Sunday 07 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আমরা চবি’র জমিদার— বক্তব্য দিয়ে পদ হারালেন জামায়াত নেতা

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৪৭ | আপডেট: ৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:২৩

অব্যাহতি পাওয়া হাটহাজারী উপজেলা জামায়াতের আমির মো. সিরাজুল ইসলাম। ছবি কোলাজ: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে স্থানীয় গ্রামবাসীর সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে দেওয়া বক্তব্যের কারণে হাটহাজারী উপজেলা আমির মো. সিরাজুল ইসলামকে তার পদ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে জামায়াতে ইসলামী। ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জমিদার স্থানীয়রা’- সম্প্রতি সিরাজুলের এমন বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়।

এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের জরুরি বৈঠকে সিরাজুল ইসলামকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আমির মো. আলাউদ্দিন সিকদার। চট্টগ্রাম উত্তর জেলা জামায়াতের প্রচার সেক্রেটারি ফজলুল করিম এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, গত বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী হাটহাজারী উপজেলার জোবরা গ্রামের বাসিন্দাদের উদ্যোগে সাম্প্রতিক সংঘর্ষের প্রেক্ষাপটে এক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে চট্টগ্রাম-৫ (হাটহাজারী) আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী ও উপজেলা আমির সিরাজুল ইসলাম বক্তব্য দেন। তার বক্তব্যের একটি ভিডিও পরবর্তীতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

বক্তব্যে সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা হচ্ছি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় পার্শ্ববর্তী এলাকার মালিক। আমরা জমিদার, ঠিক কিনা? জমিদারের ওপর কেউ হস্তক্ষেপ করবে, এটা কি আমরা মেনে নিতে পারি? কখনোই না। আমরা অতীতেও মেনে নিই নাই, সামনেও মেনে নেব না। এ বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে আমাদের বুকের ওপর। আমরা হচ্ছে এই জায়গার মালিক। এজন্য আমরা অন্যায় কিছু মেনে নিব না। আমাদেরকে সম্মান করতে হবে। সম্মান দেওয়ার মত পরিবেশ আমরা করে দেব। বিশ্ববিদ্যালয় যদি আমাদের যথাযথ সম্মান না করে, তাহলে জনগণ নিয়ে যেটা করা দরকার, সেটা আমরা সামনে করব।’

এমন বক্তব্য নিয়ে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। চবি শাখা ছাত্রশিবিরও বক্তব্যের প্রতিবাদ জানায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তুমুল সমালোচনার মুখে পড়ে জামায়াতে ইসলামী।

এ প্রেক্ষাপটে সিরাজুল ইসলামকে হাটহাজারী উপজেলার আমিরের পদ থেকে অব্যাহতি দিয়ে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে দলটি বলছে, ‘জামায়াতে ইসলামী মনে করে এ বক্তব্য সিরাজুল ইসলামের নিজস্ব বক্তব্য, যাতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার বিক্ষুব্ধ হয়েছে। সংগঠন এ বক্তব্যকে বিনয় পরিপন্থী মনে করে। এতে সংগঠনের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে। আমরা এজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।’

এ বক্তব্যের কারণে সিরাজুলকে হাটহাজারী উপজেলা আমিরের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে জানিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘জামায়াতে ইসলামী মনে করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ও জোবরা গ্রাম কেউ কারও প্রতিপক্ষ নয়, পরস্পর পরিপূরক। এলাকাবাসী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অতীত ঐতিহ্য ও সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ বজায় ছিল, ভবিষ্যতেও এ ধরনের সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকবে, এটাই আমরা প্রত্যাশা করি। সম্প্রতি অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্মানিত শিক্ষক, ছাত্র, ছাত্রী ও জোবরা গ্রামের অধিবাসী যারা আহত হয়েছেন, বাড়ি-ঘরে সম্পদের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আমরা তাদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’

এ ঘটনাকে পুঁজি করে কেউ যাতে অনাকাঙ্ক্ষিত আর কোনো ঘটনা ঘটাতে না পারে, এ জন্য প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সজাগ দৃষ্টি কামনা করছে জামায়াতে ইসলামী।

সারাবাংলা/আরডি/পিটিএম

জামায়াত নেতা পদ হারালেন মো. সিরাজুল ইসলাম

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর