ঢাকা: কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এখন আর শুধু খরচ কমানোর প্রযুক্তি নয়, বরং আয় ও প্রবৃদ্ধির অন্যতম কৌশলগত হাতিয়ার। এআই প্রতিষ্ঠান সেলসফোর্সের নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, এশিয়া প্যাসিফিক (এপিএসি) অঞ্চলের ৭৫ শতাংশ প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) মনে করেন, এআই এজেন্ট তাদের প্রতিষ্ঠানের আয় প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়াতে সক্ষম হবে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গবেষণায় উঠে এসেছে, পাঁচ বছর আগে যেখানে ৬৩ শতাংশ সিএফও এআই নিয়ে রক্ষণশীল ছিলেন, সেখানে আজ মাত্র ৩ শতাংশ এমন অবস্থানে রয়েছেন। এখন তারা বাজেটের প্রায় এক-চতুর্থাংশ এআই এজেন্ট বা ডিজিটাল শ্রমে বিনিয়োগ করছেন। ৬০ শতাংশ সিএফও স্বীকার করেছেন, প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এই বিনিয়োগ অপরিহার্য।
গবেষণার তথ্য বলছে, সিএফওদের প্রযুক্তিতে রিটার্ন অব ইনভেস্টমেন্ট (আরওআই) নিয়ে মূলধারার ভাবনা বদলানোই এই পরিবর্তনের কারণ। এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্ধেক সিএফও মনে করেন, এআই এজেন্ট বিনিয়োগের আরওআই মূল্যায়নের ধরন বদলে দিয়েছে। এখন প্রযুক্তিতে বিনিয়োগ কেবল স্বল্পমেয়াদি ফলাফলের জন্য নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়িক সমৃদ্ধির অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সেলসফোর্সের প্রেসিডেন্ট ও সিএফও রবিন ওয়াশিংটন বলেন, ‘ডিজিটাল শ্রম শুধু প্রযুক্তিগত অগ্রগতি নয়, বরং সিএফওদের ভূমিকা পুনর্নির্ধারণ করছে। আমরা এখন আর কেবল আর্থিক তত্ত্বাবধায়ক নই, ব্যবসার মূল্য সৃষ্টিকারী।’
তিনি আরও বলেন, ‘এআই এজেন্টের মাধ্যমে আমরা কেবল ব্যবসার মডেল পরিবর্তন করছি না; আমরা সিএফও-দের পুরো কাজের ক্ষেত্রই নতুনভাবে তৈরি করছি। এর জন্য একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি প্রয়োজন, যেখানে আমরা কেবল আর্থিক দায়িত্ব পালনকারী নই, ব্যবসার মূল্য সৃষ্টিকারী হিসেবেও ভূমিকা রাখতে চাই।’
সেলসফোর্সের গবেষণা বলছে, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সিএফওরা এখন দ্রুত রক্ষণশীলতা ছেড়ে আগ্রাসী এআই নীতির দিকে ঝুঁকছেন। পাঁচ বছর আগে যেখানে ৬৩ শতাংশ সিএফও এআই নিয়ে রক্ষণশীল ছিলেন, দুই বছর আগে সেই সংখ্যা নেমে আসে ৩৩ শতাংশে। বর্তমানে রক্ষণশীল সিএফওর হার দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩ শতাংশে। এখন এই অঞ্চলের সিএফওরা তাদের এআই বাজেটের এক-চতুর্থাংশের মতো ব্যয় করছেন এআই এজেন্টে। গবেষণায় উঠে এসেছে, গড়ে ২৩ শতাংশ বাজেট খরচ হচ্ছে এআই এজেন্ট বা ডিজিটাল শ্রমে।
সিএফওদের মধ্যে ৬০ শতাংশ মনে করেন, বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে এআই এজেন্ট অপরিহার্য। ৬২ শতাংশ বলছেন, এআই এজেন্ট ব্যবসায় খরচ দেখার ধরনই বদলে দিয়েছে। অন্যদিকে এক-তৃতীয়াংশ বা ৩২ শতাংশ সিএফওর মতে, এআই-এর উন্নতি তাদের প্রযুক্তি বিনিয়োগকে আরও সাহসী করেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, এআই এজেন্ট শুধু খরচ কমায় না, বরং আয়ও বাড়াতে পারে। জরিপে অংশ নেওয়া ৭৫ শতাংশ সিএফওর মতে, এআই এজেন্ট খরচ কমানোর পাশাপাশি কোম্পানির আয়ও বাড়াবে। তাদের আশা, এভাবে আয় গড়ে প্রায় ২০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে।
অন্যদিকে ৭৭ শতাংশ সিএফওর মতে, এআই এজেন্ট ব্যবসার মডেল পুরোপুরি বদলে দিচ্ছে। ৫৮ শতাংশ বলছেন, এআই শুধু রুটিনমাফিক কাজ নয়, কৌশলগত কাজেও বেশি ভূমিকা রাখবে।
সেলসফোর্সের গবেষণা অনুযায়ী, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলের সিএফওরা এখন এআইকে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে গ্রহণ করছেন। জরিপে অংশ নেওয়া ৮৩ শতাংশ সিএফও জানিয়েছেন, তারা ইতোমধ্যে ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিতে এআই ব্যবহার করছেন। ঝুঁকি মূল্যায়ন (৮৫ শতাংশ), আর্থিক পূর্বাভাস (৬৫ শতাংশ) ও মুনাফার হিসাব (৫৮ শতাংশ)—এই তিনটি ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হচ্ছে এআই এজেন্টের। গবেষণায় আরও দেখা যায়, ৫০ শতাংশ সিএফও মনে করেন এজেন্টিক এআই বদলে দিচ্ছে আরওআই বা রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট মূল্যায়নের ধরন।
তবে এশিয়া প্যাসিফিকের সিএফওদের কাছে এআই নীতি নিয়ে দুটি বড় দুশ্চিন্তা স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে। ৬৮ শতাংশ বলেছেন, নিরাপত্তা ও গোপনীয়তার ঝুঁকি তাদের প্রধান উদ্বেগ। আর ৬২ শতাংশ মনে করেন, এআই থেকে আরওআই পেতে সময় বেশি লাগে।