রাজবাড়ী: রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির নবম শ্রেণির ছাত্র রাহুল শেখ (১৫) মাত্র চার দিনে একটি বিমান তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছে। তার তৈরি বিমানটি সফলভাবে আকাশে উড়েছে, যা এখন গ্রামজুড়ে আলোচনায়। ক্ষুদে এই বিজ্ঞানীর বাড়িতে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ ভিড় করছেন তার তৈরি বিমানটি দেখতে।
রাহুল শেখ রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার বারমল্লিকা গ্রামের কৃষক শামসুল শেখের ছেলে। তিনি স্থানীয় রামদিয়া বেনীমাধব বিপিনচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র।
রাহুল শেখ বলেন, ‘ছোটবেলা থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল বিমান বানিয়ে আকাশে ওড়ানো। সেই স্বপ্ন পূরণের জন্য আমি কাজ শুরু করি। বিমানের যন্ত্রাংশের খরচ জোগাতে আমি কৃষিকাজ করে টাকা জমিয়েছি এবং পরিবারের কাছ থেকেও সাহায্য নিয়েছি। অনলাইনে একটি রিমোট, কয়েকটি মোটর ও একটি ব্যাটারি অর্ডার করি। এই কাজ করতে গিয়ে আমাকে পরিবারের নানা রকম চাপ ও কথা শুনতে হয়েছে। প্রথমে যে বিমানটি বানিয়েছিলাম, ওজনের কারণে সেটি ওড়াতে পারিনি, তখন অনেকেই আমাকে নিয়ে অনেক কথা বলেছিল। তবে হাল না ছেড়ে আমি বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার ‘অচিন পাখি’ মডেলের আরেকটি বিমান তৈরি করি এবং এবার সফলভাবে সেটি ওড়াতে সক্ষম হই।’
তিনি জানান, বিমানটি তৈরি করতে তার ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইউটিউবে ভিডিও দেখে দিনরাত কাজ করে মাত্র চার দিনে এটি তৈরি করেছেন তিনি। বিমানটি প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও উচ্চতায় উড়তে সক্ষম এবং রিমোটের সাহায্যে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
রাহুল বলেন, ‘সরকারি সহায়তা পেলে এটিকে আরও বড় পরিসরে তৈরি করতে পারব। সরকার যদি সুযোগ দেয়, তবে বড় কোনো আবিষ্কার করতে চাই। এ ছাড়াও, কৃষকদের জন্য একটি ড্রোন বানাতে আগ্রহী আমি, যা ওপর থেকে কীটনাশক ছিটাতে পারবে এবং কৃষকদের খরচ অনেক কমিয়ে দেবে।’
স্থানীয় ইব্রাহীম শেখ জানায়, রাহুলের যতটা না লেখাপড়ায় মনোযোগ তার চেয়ে বেশি মনোযোগ যন্ত্রাংশ নিয়ে। সুযোগ পেলে ঘরের ভেতর বিভিন্ন ডিভাইস ও যন্ত্রাংশ তৈরি করতে বসে যেতো। যার কারণে প্রায় বকা খেতো বাবা-মায়ের। তবে এবার ইউটিউব দেখে বিমান তৈরি করেছে। সেই বিমানটি আকাশে ওড়ে।’
রাহুলের মা আলেয়া বেগম বলেন, ‘আমার ছেলে কৃষি কাজ করে এবং আমাদের থেকে টাকা নিয়ে বিভিন্ন কিছু অনলাইন থেকে কিনে দিন-রাত পরিশ্রম করে বিমানটি তৈরি করেছে। প্রথমে ওর বাবা রাগারাগি করেছিল। কিন্তু বিমানটি যখন উড়েছে তখন আমাদের মনটা ভরে গেছে। প্রতিদিনই এটি দেখতে অনেক লোকজন বাড়িতে আসছে। আমার খুব ভালো লাগছে। আমার ছেলে ভবিষ্যতে আরও বড় কিছু আবিষ্কার করবে এই দোয়া করি।‘
রাহুলের বাবা শামসুল শেখ বলেন, ‘পাঁচ ছেলে-মেয়ের মধ্যে রাহুল সবার ছোট। ক্লাস নাইনে পড়াশোনা করে সে। আমি কৃষি কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করি। বিভিন্ন সময় ওকে কাজের জন্য মাঠে ডাকলেও সেখানে না গিয়ে এসব বানাতে থাকে। ও শুধু বিমানই নয়, ফ্যান-লাইটসহ অনেক কিছু বানিয়েছে। এসব জিনিস তৈরির প্রতি ওর ঝোঁক বেশি।‘
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুহা. আলিমুদ্দিন শেখ বলেন, ‘আমার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র রাহুল একটি বিমান তৈরি করেছে। সে অনলাইন থেকে রিমোট, কয়েকটি মোটর ও একটি ব্যাটারি কিনে বাকিটা নিজেই তৈরি করেছে। সে অনলাইন এবং ইউটিউব থেকে তথ্য সংগ্রহ করে এটি তৈরি করে। প্রথমে যেটি বানিয়েছিল সেটি ওড়াতে না পারলেও পরেরটি ওড়াতে সক্ষম হয়েছে। স্কুলপর্যায়ে বিজ্ঞান মেলায় আমাদের শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় এসকল সৃজনশীল কাজে উদ্বৃত্ত করি। স্কুল থেকে সার্বিক সহযোগিতা করি।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থী হিসেবে রাহুল যে মেধাবী তার পারফরমেন্স আমরা পাই না। কিন্তু সৃজনশীল কাজের প্রতি তার একটি আলাদা আগ্রহ রয়েছে। এটা আমরা অনেকদিন ধরে লক্ষ্য করেছি। আমরা তাকে বলেছি সৃজনশীল কাজের পাশাপাশি তোমার পড়ালেখার প্রতি আরও মনোযোগ হওয়া দরকার। সে বলেছে আমি লেখাপড়ার দিকে মনোযোগী হবো। পরবর্তীতে সে কিছু তৈরি করতে চাইলে আমরা তাকে সহযোগিতা করব।’