ভারতের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জোরপূর্বক সমুদ্রপথে মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক অনুসন্ধানে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
বিবিসির তথ্যমতে চলতি বছরের মে মাসে দিল্লিতে বসবাসরত অন্তত ৪০ জন রোহিঙ্গাকে আটক করে আন্দামান সাগরে নৌবাহিনীর জাহাজ থেকে ফেলে দেওয়া হয়।
রোহিঙ্গাদের অভিযোগ, ৬ মে স্থানীয় থানায় বায়োমেট্রিক তথ্য সংগ্রহের নামে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় তাদের। এরপর ইন্দারলোক ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয় কয়েক ঘণ্টা। পরদিন তাদের হিন্দন বিমানবন্দর থেকে আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে নৌবাহিনীর জাহাজে তুলে হাত বেঁধে, চোখ-মুখ ঢেকে, মারধর করে সমুদ্রে নামতে বাধ্য করা হয়।
ভুক্তভোগী নুরুল আমিন জানান, তার ভাই কাইরুল ও আরও চার আত্মীয়কে এই প্রক্রিয়ায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের হাত বেঁধে বন্দির মতো নৌকায় তোলা হয়েছিল। পরে লাইফ জ্যাকেট দিয়ে সাগরে ফেলে দেওয়া হয়।’

ভুক্তভোগী নুরুল আমিন। ছবি: বিবিসি
স্থানীয় জেলেদের সহায়তায় তারা মিয়ানমারের উপকূলে পৌঁছান। বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সশস্ত্র প্রতিরোধ বাহিনী বাহ্তু আর্মির (বিএইচএ) আশ্রয়ে রয়েছেন তারা। তবে সেখানেও নিজেদের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন বলে জানিয়েছেন শরণার্থীরা।
জাতিসংঘের মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ প্রতিবেদক থমাস অ্যান্ড্রুজ বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণে যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। রোহিঙ্গাদের আন্দামান সাগরে ফেলে দিয়ে তাদের জীবনকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ঠেলে দিয়েছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ।’
এ বিষয়ে ভারতের জেনেভা মিশনে প্রমাণ পেশ করলেও এখনও কোনো সাড়া মেলেনি।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নৌবাহিনীর কাছে একাধিকবার যোগাযোগ করলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে বিবিসি।
জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) এর হিসাবে ভারতে বর্তমানে ২৩ হাজার ৮০০ রোহিঙ্গা নিবন্ধিত রয়েছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, প্রকৃত সংখ্যা ৪০ হাজারেরও বেশি। ভারত সরকার রোহিঙ্গাদের শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না বরং বিদেশি আইন অনুযায়ী তাদের ‘অবৈধ অভিবাসী’ হিসেবে বিবেচনা করে।
২০১৭ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর ভয়াবহ অভিযানের পর লাখো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। ভারতেও হাজারো রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টে এরই মধ্যে এ ঘটনায় রিট পিটিশন দায়ের করা হয়েছে। আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর আদালতে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে।