মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি শীর্ষস্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ২০১৯ সালে উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক কর্মসূচির ওপর নজরদারির জন্য একটি গোপন মিশনে গিয়ে মার্কিন নৌবাহিনীর প্রধান বিশেষ অভিযানকারী দল ‘নেভি সিল’র সদস্যরা বেশ কয়েকজন উত্তর কোরীয় বেসামরিক নাগরিককে গুলি করে হত্যা করেছে। এই মিশনটি প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অনুমোদিত ছিল বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) আলজাজিরার প্রতিবেদনে এই তথ্য জানা গেছে।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস শুক্রবার জানিয়েছে, ২০১৯ সালের শুরুর দিকে ওয়াশিংটন এবং পিয়ংইয়ংয়ের মধ্যে উচ্চ-পর্যায়ের কূটনৈতিক আলোচনার সময় এই গোপন অভিযানটি চালায় মার্কিন নৌবাহিনীর এলিট বিশেষ বাহিনী সিল টিম ৬। এই দলটিই ২০১১ সালে আল-কায়েদা নেতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যা করেছিল। তাদের দায়িত্ব ছিল গোপনে উত্তর কোরিয়ার উপকূলে নেমে দেশটির নেতৃত্বের ওপর গুপ্তচরবৃত্তি করার জন্য একটি শ্রবণ যন্ত্র স্থাপন করা।
কিন্তু রাতের অন্ধকারে এবং যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় কাজ করার সময় ভুলের কারণে মার্কিন বিশেষ বাহিনীর সদস্যরা উপকূলে নামার সময় কিছু বেসামরিক নাগরিকের মুখোমুখি হয়। এই বেসামরিকেরা ঝিনুক সংগ্রহ করছিল বলে জানা গেছে।
টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুসারে, সিল দলের সদস্যরা গুলি চালায় এবং একটি ছোট মাছ ধরার নৌকার সব আরোহীকে হত্যা করে। এতে কতজন নিহত হয়েছেন, তা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।
মিশন সম্পর্কে অবগত কর্মকর্তারা টাইমসকে জানিয়েছেন, মার্কিন সেনারা উত্তর কোরিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে মরদেহ লুকানোর জন্য সেগুলো পানিতে টেনে নিয়ে যায়। একটি সূত্র জানিয়েছে, সিল দলের সদস্যরা নৌকার কর্মীদের ফুসফুস ছুরি দিয়ে ছিদ্র করে দেয় যাতে তাদের দেহ পানিতে ডুবে যায়।
টাইমস জানিয়েছে, তারা এই ব্যর্থ মিশন সম্পর্কে ডজনখানেক মানুষের সাক্ষাৎকার নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করেছে, যাদের মধ্যে বেসামরিক সরকারি কর্মকর্তা, ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক সদস্য এবং বর্তমান ও সাবেক সামরিক কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত। মিশনের গোপনীয়তার কারণে তারা সবাই নাম প্রকাশ না করার শর্তে কথা বলেছেন।
সংবাদমাধ্যমটি আরও জানায়, কয়েকজন ব্যক্তি এই বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানাতে সম্মত হয়েছেন, কারণ তারা মনে করেন মার্কিন সামরিক বাহিনীর বিশেষ অভিযানগুলোর ব্যর্থতা প্রায়শই সরকারি গোপনীয়তার আড়ালে লুকানো থাকে।
সূত্রগুলো জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার প্রথম মেয়াদে এই মিশনটির চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছিলেন।
শুক্রবার সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ট্রাম্প এই অভিযানের বিষয়ে কোনো কিছু জানার কথা অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি দেখতে পারি, কিন্তু আমি এই বিষয়ে কিছুই জানি না। আমি এখন এই প্রথমবার শুনছি।’
মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, ২০১৯ সালে ঠিক কী ঘটেছিল তা পিয়ংইয়ং জানতে পেরেছিল কিনা, তা “অস্পষ্ট”।
উত্তর কোরিয়া সে সময় বেসামরিকদের মৃত্যুর বিষয়ে কোনো প্রকাশ্য বিবৃতি দেয়নি এবং টাইমস-এর প্রকাশিত খবর সম্পর্কে এখনও কোনো মন্তব্য করেনি।