ঢাকা: জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের অংশগ্রহণে একটি গুরুত্বপূর্ণ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৭ আগস্ট) সন্ধ্যায় জাতীয় সংসদ ভবনে অবস্থিত কমিশনের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এই সভায় জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-এর সমন্বিত খসড়া এবং তার ওপর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মতামত নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
সভার মূল আলোচ্য বিষয় ছিল—জুলাই জাতীয় সনদের খসড়া নথির বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর পাঠানো প্রস্তাব, সুপারিশ ও মতামত কীভাবে ওই নথিতে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে, সেই বিষয়ে গভীর পর্যালোচনা করা। কমিশনের সদস্যরা মতামতগুলোকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে জাতীয় সনদের সম্ভাব্য চূড়ান্ত রূপ কী হতে পারে, তা নিয়ে মতবিনিময় করেন। পাশাপাশি, সনদের বাস্তবায়ন কাঠামো, প্রয়োজনীয় আইনি ও নীতিগত সংস্কার এবং এর বাস্তবায়নে সরকার কী ধরনের কৌশল বা বিকল্প পথ বেছে নিতে পারে—সেসব বিষয়ও আলোচনায় উঠে আসে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন কমিশনের সহ-সভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ। উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সদস্য বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ড. ইফতেখারুজ্জামান, ড. বদিউল আলম মজুমদার, সফর রাজ হোসেন এবং ড. মো. আইয়ুব মিয়া। এছাড়া ঐকমত্য গঠন প্রক্রিয়ায় যুক্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারও বৈঠকে অংশ নেন।
কমিশনের একাধিক সদস্য সভায় মন্তব্য করেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের প্রতিফলন ছাড়া জাতীয় সনদ পূর্ণতা পাবে না। এজন্য সনদের খসড়াকে আরও অংশগ্রহণমূলক, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং রাজনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার ওপর জোর দেওয়া হয়।
কমিশন সূত্রে জানা গেছে, অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকলেও অনেকগুলো বিষয়ের ওপর একটি ন্যূনতম ঐক্য গড়ে উঠেছে। এসব অভিন্ন মতামতকে ভিত্তি করে জাতীয় সনদের একটি সমন্বিত ও গ্রহণযোগ্য চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করা হবে।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৬ আগস্ট কমিশনের পক্ষ থেকে “জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫”–এর সমন্বিত খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মতামতের জন্য প্রেরণ করা হয়। এরপর বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনার মধ্য দিয়ে মোট ২৯টি রাজনৈতিক দল এ পর্যন্ত তাদের মতামত প্রদান করেছে।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আগামী মাসেই চূড়ান্ত জাতীয় সনদ প্রকাশের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এর আগে আরও কয়েকটি পরামর্শ সভা ও বিশেষজ্ঞ পর্যালোচনার মাধ্যমে খসড়াটিকে আরও শক্তিশালী ও সর্বজন গ্রহণযোগ্য করা হবে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের এই কার্যক্রম রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে একটি ইতিবাচক দৃষ্টান্ত তৈরি করছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। তাদের মতে, সব পক্ষকে সম্পৃক্ত করে জাতীয় ইস্যুতে একটি নীতিগত ও দিকনির্দেশনামূলক দলিল প্রণয়ন একটি সাহসী পদক্ষেপ, যা দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।