ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার অপেক্ষায় শিক্ষাঙ্গন যখন উত্তেজনায় ভরপুর তখন এ নিয়ে নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানাতে শুরু করেছেন রাজনৈতিক নেতারা। এরই মধ্যেই অভিযোগ-পালটা অভিযোগে নির্বাচন পরবর্তী পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। এ অবস্থায় জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আব্দুল্লাহ তার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন।
বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) সকালে তিনি তার ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘আজ ডাকসুতে যারা জিতবে, তারা কীভাবে দায়িত্ব নেবে এবং যারা হারবে, তারা কীভাবে পরাজয় গ্রহণ করবে—এই দুইটি প্রশ্নের উত্তর বলে দেবে আমাদের জাতীয় রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাচ্ছে।’
হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ডাকসু নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব উদ্বেগজনক মাত্রায় পৌঁছেছে। পেশিশক্তি, সংগঠিত উপস্থিতি ও ক্ষমতার প্রদর্শন ছাত্র রাজনীতির নিজস্ব চরিত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তার ভাষায়, ‘ডাকসু এখন কেবল ছাত্রদের ম্যান্ডেট বহন করছে না বরং পরিণত হয়েছে জাতীয় রাজনৈতিক দলের একটি এক্সটেনশন গেমে, যা ভবিষ্যতের জন্য নেতিবাচক দৃষ্টান্ত।’
তিনি আরও উল্লেখ করেন, শেখ হাসিনার আমলের বিভাজন, সন্দেহ আর দমননীতির ধারা এখনো রাজনীতিতে বহমান, যার ফলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে গণহারে ট্যাগ করার প্রবণতা বাড়ছে। এটি দীর্ঘমেয়াদে রাজনীতিকে সংকুচিত করছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
হাসনাত আব্দুল্লাহ ছাত্র রাজনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘পরাজয়কে প্রস্তুতির অংশ হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। নিয়মিতভাবে নতুন নেতৃত্ব আসার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’
তিনি সতর্ক করে বলেন, ডাকসুর ফলাফলকে ঘিরে রাজনৈতিক দলগুলোর শক্তি প্রদর্শনের প্রস্তুতি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানভিত্তিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য ক্ষতিকর। সব পক্ষকে ভোটারদের রায়কে সম্মান করার আহ্বান জানিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘গণতন্ত্রের অন্যতম মূল ভিত্তি সহিষ্ণুতা। যাকে আমি ব্যক্তিগতভাবে অপছন্দ করি, তাকেও যদি জনগণ বেছে নেয়, সেই বেছে নেওয়াকে সম্মান করাই গণতন্ত্র।’
শেষে হাসনাত আব্দুল্লাহ দেশের রাজনৈতিক দলগুলোকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিগত ১৭ বছরে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নষ্ট করার ফল দেশবাসী ভোগ করেছে। এখন সময় এসেছে জনগণের চাওয়াকে অগ্রাধিকার দিয়ে পরাজয়কে সম্মানিত করার সংস্কৃতি গড়ে তোলার। তা না হলে ভবিষ্যতের রাজনীতি শুধু জয়ীদের উল্লাস আর পরাজিতদের ক্ষোভে বন্দি হয়ে থাকবে, আর গণতন্ত্র পূর্ণতা পাবে না।