ঢাকা: ‘ছাগল-কাণ্ডে’ আলোচিত এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে ঢাকার আদালত থেকে কিশোরগঞ্জ কারাগারে নেওয়ার সময় পথে যাত্রাবিরতির নামে একটি রেস্তোরাঁয় অনৈতিকভাবে ‘গোপন বৈঠকের’ সুযোগ দেওয়ার অভিযোগে পুলিশের এক উপপরিদর্শক (এসআই) ও ১০ কনস্টেবলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) এক অফিস আদেশের মাধ্যমে তাদের বরখাস্ত করা হয়। বরখাস্ত পুলিশ সদস্যরা হলেন— এসআই আবুল কাশেম, কনস্টেবল মনিরুজ্জামান, কবির হোসেন, ইমরান, নির্জন খান, শামীম আলম, রনি হোসেন, শরীফুল ইসলাম, তানভির রহমান, আবু সাইদ মিয়া ও রবীন্দ্র দাস।
অভিযোগ উঠেছে, পুলিশ সদস্যরা নরসিংদী এলাকার ওই রেস্তোরাঁর একটি কেবিনে এক ব্যক্তির সঙ্গে মতিউরের গোপন বৈঠকের সুযোগ করে দেন। গত ১২ আগস্ট বিকেলে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সৈয়দনগর এলাকার নিরালা হাড্ডি নামের একটি রেস্তোরাঁয় এ ঘটনা ঘটে।
বরখাস্তের অফিস আদেশে বলা হয়েছে, ওই জেলার (কিশোরগঞ্জ) নিম্নবর্ণিত পুলিশ সদস্যরা পুলিশ লাইন্স এ কর্মরত থাকাকালে এএসআই/এমআই (ফোর্স) অফিসের ঘট সিসি নং-২৮৩/২৫, তারিখ-১২/০৮/২০১৫ খ্রি. মূলে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে হাজতি মতিউর রহমানকে মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ, ঢাকায় হাজির করার জন্য রওনা করেন। হাজতি আসামিকে আদালতে হাজিরা প্রদান শেষে ফিরতি পথে নিম্নবর্ণিত পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত স্কট দল কোনো স্থানে দুপুরে খাবার খাওয়ার যাত্রাবিরতি করেন।
এতে বলা হয়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, দলের সদস্যরা হাজতিকে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা প্রদানের শর্তে উৎকোচ গ্রহণ করেন। এ সংক্রান্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপারসহ (ক্রাইম অ্যান্ড অপস্) তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠনপূর্বক বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে অনুসন্ধানের জন্য নির্দেশ দেন। তিন সদস্যবিশিষ্ট কমিটি অনুসন্ধানপূর্বক প্রতিবেদন দাখিল করে। দাখিলকৃত প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, বর্ণিত হাজতি মতিউর রহমানকে আদালতে হাজিরা প্রদানের পর ফেরত আনার সময় স্কর্ট ডিউটি অফিসার ও ফোর্স কর্তৃক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে মর্মে প্রতীয়মান হয়।
আদেশে বলা হয়েছে, হাজতি মতিউর রহমানকে কিশোরগঞ্জ জেলা কারাগার হতে ঢাকায় আদালতে হাজির করা হয় এবং হাজিরা শেষে তাকে ফেরত আনার পথে যাত্রাবিরতির ব্যবস্থা করা হয়। যাত্রাবিরতির সময় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। স্কর্ট ইনচার্জের ব্যবস্থাপনায় হাজতিকে আলাদা কক্ষে বসিয়ে খাবার খাওয়ানো হয় এবং অন্যান্য পুলিশ সদস্যরা বাইরে সাধারণ স্থানে খাবার গ্রহণ করেন। হাজতিকে আলাদা কক্ষে খাওয়ানো প্রচলিত স্কর্ট ডিউটির শৃঙ্খলার পরিপন্থী এবং ইনচার্জের দায়িত্ব পালনে শৈথিল্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। তবে তারা উপস্থিত থেকেও হাজতিকে আলাদা কক্ষে খাওয়ানোর অনিয়ম প্রতিরোধে উদ্যোগ নেননি, যা তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলার ইঙ্গিত বহন করে। সার্বিকভাবে পর্যলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, হাজতিকে আলাদা কক্ষে খাওয়ানোর ঘটনা সত্য এবং এটি স্কর্ট ডিউটির শৃঙ্খলার পরিপন্থী।
অফিস আদেশে বলা হয়, নিম্নবর্ণিত অফিসার ও ফোর্সগদের উপরিউক্ত কার্যকলাপ বিভাগীয় নিয়ম-শৃঙ্খলার পরিপন্থী, অসৎ উদ্দেশ্য, অসদাচরণ ও জনসম্মুখে পুলিশের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করায় নিম্নবর্ণিত অফিসার ও ফোর্সদের পুলিশ রেগুলেশন অব বেঙ্গল ১৯৪৩ এর প্রবিধান ৮৮০ মোতাবেক আজ (৬ সেপ্টেম্বর) ‘চাকরি হতে সাময়িক বরখাস্ত’ করা হলো। সাময়িক বরখাস্ত থাকাকালীন তারা বিধি মোতাবেক বেতন ও ভাতাদি আহরণ করবে। তাছাড়া সাময়িক বরখাস্তকালীন পুলিশ লাইন্সে সার্বক্ষণিক হাজির থেকে সাদা পোশাকে নিয়মিত রোলকল দেবেন এবং পিটি ও প্যারেডে হাজির থাকবেন।
উল্লেখ্য, এর আগে শনিবার বিকেলে মতিউরকে বহনকারী পুলিশের ওই গাড়িটির যাত্রাবিরতির মুহূর্তের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। দুর্নীতির মামলার শুনানির জন্য গত ১২ আগস্ট মতিউরকে কিশোরগঞ্জ কারাগার থেকে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতে নেওয়া হয়েছিল।