নীলফামারী: নীলফামারীর ডোমার উপজেলা এক সময়কার গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসা ও যোগাযোগ কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত হলেও আজও যাত্রীসেবার জন্য একটি স্থায়ী বাস টার্মিনাল নির্মাণ হয়নি। সরকারি খাস জমি বরাদ্দ থাকলেও রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ও প্রভাবশালী মহলের স্বার্থ জড়িত থাকায় উদ্যোগটি বছরের পর বছর ঝুলে আছে।
ফলে প্রতিদিন দুর্ভোগে পড়ছেন সাধারণ যাত্রী, পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা। বর্ষার মৌসুমে এ ভোগান্তি যেন দ্বিগুণ হয়ে ওঠে। অস্থায়ী টার্মিনাল খানাখন্দ, কর্দমাক্ত অবস্থা ও জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকে। সড়কের ধারে দাঁড়িয়ে কিংবা কাদায় ভিজে বাসে উঠতে হয় যাত্রীদের। দুর্ঘটনার ঝুঁকিও লেগে থাকে সবসময়।
প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, প্রায় তিন দশক আগে ডোমারে বাস টার্মিনালের জন্য সরকারি চারটি দাগে ১.১৩ একর জমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) পরবর্তীতে সেখানে একটি স্থায়ী ভবনও নির্মাণ করে। কিন্তু রাজনৈতিক টানাপড়েন ও স্বার্থের দ্বন্দ্বে ভবনটি আজও ব্যবহারযোগ্য হয়নি। দীর্ঘদিন অব্যবহৃত থেকে সংস্কারের অভাবে ভবনটি এখন ধ্বংসের মুখে।
এদিকে বরাদ্দকৃত জায়গা দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালী মহল। বাধ্য হয়ে পরিবহন শ্রমিক ও মালিকরা ভাড়া জায়গায় অস্থায়ী টার্মিনাল চালাচ্ছেন। এতে পৌর এলাকা ও প্রধান সড়কে তৈরি হচ্ছে তীব্র যানজট, একই সঙ্গে যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে চরম দুর্ভোগ।
ডোমার উপজেলা শ্রমিক ইউনিয়নের এক নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমাদের দীর্ঘদিনের দাবি একটি স্থায়ী বাস টার্মিনাল। জমি থাকলেও রাজনৈতিক কোন্দলের কারণে কাজ হচ্ছে না। এতে শ্রমিক থেকে শুরু করে যাত্রী—সবারই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।’
ভোগান্তির বিষয়ে এক যাত্রী বলেন, ‘প্রতিদিন কাদা-মাটিতে ভিজে আমাদের বাসে উঠতে হয়। বৃষ্টির দিনে তো অবস্থা আরও ভয়াবহ হয়ে ওঠে। অথচ সরকারি জমি ও বরাদ্দ থাকলেও কেন টার্মিনাল হয়নি, তা আমাদের বোধগম্য নয়।’
ডোমার পৌর প্রশাসক শায়লা সাঈদ তন্বী বলেন, ‘আইন শৃঙ্খলার মিটিংয়ে ইতঃপূর্বে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। বাস টার্মিনালের জন্য জায়গা বরাদ্দ রয়েছে। পরিবহন মালিকদের পূর্ব নির্ধারিত স্থানে ফিরিয়ে আনতে আলোচনা চলছে।’
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ডোমারে একটি স্থায়ী বাস টার্মিনাল নির্মাণ হলে যানজট অনেকটাই কমবে। পাশাপাশি যাত্রীদের জন্য তৈরি হবে আরামদায়ক ও নিরাপদ পরিবেশ। পরিবহন শ্রমিকরাও তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের সুযোগ পাবেন। তবে, তিন দশকের অপেক্ষার প্রহর শেষ করে ডোমারের মানুষ কবে একটি স্থায়ী টার্মিনাল পাবেন—এ প্রশ্ন এখনো স্থানীয়দের মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।