূপরেখা: সরকারের কাছে প্রত্যাশা’ শীর্ষক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রস্তাব দেয় সংস্থাটি।
ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. জাহাঙ্গীর বলেন, বাংলাদেশে দীর্ঘ ৫৪ বছরেও টেকসই পরিবহণ কৌশল বাস্তবায়ন না করার কারণে সড়ক পরিবহণ খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠিত হয়নি। গড়ে ওঠেনি নিরাপদ জনবান্ধব গণপরিবহণ ব্যবস্থা। দেশে জনসংখ্যার উচ্চ ঘনত্ব, অপরিকল্পিত নগরায়ন, দুর্বল ও অপ্রতুল সড়ক অবকাঠামো, সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি এবং সড়ক ব্যবহারকারীদের অসচেতনতার কারণে দেশে সড়ক দুর্ঘটনার হার উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রতিদিনের সড়ক দুর্ঘটনায় বহু মানুষ নিহত হচ্ছেন, অসংখ্য মানুষ গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু হচ্ছেন। এই বিপুল প্রাণহানি কেবল পরিসংখ্যান নয়, এটি হাজারো পরিবারের দুর্ভোগ, সামাজিক মর্মবেদনা এবং দেশে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির প্রতিচ্ছবি।
তিনি বলেন, দেশের সড়ক পরিবহণ খাতে চরম অব্যবস্থাপনা ও নৈরাজ্য সত্ত্বেও ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনা সংস্কারে কোনো কমিশন গঠন করেনি। বর্তমানে সড়ক পরিবহন ব্যবস্থা পূর্বের ধারাবাহিকতায় একেবারে ভেঙ্গে পড়েছে। এই প্রেক্ষাপটে আমরা মনে করি, অন্তর্বর্তী সরকার এখনও যদি সড়ক ব্যবস্থাপনা সংস্কার কমিশন গঠনের মাধ্যমে কিছু সুপারিশ বাস্তবায়ন করে বাকিটা পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের জন্য রেখে যায়, তাহলেও পরিস্থিতি উন্নতির একটি সুযোগ থাকবে।
সড়ক ব্যবস্থাপনা সংস্কারে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের রূপরেখা হলো-
স্বল্পমেয়াদি রূপরেখা (২০২৫-২০২৭): জাতীয় সড়ক নিরাপত্তা কাউন্সিল (এনআরএসসি) পুনর্গঠনের প্রস্তাব। বিআরটিএ, বিআরটিসি এবং ডিটিসিএ না তে শীর্ষ পদে টেকনিক্যাল বিশেষজ্ঞদের নিয়োগের প্রস্তাব। বিআরটিএ, বিআরটিসি এবং ডিটিসিএ এর ব্যবস্থাপনা ও কাঠামোগত সংস্কারের প্রস্তাব। ড্রাইভিং লাইসেন্স পরীক্ষার প্রশ্ন সড়ক-সম্পর্কিত করার প্রস্তাব। যানবাহনের আয়ুষ্কাল ও ডাম্পিং নীতিমালা তৈরির প্রস্তাব। সড়ক নিরাপত্তা আইন প্রণয়নের প্রস্তাব। শহরের ট্রাফিক ও পার্কিং ব্যবস্থাপনা উন্নয়নের প্রস্তাব। জাতীয় বাজেটে অর্থনৈতিক কোড-সহ সড়ক ব্যবহারকারীদের শিক্ষা-সচেতনতা কার্যক্রমের জন্য আলাদা বরাদ্দের প্রস্তাব। সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য গঠিত ট্রাস্ট ফান্ডে প্রতি বছর ৭০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব। সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণের প্রস্তাব।
মধ্যমেয়াদি রূপরেখা (২০২৫-২০২৯): আধুনিক নিরাপত্তা প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধিকরণের প্রস্তাব। সড়ক থেকে দ্রুত মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহন প্রত্যাহারের প্রস্তাব। রাজধানীর গণপরিবহনে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য রুট রেশনালাইজেশনের মাধ্যমে কোম্পানীভিত্তিক আধুনিক বাস। রাজধানীর স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব বাস সার্ভিস বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব। মোটরসাইকেলের গতি নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবস্থাপনার প্রস্তাব।
দীর্ঘমেয়াদি রূপরেখা (২০২৫-২০৩১): রাজধানীতে বহুতল বিশিষ্ট হাইড্রোলিক পার্কিং স্টেশন তৈরি করা। ছোট যানবাহনের নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তার প্রস্তাব। সড়কে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা এবং দুর্ঘটনারোধে সড়ক, রেল ও নৌ-পরিবহন একত্রিত করে অভিন্ন যোগাযোগ মন্ত্রণালয় গঠনের প্রস্তাব।
প্রস্তাবগুলো সরকার নেবে কিনা- প্রশ্নের জবাবে রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, সরকার যদি সংস্কার না করে সড়ক ব্যবস্থাপনা, তাহলে সড়কের এই অবস্থার জন্য এই সরকারও দায়ী থাকবে। গবেষণা ও পর্যবেক্ষণের ভিত্তিতে প্রণীত রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের এই রূপরেখা বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারের। একই সাথে আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে সড়ক পরিবহন খাত সংস্কারের জন্য একটি সংস্কার কমিশন গঠনের অনুরোধ জানাচ্ছি। যার ভিত্তিতে দেশে নিরাপদ, জনবান্ধব যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।