ঢাকা: বিএসসি প্রকৌশল ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা ও চলমান সংকট নিরসনে সরকারকে দায়িত্বশীল পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)।
বৃহস্পতিবার (২৮ আগস্ট) দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব (শিক্ষা ও গবেষণা) ফয়সাল মাহমুদ শান্তর সই করা এক বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানানো হয়।
এতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিএসসি প্রকৌশল ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে সরকার কোনো সমাধানযোগ্য পদক্ষেপ না নিয়ে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছে। সরকারের এই দায়িত্বহীনতা ও অবহেলার কারণে আন্দোলন আরও ঘনীভূত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল (বুধবার) বিএসসি প্রকৌশলের শিক্ষার্থীরা ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা কাকরাইলে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, একটি স্বাধীন ও গণতান্ত্রিক দেশে সবাই নিয়মতান্ত্রিকভাবে তাদের দাবি উত্থাপন করবে এবং সরকারের দায়িত্ব হলো সব অংশীজনের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধানে পৌঁছানো। ছাত্র-জনতার উত্থানের মধ্য দিয়ে আমরা এমন একটি বাংলাদেশেরই প্রত্যাশা করি। কিন্তু গভীর উদ্বেগের সঙ্গে আমরা লক্ষ্য করলাম, বিএসসি প্রকৌশল ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের পূর্বঘোষিত কর্মসূচিতে পুলিশ ন্যক্কারজনক হামলা করেছে। এ ঘটনায় আমরা, জাতীয় নাগরিক পার্টি, তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছি এবং শিক্ষার্থীদের দাবির যৌক্তিক ও কার্যকর সমাধান নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছি।
এনসিপি মনে করে, বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের দীর্ঘদিনের নির্দিষ্ট দাবি-দাওয়ার ব্যাপারে সরকারের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে না পারার ব্যর্থতা আড়াল করতেই ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি এবং ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীদের সাত দফা দাবি সংবলিত স্মারকলিপি প্রদান-পরবর্তী শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এ দেশের মানুষের টাকায় গঠিত পুলিশ বাহিনী হামলা করেছে। সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও জলকামান নিক্ষেপ করে অসংখ্য শিক্ষার্থীকে আহত করা হয়েছে। নতুন বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এ ধরনের হামলা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
দলটি জানায়, বিএসসি ও ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে দুটি ভিন্ন ধারায় বিভক্ত হয়ে নিজ নিজ দাবি নিয়ে সারাদেশে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের প্রযুক্তিগত উন্নতির জন্য এই দুটি গ্রুপই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে এবং তাদের আরও বেশি অবদান রাখার সম্ভাবনা বিদ্যমান। তাদের মধ্যে চলমান সংকট নিরসনসহ শিক্ষাব্যবস্থার বিদ্যমান সংকট মোকাবিলায় এই সরকার এবং সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয় চরম ব্যর্থতার নজির স্থাপন করছে। ছাত্র-জনতার উত্থানের পর একটি শিক্ষা সংস্কার কমিশন গঠন করা আবশ্যক ছিল, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ, স্কুল, ভোকেশনাল ও মাদরাসাসহ সব পর্যায়ে নানা রকমের অসংগতি ও সংকট নিরসনের লক্ষ্যে সবার জন্য অংশগ্রহণমূলক প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিতে পারতো। এর পরিবর্তে আমরা দেখেছি, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পুরোনো সংকটে আইনি জটিলতা তৈরি এবং নিজেদের পদ-পদবি উপভোগ করতেই ব্যস্ত। যা শিক্ষার্থীদের রক্তের বিনিময়ে গঠিত হওয়া সরকারের জন্য লজ্জাজনক।
এনসিপির পক্ষ থেকে অবিলম্বে আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবিগুলোর শান্তিপূর্ণ, কার্যকর ও অংশগ্রহণমূলক সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানানো হয়। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক অধিকার হিসেবে যে কোনো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলাকারীদের শনাক্ত করে শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়।