Sunday 24 Aug 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
পুরান দাবিই পূরণ হয়নি, নতুন দাবি নিয়ে মাঠে শিক্ষার্থীরা!

আবু সুফিয়ান সরকার শুভ, জবি করেসপন্ডেন্ট
২৪ আগস্ট ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ২৪ আগস্ট ২০২৫ ১০:৪৯

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ফাইল ছবি

ঢাকা: পুরান ঢাকার বুড়িগঙ্গার তীর ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে দেশের প্রাচীনতম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)। দেড়শ’ বছরের বেশি বয়সী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করে প্রায় ২০ বছর আগে। গেল ২০ বছরে বিভিন্ন দাবিতে বেশ কয়েকটি আন্দোলন-সংগ্রাম হলেও গতবছর জুলাই গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে পরিস্থিতির আরেকটু পরিবর্তন হয়েছে।

গতবছর থেকে একের পর এক আন্দোলনে থমথমে পরিবেশ বিরাজ করছে রাজধানীর অন্যতম এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে। কখনো সম্পূরক বৃত্তি, কখনো কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (জকসু), আবার কখনো দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ নিয়ে শিক্ষার্থীরা নিয়মিত আন্দোলনে নামছেন। তবে বছরের পর বছর আন্দোলন চললেও মিলছে না কোনো স্থায়ী সমাধান।

বিজ্ঞাপন

জবির যত আন্দোলন

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস ঘেঁটে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই দাবি-দাওয়াকে ঘিরে আন্দোলন হয়েছে। পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে শিক্ষার্থী-শিক্ষক আন্দোলন, ২০০৯ সালে আবাসনের দাবিতে আন্দোলন, এরপর ২০১৪ ও ২০১৬ সালে বড় দু’টি হল আন্দোলন ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

২০০৯ সালের ২৭ জানুয়ারি হাজারো শিক্ষার্থী ‘হল চাই, হল চাই’ স্লোগানে পুরান ঢাকা প্রকম্পিত করে। এদিন পুলিশের টিয়ার গ্যাস ও রাবার বুলেট হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। দীর্ঘ ২৯ দিনব্যাপী আন্দোলনে পুরো পুরান ঢাকা অচল হয়ে পড়ে। তবে দাবি বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়েই প্রশাসন পরিস্থিতি সামাল দেয়।

আবাসিক হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। ছবি: সংগৃহীত

আবাসিক হলের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। ছবি: সংগৃহীত

২০১৪ সালে সম্মিলিত হল আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শিক্ষকরাও যোগ দেন। সেসময় পুলিশের গুলিতে ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক নাসির উদ্দিন আহমেদসহ অনেকে আহত হন। পরবর্তী সময়ে হল উদ্ধারে কমিটি হলেও কার্যত কোনো কাজ হয়নি।

২০১৬ সালের আগস্টে আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করলে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নে ২০০ একর জমিতে নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের ঘোষণা দেন। তবে আট বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও কাজ আটকে আছে জমি অধিগ্রহণ ও অনিয়মে। সেখানে এখন পর্যন্ত সীমানাপ্রাচীর সম্পন্ন হয়নি, খনন করা লেক ভেঙে পড়েছে, আর বরাদ্দ অর্থের সঠিক ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে।

নতুন দাবি নিয়ে মাঠে শিক্ষার্থীরা

জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীরা ফের আন্দোলনে নামে। এবার তাদের প্রধান দাবি ছিল সেনাবাহিনীর কাছে অবকাঠামো নির্মাণের দায়িত্ব দেওয়া। ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর শিক্ষার্থীরা সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে ‘সব শালারা বাটপার, আর্মি হবে ঠিকাদার’- স্লোগানে প্রকম্পিত করে। এর পর ২০২৫ সালের ১৪ মে শিক্ষার্থী-শিক্ষকরা ‘লং মার্চ টু যমুনা’ কর্মসূচি পালন করেন। তাদের দাবিগুলো ছিল—

  • ৭০ শতাংশ আবাসন ভাতা (সম্পূরক বৃত্তি)
  • জাতীয় বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধি
  • দ্বিতীয় ক্যাম্পাস প্রকল্পে জবিকে অগ্রাধিকার দেওয়া

তবে এসব দাবি এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। এর মধ্যেই ফের নতুন দাবি নিয়ে মাঠে নেমেছেন শিক্ষার্থীরা। এবারের ইস্যু জকসু নির্বাচন ও সম্পূরক বৃত্তি।

জবি ক্যাম্পাস নির্মাণসহ ৫ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। ছবি: সারাবাংলা

জবি ক্যাম্পাস নির্মাণসহ ৫ দফা দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন। ছবি: সারাবাংলা

যা বলছেন ছাত্রনেতারা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক মাসুদ রানা সারাবাংলাকে বলেন, ‘বৃত্তির টাকা শিক্ষার্থীদের ন্যায্য অধিকার, এটা দয়া নয়। আর জকসু নির্বাচন শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার। অথচ প্রশাসন নীতিমালার নামে শুধু টালবাহানা করছে।’

বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস) জবি শাখার আহ্বায়ক ফয়সাল মুরাদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘যমুনা আন্দোলনের পরেও সম্পূরক বৃত্তি দেওয়া হয়নি। সারাদেশে যখন ছাত্রসংসদ নির্বাচনের ডাক উঠছে, তখন আমাদের জকসুর নীতিমালাই অনুমোদন হয়নি।’

বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ জবি শাখার সভাপতি একে এম রাকিব সারাবাংলাকে বলেন, ‘রোববারের (২৪ আগস্ট) মধ্যে জরুরি সিন্ডিকেটে জকসু নীতিমালা পাস না হলে আমাদের দেওয়া কর্মসূচি চলমান থাকবে।’

যা বলছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. রেজাউল করিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে জকসুর খসড়া নীতিমালা চূড়ান্ত করেছি। এ সপ্তাহেই সিন্ডিকেট সভায় তা পাস হবে। পরে ইউজিসি হয়ে মন্ত্রণালয়ে যাবে।’ সম্পূরক বৃত্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইউজিসির সঙ্গে মিটিং হয়েছে। আশা করি শিগগিরই এটি বাস্তবায়িত হবে।’

উল্লেখ্য, এরই মধ্যে দুই দফা দাবি সম্পূরক বৃত্তি প্রদান এবং জকসু নির্বাচনের নীতিমালা অনুমোদন বাস্তবায়নের জন্য শিক্ষার্থীরা শহিদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচি, দেওয়াল লিখন এবং সংবাদ সম্মেলন করেছে। এবার তারা ঘোষণা দিয়েছে, রোববার দুপুর ১২টার মধ্যে নীতিমালা পাস না হলে ‘ব্রেক দ্যা সাইলেন্স’ কর্মসূচি শুরু করবে।

সারাবাংলা/পিটিএম

আন্দোলন জকসু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় সম্পূরক বৃত্তি