ঢাকা: জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে রাজধানীর চানখারপুলে ছয়জনকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে প্রথম দিনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) দিন ধার্য করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
সোমবার (১১ আগস্ট) ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এ মামলার সূচনা বক্তব্য উপস্থাপনসহ সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। বাকি সদস্যরা হলেন— বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এদিন সকাল ১১টা ৪০ মিনিটে এজলাসে ওঠেন তিন বিচারপতির প্যানেল। এরপর সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। দুপুর সোয়া ১২টার দিকে প্রথম সাক্ষী হিসেবে ডায়াসে ওঠেন আনাসের বাবা সাহরিয়ার খান পলাশ। শপথ পড়ানোর পর তিনি গত বছরের ৫ আগস্ট ঘটে যাওয়া পুরো ঘটনা বর্ণনা করেন। একইসঙ্গে তার ছেলে আনাসসহ জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অন্য সব নিহত-আহতদের জন্য দায়ীদের ফাঁসি চান।
পলাশের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে কিছু সময় বিরতি দেন ট্রাইব্যুনাল। পরবর্তীতে দুপুর ২টা ৪২ মিনিটে জেরা শুরু হয়। এর মধ্যে আরশাদের পক্ষে জেরা করেন আইনজীবী সাদ্দাম হোসেন অভি। সুজন ও নাসিরুলের পক্ষে জেরা করেন আইনজীবী আবুল হোসেন ও ইমাজ হোসেন ইমনের পক্ষে আইনজীবী মো. জিয়াউর রশিদ জেরা করেন। সবশেষ পলাতক চার আসামির পক্ষে সাক্ষী পলাশকে জেরা করেন রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী কুতুবউদ্দিন।
এদিন সকালে কারাগার থেকে চার আসামিকে প্রিজনভ্যানে ট্রাইব্যুনালে হাজির করে পুলিশ। তারা হলেন— শাহবাগ থানার সাবেক ওসি (অপারেশন) মো. আরশেদ হোসেন, কনস্টেবল মো. সুজন মিয়া, মো. ইমাজ হোসেন ইমন ও মো. নাসিরুল ইসলাম।
এর আগে, ১৪ জুলাই এ মামলায় পলাতক চার আসামিসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ওই দিন আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। চার্জ গঠন শেষে এ মামলার সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য যথাক্রমে ১০-১১ আগস্ট দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল।
গত ৩ জুলাই চানখারপুলের মামলাটির অভিযোগ গঠন নিয়ে দ্বিতীয় দিনের শুনানি শেষ হয়। সেদিন আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী সিফাত মাহমুদ শুভ। প্রসিকিউশনের পক্ষে ছিলেন প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এমএইচ তামিম।
এ ছাড়া পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পরও ট্রাইব্যুনালে হাজির হননি সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ চারজন। বাকিরা হলেন— ডিএমপির সাবেক যুগ্ম কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী, রমনা অঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার শাহ আলম মো. আখতারুল ইসলাম ও রমনা অঞ্চলের সাবেক সহকারী কমিশনার মোহাম্মদ ইমরুল।
গত ২৯ জুন আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ হয়। তবে অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন শুনানির জন্য সময় চান আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
গত ৩ জুন পলাতক চার পুলিশ কর্মকর্তাকে হাজির করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। ২৫ মে এ মামলায় আট পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। ওই দিন পলাতক চার পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করেন ট্রাইব্যুনাল।
উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট চানখারপুল এলাকায় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে গুলি চালায় পুলিশ। এতে বহু হতাহতের ঘটনার পাশাপাশি শাহরিয়ার খান আনাস, শেখ মাহদী হাসান জুনায়েদ, মো. ইয়াকুব, মো. রাকিব হাওলাদার, মো. ইসমামুল হক ও মানিক মিয়া শাহরিক নিহত হন।