নির্বাচন যদি বৈধ বা আইনসম্মত না হয়, তাহলে তার কোনো অর্থ থাকে না বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, একটি গ্রহণযোগ্য, স্বচ্ছ এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করাই তার প্রধান দায়িত্ব বলে জানিয়েছেন তিনি। সিঙ্গাপুরভিত্তিক আন্তর্জাতিক সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়া (সিএনএ)-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এ মন্তব্য করেন ড. ইউনূস।
বুধবার (১৩ আগস্ট) প্রকাশিত সাক্ষাৎকারে সিএনএ জানিয়েছে, বাংলাদেশের তত্ত্বাবধায়ক সরকার আগামী ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে ব্যাপক সংস্কারের করছে। গত বছরের আগস্টে সরকার পতনের পর এটি হবে দেশের প্রথম নির্বাচন।
ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘নির্বাচন যদি বৈধ না হয়, তাহলে সেই নির্বাচন করার কোনো মানে হয় না। আমার কাজ হলো একটি গ্রহণযোগ্য, পরিচ্ছন্ন, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করা।’
তিনি আরও জানান, সংস্কারের ক্ষেত্রে অনেক কাজ করতে হয়েছে, কারণ বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থা দীর্ঘদিন ধরে কারচুপি ও অপব্যবহারের শিকার হয়েছে।
ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত আশ্রয়ের বিষয়েও মন্তব্য করে ড. ইউনূস জানান, বাংলাদেশ তাকে ফেরত চাইলেও ভারত এ অনুরোধে সাড়া দেয়নি। ফলে ঢাকা-দিল্লি সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। হাসিনা অনলাইনে তার সমর্থকদের অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিহত করার আহ্বান জানানোর পর, বাংলাদেশ সরকার ভারতকে এই ‘মিথ্যা ও বানোয়াট’ প্রচারণা বন্ধ করার অনুরোধ জানায়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আলোচনার প্রসঙ্গ টেনে ড. ইউনূস বলেন, ‘তিনি (মোদি) জানিয়েছেন, সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আমরা তাকে জানিয়েছি, হাসিনাকে ভারত থেকে ফেরাতে কোনো সংঘাতে জড়াবো না। তিনি থাকতে চাইলে রাখতে পারেন, তবে আমাদের দেশে তার বিচার চলবে।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনাকে বাংলাদেশের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির সুযোগ দেওয়া উচিত নয়, কারণ দেশে এখনও তার অনেক সমর্থক আছে যারা আগের মতোই পরিস্থিতি অশান্ত করার চেষ্টা করবে।
সাক্ষাৎকারে আঞ্চলিক কূটনৈতিক অবস্থান নিয়েও কথা বলেন ড. ইউনূস। সিএনএ জানায়, শেখ হাসিনার আমলে ভারত ও বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ কৌশলগত ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক থাকলেও নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে আঞ্চলিক জোটগুলোতে পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। গত মার্চে ড. ইউনূস বেইজিং সফর করে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশের ভূ-কৌশলগত অবস্থানকে দক্ষিণ এশিয়ায় চীনের প্রবেশদ্বার হিসেবে উল্লেখ করেন।
নিজ সরকারের নীতি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিকভাবে পরিচালিত সিদ্ধান্তে বিশ্বাসী এবং বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী যে কারও সঙ্গে কাজ করতে প্রস্তুত। পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক আছে, ভারতের সঙ্গেও রাখতে চাই।’
ব্যবসার ক্ষেত্রে সমান সুযোগ দেওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এটি চীনের জন্য বিশেষ কিছু নয়; ভারতসহ যাদের আগ্রহ আছে, তারা এ সুযোগ নিতে পারে। ব্যবসায় এটি ন্যায্য প্রতিযোগিতা।’