চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থী ও আহলে সুন্নতপন্থীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এসময় একাধিক যানবাহন ভাঙচুর করা হয়েছে। বিক্ষুব্ধরা সড়ক অবরোধ করে রাখায় খাগড়াছড়ি ও রাঙামাটি সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে চট্টগ্রামের সঙ্গে যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসন। সেখানে এখনও দু’পক্ষের উত্তেজনা বিরাজ করছে।

চট্টগ্রামের হাটহাজারী কওমি মাদরাসার বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেন। ছবি: সারাবাংলা
চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলামের মূল কেন্দ্র হিসেবে খ্যাত আলোচিত আল-জামিয়াতুল আহলিয়া দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম (হাটহাজারী মাদরাসা) মাদরাসার সামনে থেকে আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে এ সংঘাতের ঘটনা ঘটে।
পুলিশ ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, হাটহাজারী মাদরাসার সামনে এক যুবক নেতিবাচক অঙ্গভঙ্গি করে ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। এ নিয়ে ওই মাদরাসাসহ কওমি ঘরানার শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। তখন ওই যুবক ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে ফেসবুকে ভিডিও বার্তা দেন।
উত্তেজনার প্রেক্ষিতে শনিবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি থানা পুলিশ আরিয়ান ইব্রাহীম (২০) নামে ওই যুবককে আটক করে। সন্ধ্যা ফটিকছড়ি পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের শফিকিয়া দরবার শরীফ এলাকা থেকে তাকে আটক করা হয়। তার বাড়ি ওই এলাকায়।
কিন্তু ততক্ষণে হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষার্থীরা বের হয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ শুরু করেন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ মাইকে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রদের শান্ত থাকার আহ্বান জানায়।
এসময় সড়কের বিভিন্নস্থানে টায়ার রেখে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। হাটহাজারী বাস স্টেশন এলাকায় কয়েকটি বাসসহ বিভিন্ন যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। এর মধ্যে আহলে সুন্নতপন্থীরাও পালটা বিক্ষোভ শুরু করেন ওই এলাকায়। এতে উভয়পক্ষে ধাওয়া পালটা ধাওয়া ও সংঘর্ষ শুরু হয়।
রাত পৌনে ১১টার দিকে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হাটহাজারী সার্কেল) কাজী তারেক আজিজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘এখন সংঘর্ষ নেই। কওমি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা তাদের মাদরাসার সামনে অবস্থান নিয়েছে। আহলে সুন্নতপন্থীরা সড়কের বিভিন্নস্থানে আছেন। পরিস্থিতি থমথমে বলা যায়। আমরা সতর্ক অবস্থানে আছি। ১৪৪ ধারা দেওয়ার কথা শুনেছি।’
আটক যুবককে থানায় পুলিশ হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
এদিকে রাত পৌনে ১১টার দিকে হাটহাজারী উপজেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেইজে ১৪৪ ধারা জারির বিষয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মুমিন সই করা বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ, জনসাধারণের জীবন ও সম্পদ রক্ষা এবং শান্তি-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে হাটহাজারী উপজেলার মীরেরহাট থেকে এগারো মাইল সাবস্টেশন পর্যন্ত এবং উপজেলা গেইট থেকে কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট, হাটহাজারী পর্যন্ত রাস্তার উভয়পাশে ও সংলগ্ন এলাকায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আজ (শনিবার) রাত ১০টা থেকে রোববার বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে।
এসময় ওই এলাকায় সকল ধরনের সভা-সমাবেশ, বিক্ষোভ মিছিল, গণজমায়েত, বিস্ফোরক দ্রব্য, আগ্নেয়াস্ত্র ও সকল প্রকার দেশীয় অস্ত্র বহন এবং সংশ্লিষ্ট এলাকায় পাঁচজন বা ততোধিক ব্যক্তির একত্রে অবস্থান কিংবা চলাফেরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।