রাজবাড়ী: রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগল নামের এক ব্যক্তির কবর মাটি থেকে কয়েক ফুট উঁচু বেদি তৈরি করে দাফন করা হয়েছিল। এটি ‘শরিয়ত পরিপন্থি’ দাবি করে করে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে ওই দরবারে আগুন দেওয়ার পাশাপাশি ভাঙচুর চালিয়েছে তৌহিদী জনতা। এ সময় দরবারের ভক্তদের সঙ্গে সংঘর্ষে দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেপুলিশের ওপর হামলা চালানো হয়, ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়ি। এতে ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। পরে নুরাল পাগলের লাশ উত্তোলন করে পদ্মার মোড় এলাকায় আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয় জনতা।
শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরের পর বিক্ষুব্ধ জনতা এ হামলা ও অগ্নিসংযোগ করেন বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এ সময় পুলিশের দুইটি ডাবল কেবিন পিকআপসহ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ির ভাঙচুর করা হয়।

নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের লাশ পুড়িয়ে দিচ্ছে বিক্ষুব্ধ জনতা। ছবি: সারাবাংলা
খবর পেয়ে রাজবাড়ীর পুলিশ সুপার মো. কামরুল ইসলামসহ সেনাবাহিনীর সদস্যরা গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শরীফ আল রাজীবসহ পুলিশের অন্য কর্মকর্তারাও ছিলেন।
জানা গেছে, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগল বহু বছর আগে নিজ বাড়িতে গড়ে তোলেন দরবার শরীফ। আশির দশকের শেষের দিকে নিজেকে ইমাম মাহদি দাবি করে আলোচনায় আসেন তিনি। ওই সময়ে তার বিরুদ্ধে তীব্র জনরোষ তৈরি হয়। পরবর্তীতে ১৯৯৩ সালের ২৩ মার্চ জনরোষ এড়াতে তিনি মুচলেকা (অঙ্গীকার নামা) দিয়ে এলাকা ত্যাগ করেন। এর কিছুদিন পর তিনি আবার ফিরে এসে তার দরবার শরীফের কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করেন।

নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের দরবারে হামলা করছে জনতা। ছবি: সারাবাংলা
গত ২৩ আগস্ট ভোরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান নুরাল পাগল। পরে ওইদিনই সন্ধ্যায় এলাকাবাসীর অংশগ্রহণে তার প্রথম জানাজা নামাজ অনুষ্ঠিত হয় এবং পরে তার ভক্তানুরাগীদের অংশগ্রহণের দরবার শরীফের ভেতরে দ্বিতীয় জানাজা নামাজ শেষে রাত ১০ টার দিকে তাকে মাটি থেকে প্রায় ১২ ফুট উঁচু স্থানে বিশেষ কায়দায় দাফন করা হয়। পবিত্র কাবা শরীফের আদলে তার কবরের রং করা হয়। এরপর থেকেই বিষয়টি নিয়ে ফুঁসে আছেন তৌহিদী জনতা। তৌহিদী জনতার আন্দোলনের ফলে কবরের রং পরিবর্তন করা হয়।
এ বিষয় নিয়ে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে কয়েক দফায় বৈঠক হয় তৌহিদি জনতা ও নুরাল পাগলের পরিবারের সদস্যদের। এরপরেও কবর নিচে নামাতে গড়িমসি করে নুরাল পাগলের পরিবার।

নুরুল হক ওরফে নুরাল পাগলের মরদেহ কবর থেকে তুলে কফিন টেনে নিয়ে যাচ্ছে জনতা। ছবি: সারাবাংলা
পরে এ বিষয়ে দুই দফা সংবাদ সম্মেলন করে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন তৌহিদী জনতা। কবর নিচে নামানো না হলে কবর ভেঙে ফেলার হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার জুম্মার পর গোয়ালন্দ আনসার ক্লাব মাঠে বিক্ষোভ সমাবেশ করে তৌহিদী জনতা। বিক্ষোভ থেকে হামলা চালানো হয় নুরাল পাগলের দরবারে। পালটা আক্রমণ করেন নুরাল পাগলের ভক্তরা। ইট-পাটকেল নিক্ষেপসহ তুমুল সংঘর্ষে দুই পক্ষের শতাধিক মানুষ আহত হন। এক পর্যায়ে নুরাল পাগলের দরবারে ঢুকে আগুন ধরিয়ে দেয় তৌহিদী জনতা। পরে নুরাল পাগলের মরদেহ কবর থেকে তুলে গোয়ালন্দ পদ্মার মোড়ে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের ওপর নিয়ে পুড়িয়ে দেয় তৌহিদী জনতা।
এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলে হামলা চালানো হয় পুলিশের ওপর, ভাঙচুর করা হয় পুলিশের দুটি গাড়ি। এতে ৬ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী এলে তাদের ওপরেও চড়াও হন তৌহিদী জনতা।
হামলায় ছয় পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে জানান গোয়ালন্দ ঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ রাকিবুল ইসলাম। এছাড়া আর কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।