ঢাকা: বেক্সিমকো গ্রুপের কর্ণধার ও আইএফআইসি ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান সালমান এফ রহমানের ছেলে আহমেদ সায়ান ফজলুর রহমানকে আজীবন ও আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টের সাবেক সিইও ইমরান আহমেদকে ৫ বছর পুঁজিবাজারে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড আল ইসতানিয়া ও আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো ক্যুপন বন্ড ইস্যুর ক্ষেত্রে অনিয়ম, প্রভাব খাটানো, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দায়িত্বশীল আচরণ না করার অভিযোগে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসইসি।
বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিএসইসি চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মকসুদের সই করা এসংক্রান্ত পৃথক পৃথক আদেশ জারি করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
বিএসইসির আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, আইএফআইসি গ্যারান্টেড শ্রীপুর টাউনশিপ গ্রিন জিরো কুপন বন্ড ও বেক্সিমকো গ্রিন সুকুক বন্ড আল ইসতানিয়া ইস্যুর ক্ষেত্রে ‘প্রতারণামূলক যোগসাজশ’ হয়েছিল। সালমান এফ রহমান তার প্রভাব খাটিয়ে এই প্রক্রিয়ায় জড়িত ছিলেন। তার কর্মকাণ্ড ছিল অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং দেশের পুঁজিবাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
বিএসইসির মতে, বিনিয়োগকারীর স্বার্থ ও মূলধন বাজারের সুষ্ঠু বিকাশে তার এ কর্মকাণ্ড মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে। এজন্য তাকে ও তার ছেলেকে আজীবনের জন্য সিকিউরিটিজ বাজার থেকে ‘পারসোনা নন গ্রাটা’ ঘোষণা করা হয়েছে।
২০২৪ সালের ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসি একটি তদন্ত ও অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেছিল। তদন্ত কমিটি কর্তৃক এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন কমিশনে জমা দিয়েছে। ওই প্রতিবেদনের আলোকেই কমিশন আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন চেয়ারম্যান সালমান ফজলুর রহমানকে ১০০ কোটি ও ব্যাংকের তৎকালীন ভাইস-চেয়ারম্যান আহমেদ শায়ান ফজলুর রহমানকে ৫০ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার এবং পুঁজিবাজারে উভয়কে আজীবন অবাঞ্ছিত (পারসোনা নন গ্রাটা) ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত নেয়।
আইএফআইসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেডের তৎকালীন সিইও ইমরান আহমেদকে পাঁচ বছরের জন্য পুঁজিবাজার সংক্রান্ত সবধরনের কাজে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া, আইএফআইসি ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ারের বিরুদ্ধে এনফোর্সমেন্ট কার্যক্রম গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। একইসঙ্গে আইএফআইসি ব্যাংককে সতর্ক করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ব্যাংকের তৎকালীন মনোনীত পরিচালক এ আর এম নাজমুস সাকিব, গোলাম মোস্তফা, জাফর ইকবাল, কামরুন নাহার আহমেদ এবং তৎকালীন স্বতন্ত্র পরিচালক সুধাংশু শেখর বিশ্বাসকে সতর্ক করারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া, ক্রেডিট রেটিং প্রদানকারী হিসেবে ইমার্জিং ক্রেডিট রেটিং লিমিটেডকে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার সিদ্ধান্ত হয়।
কমিশন বলছে, তদন্তের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখন থেকে যেকোনো সিকিউরিটিজ বাজার নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ, স্টক এক্সচেঞ্জ, মধ্যস্থতাকারী, যেকোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানি (স্বাধীন পরিচালক, উপদেষ্টা বা পরামর্শদাতা সহ), ট্রাস্ট, সংস্থা, বা সত্তার মধ্যে যেকোনো পদে অধিষ্ঠিত থাকার অযোগ্যতা যার ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কমিশনের অনুমোদন প্রয়োজন রয়েছে।
এছাড়া, স্টক এক্সচেঞ্জ, মধ্যস্থতাকারী, যেকোনো তালিকাভুক্ত কোম্পানি, ট্রাস্ট, সংস্থা, বা কমিশনের তত্ত্বাবধানে থাকা অন্য যেকোনো সত্তার যেকোনো প্রাঙ্গণ, অফিস, বা অফিসিয়াল কার্যক্রম বা প্রোগ্রামে প্রবেশ বা তার সঙ্গে যোগাযোগের নিষেধাজ্ঞা কমিশন জারি করছে। আদেশ জারির পর থেকে কমিশনের সিদ্ধান্ত পরিপালনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।