ঢাকা: রোহিঙ্গা শরণার্থী সমস্যার আশু ও দীর্ঘমেয়াদি সমাধান চায় বাংলাদেশ। তারা যাতে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে- সে ব্যবস্থা নিতে হবে।
রোববার (১৭ আগস্ট) রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিদেশি কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সহযোগীদের উদ্দেশ্যে এক ব্রিফিংয়ে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান এ কথা বলেন।
উল্লেখ্য,বাংলাদেশে রোহিঙ্গা ঢলের ৮ বছর পূর্তির দিনে আগামী আগামী ২৫ আগস্ট কক্সবাজারে ‘অংশীজন সংলাপ: রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে উচ্চপর্যায়ের সম্মেলনে আলোচনার জন্য প্রাপ্ত বার্তা’ শীর্ষক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন। অনুষ্ঠেয় ওই সম্মেলনের বিষয়ে বিদেশি কূটনীতিকদের অবহিত করার লক্ষ্যে এ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়।
ব্রিফিংয়ে ঢাকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, রাশিয়া, চীন, সিঙ্গাপুর তুরস্ক, দক্ষিণ কোরিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, কাতার, সৌদি আরবসহ মোট ৫০টিরও বেশি মিশনের কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন।
ড. খলিলুর রহমান জানান, বাংলাদেশের উদ্যোগে আয়োজিত এ আন্তর্জাতিক সম্মেলনে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত ১০৬টি দেশের সম্মতি পাওয়া গেছে। সম্মেলনে কয়েকটি দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রোহিঙ্গাবিষয়ক আন্তর্জাতিক দূত, বিদেশে বাংলাদেশের মিশন, জাতিসংঘ সংস্থা এবং শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা প্রতিনিধি ও বিদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নেতারা অংশ নেবেন।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা বিষয়টি আন্তর্জাতিক এজেন্ডা থেকে খসে পড়ছে। এভাবে আন্তর্জাতিক সমথর্ন নিয়ে আর কতোদিন চলবে। তাদের তো বাড়ি ফিরতে হবে। কক্সবাজারের সম্মেলনটি রোহিঙ্গাদের জন্য এবং বিশ্ব সম্প্রদায়ের আশু সমাধানের পথ নির্দেশিকা দেওয়ার সুযোগ। সম্মেলনে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর সামনে রোহিঙ্গাদের আশা ও আকাঙ্ক্ষাগুলো তুলে ধরা হবে। আগামীতে জাতিসংঘে রোহিঙ্গা বিষয়ক সম্মেলনের বড় উপাদান হবে কক্সবাজার সম্মেলনে রোহিঙ্গাদের বক্তব্যগুলো।
ড. খলিলুর রহমান জানান, তিন দিনের এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন চলবে ২৪ থেকে ২৬ আগস্ট। সম্মেলনে আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও শরণার্থী শিবির প্রদর্শনীর পাশাপাশি পাঁচটি কর্মঅধিবেশন থাকবে। এসব অধিবেশনের প্রতিপাদ্য বিষয়গুলো হচ্ছে- রোহিঙ্গাদের জন্য মানবিক সহায়তা বাড়ানো, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মাঝে আশার সঞ্চার, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে সংঘটিত গণহত্যার জবাবদিহি নিশ্চিত করা এবং রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধান খোঁজা।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবির – (ফাইল ছবি : সংগৃহীত)
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চলতি আগস্ট থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত রোহিঙ্গা ইস্যুতে চারটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। জাতিসংঘ, কাতার ও বাংলাদেশের উদ্যোগে এসব সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। ২৫ আগস্ট কক্সবাজারের আন্তর্জাতিক সম্মেলনের পর ৩০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ফাঁকে নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিত হবে রোহিঙ্গা বিষয়ক আরেকটি উচ্চ পর্যায়ের সম্মেলন। আর কাতারের দোহায় ৬ ডিসেম্বর আয়োজিত হবে তৃতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমার সেনাদের হত্যাযজ্ঞ ও নির্যাতনের মুখে লাখ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। সেই থেকে টানা আট বছর ধরে দেশে ১৪ লাখেরও বেশি বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা বসবাস করছেন। বৈশ্বিক নানা ঘটনা এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ অস্থিরতায় সংকটটি আন্তর্জাতিক মনোযোগ হারিয়েছে, কমেছে মানবিক সহায়তাও। এই প্রেক্ষাপটেই নতুন করে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।