ঢাকা: জনস্বাস্থ্য রক্ষা, অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধ ও রাজস্ব বৃদ্ধির স্বার্থে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ও আরও শক্তিশালী করতে ৮ দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশে তামাকবিরোধী কার্যক্রম পরিচালনাকারী সংগঠনগুলো। বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে ‘তামাকজনিত রোগ ও মৃত্যু কমাতে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করা জরুরি’ শীর্ষক অবস্থান কর্মসূচিতে এসব দাবি জানান তারা।
৮ দফা দাবি হলো-
১. তামাক কোম্পানির সিএসআরসহ সকল প্রকার বিজ্ঞাপন, প্রমোশন ও স্পন্সরশিপ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা।
২. পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে শতভাগ ধূমপানমুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করা।
৩. শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক ও খেলার মাঠের ১০০ মিটারের মধ্যে তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
৪. সকল তামাকজাত দ্রব্যে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং বাধ্যতামূলক করা।
৫. সিগারেট খুচরা বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
৬. ই-সিগারেট ও অন্যান্য উদীয়মান তামাকজাত দ্রব্য নিষিদ্ধ করা।
৭. প্যাকেটের ৯০ শতাংশ জায়গায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করা।
৮. নাটক, সিনেমা, ওয়েবসিরিজ, টিভি, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়া এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তামাকজাত দ্রব্যের বিজ্ঞাপন, প্রদর্শন ও বিক্রি সম্পূর্ণ বন্ধ করা।
অবস্থান কর্মসূচিতে এইড ফাউন্ডেশনের প্রকল্প পরিচালক সাগুফতা সুলতানা বলেন, দেশে খুচরা সিগারেট বিক্রি হওয়ার কারণে সরকার রাজস্ব হারাচ্ছে এবং কিশোর-তরুণরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। দীর্ঘদিন থেকে তামাকজাত দ্রব্যে স্ট্যান্ডার্ড প্যাকেজিং ব্যবস্থার দাবি জানালেও সেদিকে কোনো কর্ণপাত করা হচ্ছে না। লাইসেন্সবিহীন যত্রতত্র তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি করা হচ্ছে। এরকম অবৈধভাবে বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো ব্যবসা পরিচালনা করতে পারে না। প্রত্যেকটা বিক্রিয়কেন্দ্রকে লাইসেন্সের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে ৯০ শতাংশজুড়ে স্বাস্থ্য সচিত্র সতর্কবার্তা মুদ্রণ করতে হবে। একইসঙ্গে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের ক্ষেত্রে ই-সিগারেটকে নিষিদ্ধ করতে হবে। নতুবা আমাদের দেশের জনস্বাস্থ্য আরও হুমকির মুখে পড়বে।
এসময় ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রামস সৈয়দা অনন্যা রহমান বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়ার পর থেকে তামাক কোম্পানি নানাভাবে হস্তক্ষেপ শুরু করেছে। তারা নিজেরদেরকে স্টেকহোল্ডার দাবি করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনকে বাঁধাগ্রস্ত করতে চায়। তাদের এ হস্তক্ষেপের নিন্দা জানাই। এফসিটিসি ৫.৩ আর্টিকেল অনুযায়ী সরকার কোনোভাবেই তামাক কোম্পানির সাথে বসতে পারে না। আমরা দ্রুত আমাদের দাবি অনুযায়ী আইন সংশোধনের দাবি জানাচ্ছি।
বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসির প্রকল্প পরিচালক হামিদুল ইসলাম হিল্লোল বলেন, আইন ও নীতিমালা প্রণয়নসহ সরকারি, বেসরকারি সংস্থার নানামুখী কার্যক্রমের ফলে তামাক বিরোধী সচেতনতা বেড়েছে। কিন্তু আইন সংশোধন ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে তামাক কোম্পানির অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বহুজাতিক তামাক কোম্পানি কোনোভাবে আমাদের দেশের নীতিতে হস্তক্ষেপ করতে পারে না। তারা নানাভাবে দেশের আইন ভঙ্গ করছে। ফলে দ্রুত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে আরও শক্তিশালী করা এবং তামাক কোম্পানিকে আইন ভঙ্গের জন্য শাস্তির আওতায় আনা জরুরি।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে আরও বক্তব্য দেন নাটাবের প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফিরোজ আহমেদ, ডাব্লিউবিবি ট্রাস্টের সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা সামিউল হাসান সজীব, প্রকল্প কর্মকর্তা মিঠন বৈদ্য, সহকারী প্রকল্প কর্মকর্তা নাজমুন নাহার, নারী মৈত্রীর ইয়ুথ দলের সদস্য রাইসুল ইসলাম ও নওরিন, ডিআইইউয়ের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল নোমান, ডর্পের ইয়ুথ দলের সদস্য আবু রোজিন, ডাসের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর মোয়াজ্জেম হোসেন টিপু ও বাটার সদস্য অরিন্দম দেবনাথ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন বিএনটিটিপি’র সিনিয়র প্রজেক্ট ও কমিউনিকেশন অফিসার ইব্রাহীম খলিল।
অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করেছে এইড ফাউন্ডেশন, আর্ক ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট, বিটিসিএ, বিএনটিটিপি, ডাস, ডর্প, টিসিআরসি, গ্রাম বাংলা উন্নয়ন কমিটি, আইপিএইচআরসি, মানস, নাটাব, নারী মৈত্রী, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, প্রত্যাশা ও ডাব্লিউবিবি ট্রাস্ট।