পঞ্চগড়: ‘ক্রীড়াই শক্তি, ক্রীড়াই বল, মাদক ছেড়ে খেলতে চল’— এই স্লোগান সামনে রেখে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলায় কোমলমতি একদল শিশু হাতে তুলে নিয়েছে এক অভিনব আয়োজন। তাদের নিজেদের উদ্যোগেই অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ফুটসাল ফুটবল টুর্নামেন্ট। যার মূল আকর্ষণ— চ্যাম্পিয়ন দলের জন্য পুরস্কার একটি দেশি মুরগি!
উত্তরের সীমান্তবর্তী এ উপজেলার শিশুরা প্রমাণ করে দিয়েছে ইচ্ছাশক্তি আর উদ্যোগ থাকলে স্বপ্নকে বাস্তবতায় রূপ দেওয়া সম্ভব। এলাকার মিনি স্টেডিয়াম, যা সাধারণত পরিত্যক্তই পড়ে থাকে, সেই মাঠেই এবার শিশুরা ফুটবল নিয়ে নেমে পড়েছে।
টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে মোট আটটি অনূর্ধ্ব-১৩ দল। নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করে তারা ঠিক করেছে এন্ট্রি ফি প্রতি দলের জন্য ২৫০ টাকা। মাঠ পরিষ্কার, রেফারি ও অন্যান্য খরচের ব্যবস্থাও নিজেরাই করেছে। কিন্তু ছিল না সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিসটি একটি ফুটবল!
সেই বাধা কাটাতে তারা চলে যায় তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আফরোজ শাহীন খসরুর দফতরে। তাদের সরলতা ও ইচ্ছার গল্প শুনে ইউএনও নিজ হাতে তাদের একটি ফুটবল উপহার দেন। পাশাপাশি, খেলা দেখার আমন্ত্রণও গ্রহণ করেন।
আয়োজক শিশুরা জানায়, বিজয়ী দল পাবে একটি দেশি মুরগি, একটি চ্যাম্পিয়ন ট্রফি এবং মেডেল। রানার্সআপ দল পাবে ট্রফি ও মেডেল। তাদের ভাষায়, ‘আমাদের কাছে মুরগিটাই বড় পুরস্কার। কারণ, এটা আমাদের নিজস্ব ভাবনা, আমাদের অর্জন।’

তেঁতুলিয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছ থেকে ফুটবল উপহার নিচ্ছে শিশুরা। ছবি: সংগৃহীত
আদিল হোসেন নামে এক খুদে আয়োজক বলে, ‘আমরা সবাই মিলে ফুটবল টুর্নামেন্ট আয়োজন করছি। পুরস্কার হিসেবে একটি মুরগি রাখার সিদ্ধান্ত নিই। আমাদের কাছে এটা শুধু খেলা না, এটা আমাদের উৎসব।’
আরেকজন আয়োজক আদিব বলেন, ‘আমাদের কাছে বল ছিল না। ইউএনও স্যারকে বললে তিনি আমাদের একটি বল দিলেন। তিনি খেলা দেখতে আসবেন বলেও আমাদের কথা দিয়েছেন।’
তেঁতুলিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, ‘শিশুরা আমার কাছে এসে ফুটবল চায়। তাদের চোখে-মুখে যে স্বপ্ন আর আগ্রহ দেখেছি, তা সত্যিই অভাবনীয়। আমি তাদের পাশে থাকতে পেরে আনন্দিত। তারা আমাকে খেলা দেখতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে।’
এই আয়োজন যেন কেবল একটি টুর্নামেন্ট নয়- এ এক অনুপ্রেরণার গল্প। যেখানে শিশুদের স্বপ্ন, স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তা, আর একটি ছোট্ট মুরগির পুরস্কার হয়ে উঠেছে সামাজিক পরিবর্তনের প্রতীক। তারা দেখিয়ে দিয়েছে, একটি ফুটবল ও কিছু সদিচ্ছা থাকলেই অনেক কিছুই সম্ভব।
এ ধরনের উদ্যোগ শুধু খেলাধুলা নয়, শিশুদের মধ্যে নেতৃত্ব, দায়িত্ববোধ ও সাংগঠনিক দক্ষতা তৈরি করতেও সহায়ক। ‘মুরগি কাপ’ হয়তো নামেই মজার। কিন্তু, এর পেছনে লুকিয়ে আছে শিশুদের এক সাহসী ও সুন্দর প্রয়াস— যা দেশব্যাপী অনুকরণীয় হতে পারে।