রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) জুলাই-৩৬ হলের ৯১ ছাত্রী রাতে দেরিতে ফেরায় হল প্রাধ্যক্ষ অফিসে তলব করে। এ সংক্রান্ত একটি প্রচারিত ফটোকার্ডে ওই ছাত্রীদের ‘যৌনকর্মী’ বলে কমেন্ট করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাহ মখ্দুম হল শাখা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি আনিসুর রহমান মিলন। ফটোকার্ডের নিচে তিনি কমেন্টে লিখেন ‘এগুলো ছাত্রী নয়, এগুলো বিনা পারিশ্রমিক যৌনকর্মী’।
ওই ছাত্রদল নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ২০১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী। তার বাসা সিরাজগঞ্জে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাতে এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জুলাই ৩৬ হলের অনাবাসিক ও গণরুমের ছাত্রীদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, দেরিতে (রাত ১১টার পর) হলে ফেরার কারণে নিম্নে উল্লিখিত ছাত্রীদের ক্রমিক নম্বর ১-৪৫ পর্যন্ত মঙ্গলবার এবং ক্রমিক নম্বর ৪৬-৯১ পর্যন্ত বুধবার বিকেল ৪টায় প্রাধ্যক্ষ মহোদয়ের অফিস কক্ষে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হলো।
ছাত্রদল নেতার এমন মন্তব্যে ক্যাম্পাসে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা তৈরি হয়েছে।
এ বিষয়ে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ক্যাম্পাসের ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। বিষয়টির সমালোচনা করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রগণমঞ্চের আহ্বায়ক নাসিম সরকার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেছেন, ‘ছাত্রদল তো নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে মিছিল করলো, খুবই ভালো কাজ। আজ দেখি নিজ দলের নেতার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়, আর রাবি প্রশাসনেরই জোর কেমন, অপেক্ষায় রইলাম। এইসব মিসোজিনিস্ট ফ্রাস্ট্রেটেড হারামজাদাদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে রাখলাম।’
বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রফ্রন্টের আহ্বায়ক ফুয়াদ রাতুল লিখেছেন, ‘গতকালই নারী নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করলো ছাত্রদল। নিজ দলের কর্মীর নারী অবমাননার বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয় দেখতে চাই। প্রশাসনের সাইবার বুলিং বিরোধী সেলের কার্যকারিতাও দেখতে চায় শিক্ষার্থীরা।’
শাখা ইসলামি ছাত্রশিবিরের এক নেতা লিখেছেন, ‘রাবির জুলাই-৩৬ হলের ৯১ জন ছাত্রীকে “বিনা পারিশ্রমিক যৌনকর্মী” বলেছে রাবির শাহ মখদুম হল ছাত্রদলের সহ-সভাপতি মিলন। এর মাধ্যমে আবারও প্রমাণিত হলো ছাত্রদল নারীদের সম্মান করতে জানেনা। নারীদের ধর্ষণ এবং সম্মানহানি করার ক্ষেত্রে ছাত্রদল ছাত্রলীগের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। যারা সবসময় নিরাপরাধ ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে প্রোপাগান্ডা, মিথ্যাচার করে আল্লাহ তাদেরকে এভাবেই লাঞ্ছিত করেন।”
এ বিষয়ে ছাত্রদল নেতা মিলনের বক্তব্য পাওয়া যায় নি। তবে তিনি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক টাইমলাইনে লিখেন, ‘আজ দুপুরের দিকে আমার আইডির নিয়ন্ত্রণ আমার কাছে ছিলো না। যার ফলে বিভিন্ন গ্রুপে আমাকে ছোট করার জন্য বাজে বাজে সব কমেন্ট করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য আমি সবার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি তার ফেসবুক আইডি ডিঅ্যাক্টিভেট করে দেন।’
এ বিষয়ে শাখা ছাত্রদলের সভাপতি সুলতান আহমেদ রাহী ও সাধারণ সম্পাদক সরদার জহুরুলকে একাধিকবার কল দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাহবুবর রহমান বলেন, ‘যেকোনো নারী শিক্ষার্থীকে নিয়ে অবমাননাকর কোনো বক্তব্য দিলে আমরা বিষয়টি সিরিয়াসভাবে দেখব। এ ব্যাপারে প্রয়োজনে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
তিনি বলেন, ‘আমরা তো জেন্ডার ডিসক্রিমিনেশন মানবই না, তার ওপর যদি কেউ এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে, তাহলে তাকে ছাড় দেব না। সে যেই হোক, তাকে আমরা আইনের মুখোমুখি দাঁড় করবই।’