ঢাকা: জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অংশ নেওয়া সম্মুখ সারির যোদ্ধা শহিদ ইকরামুল ইসলাম সাজিদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। গুলিবিদ্ধ হয়ে দীর্ঘদিন আইসিইউতে থাকার পর গতবছর এ দিনে তিনি পরলোক গমন করেন।
সাজিদের জন্ম ১৯৯৯ সালের ১ মার্চ। তিনি ঢাকার বিএএফ শাহীন কলেজ থেকে ২০১৬ সালে এসএসসি, ২০১৮ সালে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। পরে ভর্তি হন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে।
শুরু থেকেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন তিনি। এ আন্দোলন শুরু হওয়ার পর প্রতিটি কর্মসূচিতে তিনি সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছেন। ৪ আগস্ট ঢাকার অবস্থা যখন উত্তাল, সেদিন বাসা থেকে বের হয়েছিলেন তিনি। পরবর্তীতে সন্ধ্যা দিকে তার বন্ধুরা পরিবারেকে জানায় সাজিদ গুলিবিদ্ধ হয়ে সিএমএইচে আছেন। পরিবারের লোকজন সেখানে গিয়ে দেখতে পান, তিনি অজ্ঞান অবস্থায় আছেন। ১০ দিনের চিকিৎসাধীন থাকার পর ১৪ আগস্ট দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
সাজিদের সঙ্গে দীর্ঘদিন একসঙ্গে চলা বন্ধু স্মৃতিচারণ করে রায়হানুর রহমান সাবা বলেন, ‘‘আমি আজীবন শুরু থেকেই ইকরামুল থেকে ইকরা বলেই ডাকি, আর ইকরা আমাকে মোডা বলে ডাকত। অনেক শেখার মাঝে একটা জিনিস আমি এখন ফলো করার ট্রাই করি ওর থেকে। আমি অসুস্থ থাকাকালীন সময়ে ইকরা নিজ থেকেই প্রায়ই কয়দিন পর পর খোঁজ নিত। একটা কথা পার্টিকুলার ভাবে বলত , ‘কিরে, কেমন আছোস? প্যারা খাইস না মামা। ঠিক হয়ে যাবে। কিছু লাগলে জানাইস আমায়।”
তিনি আরও বলেন, ‘‘এই জিনিসটা কেন জানি আমাকে ইন্সপায়ার করে। এখন আমি বড়, ছোট, সেইম বয়সই যে কেউ, যদি বিপদে থাকে বা আমার মনে হয় কোনো সমস্যায় আসে। আমি টাই করি নিজ থেকে খোঁজ নেওয়ার যতটুক সম্ভব হয়। আর নিজের থেকেই ইকরার এই কথাটা বের হয়ে আসে ‘কিছু লাগলে জানায়েন/জানিয়ো/জানাইস।’’
সাজিদের বোন ফারজানা হক বলেন, ‘অনেক স্মৃতি রয়েছে ওকে মনে করার। তবে আমার সঙ্গে ওর একটা স্মৃতি সবচেয়ে বেশি মনে পড়ে। সেটা হচ্ছে আমরা প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে কিছু না কিছু গল্প করতাম। প্রতিদিন রাতেই আমরা ভাই-বোন গল্প হত, একে অপরের খোঁজখবর নিতাম। এই ব্যাপারগুলো আসলে খুব মিস করি। কারণ এখন তো আর গল্প করার কেউ নাই।’
সাজিদের প্রতিবাদী ও সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে ফারাজানা বলেন, ‘সর্বদা অন্যায়ের প্রতিবাদ করত সে। আর এরই ফলে অনেকের চোখে খারাপও হয়ে যায়। যেটা ওর কাছে মনে হয়েছে এমনটা হতে পারে না, উচিত না, অন্যায়। সেটা ও সহ্য করত না। স্বাভাবিক জ্ঞানের আদর্শ ছেলে ছিল আমাদের আমার ভাই। নম্র ও ভদ্র, মানুষের উপকার করতে পারলেই যেন ও শান্তি পেত। এমনও হয়েছে যে বাসে বই বিক্রি হচ্ছে, ওর লাগবে না কিন্তু ওই মানুষটাকে সহযোগিতার জন্য বইটা কিনেছে।’
সাজিদের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে দোয়ার আয়োজন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদ কমিটি। এ ছাড়া কোরআন খতম ও দোয়ার আয়োজন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রশিবিরের এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের পক্ষে অসহায়দের মাঝে খাবার বিতরণ করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল নেতা শাহরিয়ার।