Sunday 17 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ট্রাইব্যুনালে ভিডিও প্রদর্শন
‘বাবা ওঠো’, কবরের সামনে শহিদ সজলের ছোট্ট মেয়ে

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১৭ আগস্ট ২০২৫ ১৯:১৬ | আপডেট: ১৭ আগস্ট ২০২৫ ২১:৩০

শহিদ সজলের কবর

ঢাকা: টানাপোড়েনের সংসার। তবু ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন সাজ্জাদ হোসেন সজল। স্বপ্নপূরণে লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরিও নেন ফুডশপে। কিন্তু চব্বিশের ৫ আগস্ট তাকে ‘জীবন্ত’ পুড়িয়ে দেয় পুলিশ। অঙ্গার হয়ে যায় গোটা দেহ। তবে জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শহিদ হলেও ছোট্ট মেয়ের কাছে যেন এখনও জীবিত রয়েছেন সজল। প্রায় প্রতিদিনই কবরের সামনে গিয়ে এখনও বাবাকে ডাকাডাকি করে দুই বছরের এই শিশু। আর বলে ‘বাবা ওঠো, বাবা ওঠো’।

হৃদয়বিদারক এমনই একটি ভিডিও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ প্রদর্শন করতেই চোখের পানি টলমল করতে থাকে সবার। কারও কারও চোখ বেয়ে পানিও পড়েছে। এমনকি দীর্ঘশ্বাস নিতে দেখা যায় এ ঘটনার জন্য দায়ী করা অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে।

বিজ্ঞাপন

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য ছিল রোববার (১৭ আগস্ট)। এদিন বেলা ১১টার পর থেকেই শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। মামলার ৯ নম্বর সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন সজলের মা শাহীনা বেগম। তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন দুই সদস্যের বিচারিক প্যানেল।

শাহীনার সাক্ষ্য শুরু হয় বিকেল পৌনে ৩টা থেকে। নিজের ছেলের বর্ণনা দিতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। জবানবন্দিতে শাহীনা বলেন, ‘আমার ছেলে রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি পড়ছিল। পাশাপাশি ফুড কোম্পানির একটি শপে চাকরি করতো। ছাত্র অবস্থায় বিয়ে করেছিল আমার ছেলেটি। বর্তমানে তার দুই বছরের একটি ফুটফুটে মেয়ে রয়েছে।’

কান্নাকণ্ঠে তিনি আরও বলেন, ‘জন্মের পর বাবা বলে ডাকতে পারেনি সজলের মেয়েটি। কারণ তখন আমার নাতনি আরও ছোট ছিল। এখন কবরের সামনে গিয়ে লোকজনদের বলে ‘আমার বাবা এখানে শুয়ে আছে। বাবা ঘুমাচ্ছে। আর বাবা ওঠো বলে ডাকাডাকি করে।’ এসব দেখে তাকে বোঝানোর মতো কোনো ভাষা খুঁজে পাই না।’

শাহীনা বলেন, ‘আমার একটাই ছেলে। কিন্তু পুলিশ আমার ছেলেকে বাঁচতে দেয়নি। তারা পুড়িয়ে মেরেছে। কিন্তু তখনও ছেলেটি বেঁচে ছিল। কেননা তার পোড়া হাতের পাশেই নিজের মোবাইলটি ছিল। ফোনে হয়তো কাউকে কিছু জানানোর চেষ্টা করেছিল। এসব কথা বলেই হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন এই সাক্ষী। আর তার কান্নায় নীরবতা নেমে আসে ট্রাইব্যুনালের এজলাসে। বিচারপতি-প্রসিকিউটর কিংবা আসামিপক্ষের আইনজীবীদের চোখের কোণেও ছিল জল। আসাসির কাঠগড়ায় থাকা মামলার অন্যতম আসামি সাবেক আইজিপি মামুনও সাক্ষীর কান্না দেখে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছেন। যদিও বর্তমানে তিনি এ মামলার রাজসাক্ষী হিসেবে রয়েছেন।

এদিন মোট চারজন সাক্ষী নিজেদের জবানবন্দি দেন ট্রাইব্যুনালে। এখন পর্যন্ত এ মামলায় ৯ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ রেকর্ড করেছেন আদালত। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সোমবার (১৮ আগস্ট) দিন ঠিক করা হয়েছে।

সারাবাংলা/আরএম/এসআর

ট্রাইব্যুনাল ভিডিও প্রদর্শন শহিদ সজল