চট্টগ্রাম ব্যুরো: ছাত্ররাজনীতি নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে ট্রমা তৈরি হয়েছে মন্তব্য করেছে ইসলামী ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেছেন, শিক্ষার্থীরা হলে ছাত্ররাজনীতি চায় না, তাদের সেন্টিমেন্টকে আমরা সম্মান করি।
রোববার (১০ আগস্ট) দুপুরে নগরীর পাঁচলাইশে একটি কমিউনিটি সেন্টারে এসএসসি-দাখিল ও সমমানের পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পাওয়া পরীক্ষার্থীদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের তিনি একথা বলেন। ইসলামী ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তর এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
আওয়ামী লীগ আমলে ছাত্র রাজনীতিকে কলুষিত করা হয়েছে মন্তব্য করে জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত ফ্যাসিস্ট আমলে ছাত্ররাজনীতির নামে একধরনের গোলামির তন্ত্র কায়েম করা হয়েছিল। গেস্টরুম, গণরুমের নামে টর্চার সেল তৈরি করা হয়েছিল। জোর করে শিক্ষার্থীদের তাদের নিজেদের কর্মসূচিতে নেওয়া হতো। এ কারণে ছাত্ররাজনীতি নিয়ে এক ধরনের ট্রমা শিক্ষার্থীদের মধ্যে তৈরি হয়েছে। জুলাই আন্দোলনে যে নয় দফা ছিল সেখানে লেজুড়বৃত্তি ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের প্রসঙ্গও এসেছিল।’
ছাত্রশিবির পরিচালিত এক জরিপের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘পাঁচ আগস্টের (২০২৪) পর ইসলামী ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে আমরা একটা ইন্টারনাল সার্ভে করেছিলাম। সেখানে উঠে এসেছে, ৮০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী আসলে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চায় না। এর পর ছাত্ররাজনীতিকে আস্তে আস্তে স্বাভাবিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য খুব কঠিন ছিল। ক্যাম্পাসে শিবিরের সেবামূলক কার্যক্রম, ছাত্র কল্যাণমূলক কার্যক্রম, শিক্ষার্থীদের অ্যাকাডেমিক এবং ক্যারিয়ার ওরিয়েন্টেড কার্যক্রম, ক্যারিয়ার গাইড লাইনমূলক কার্যক্রম- এসব কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা আস্থার জায়গা তৈরি হয়েছে।’
‘কিন্তু দুর্ভাগ্য হচ্ছে, কিছু কিছু ছাত্র সংগঠন আবার আগের মতো ফ্যাসিবাদি ধারার, আধিপত্যবাদী মানসিকতার রাজনীতির চর্চা শুরু করেছে। এটা আসার কারণে আবার সেই ভীতিটা সবার মাঝে কাজ করছে, একটা ট্রমা কাজ করছে। সবার কাছে অনুরোধ, আমরা এমন কিছু করব না, যেটা আমাদের ছাত্ররাজনীতিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হলগুলোতে পলিটিক্স চাচ্ছে না উল্লেখ করে শিবির সভাপতি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বক্তব্য হচ্ছে, হল পলিটিক্সের মধ্য দিয়েই মূলত ওই যে কাজগুলো, সেগুলো চালানো হতো। এজন্য শিক্ষার্থীরা চায়, তারা ক্যাম্পাসে রাজনীতি করবে, কিন্তু হলে রাজনীতি করবে না। আমরা শিক্ষার্থীদের যে দাবি, যে সেন্টিমেন্ট- এটার প্রতি সম্মান রাখি। যেহেতু মেজরিটি চাচ্ছে না, এজন্য ছাত্রশিবির এখন পর্যন্ত হল কমিটি দেয়নি এবং হলে আগের ধারার যে রাজনীতি সেটা শুরু করেনি, শিবির শুধুমাত্র হলে সেবামূলক কার্যক্রম চালু রেখেছে।’
ছাত্রদলের সম্প্রতি ঘোষিত হল কমিটি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রাপ্ত তথ্যমতে, এর মধ্যে ৫৪ জন ছাত্রলীগের বিভিন্ন কমিটিতে ছিল। এগুলো তো মানুষ অবজার্ভ করছে। জাজমেন্ট তো এখন সবাই করতে পারে।’
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ ছিলেন আগ্রাসনবাদী আধিপত্যবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। তিনি সহপাঠীদের নামাজের দিকে আহ্বান করতেন, প্রতিবাদ করতেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে। সে কারণেই তার সহপাঠীরাই তাকে সাপের মতো পিটিয়ে হত্যা করেছে। যারা তাকে হত্যা করেছে, তারাও নিশ্চয়ই সমান মেধাবী ছিল, কিন্তু তাদের মধ্যে একটি জিনিসের অভাব ছিল— তা হলো মানবতা। তাই আমাদের আগে মানুষ হতে হবে।’
ছাত্রশিবির চট্টগ্রাম মহানগর উত্তরের সভাপতি তানজীর হোসেন জুয়েলের সভাপতিত্বে জামায়াত নেতা আবু নাসের, একে এম ফজলুল হক, শামসুজ্জামান হেলালী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. তানভীর মো. হায়দার আরিফ, ছাত্রশিবিরের কেন্দ্রীয় নেতা আলাউদ্দীন আবির এতে বক্তব্য দেন।