জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়: ১৯৭২ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ (জাকসু) প্রতিষ্ঠার পর এখন পর্যন্ত মোট আটবার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সর্বশেষ নির্বাচন হয় ১৯৯২ সালে। দীর্ঘ ৩৩ বছর পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১) সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৯ম জাকসু কেন্দ্রীয় সংসদ ও ২১ হল সংসদ নির্বাচন। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ হবে। বহুল প্রতীক্ষিত জাকসু নির্বাচন ঘিরে ক্যাম্পাসজুড়ে তাই উৎসবের আমেজ বইছে।
এবারের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে ছাত্রদল–সমর্থিত প্যানেল, ছাত্রশিবির–সমর্থিত ‘সমন্বিত শিক্ষার্থী জোট’ প্যানেল, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ‘স্বতন্ত্র শিক্ষার্থী সম্মিলন’ প্যানেল, ছাত্র ইউনিয়ন ও ছাত্র ফ্রন্ট–সমর্থিত প্যানেল ‘সংশপ্তক পর্ষদ’, প্রগতিশীল শিক্ষার্থীদের একাংশের প্যানেল ‘সম্প্রীতির ঐক্যের’ প্রার্থীসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
এদিকে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন করতে এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখাসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছে প্রশাসন। নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যানুযায়ী, এবার জাকসুর ২৫টি পদে লড়ছেন ১৭৭ জন প্রার্থী। হল সংসদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪৪৫ জন। কেন্দ্রীয় সংসদে ভিপি পদে নয় ও জিএস পদে লড়ছেন আটজন। ভোটারের ৪৮ দশমিক ৮ শতাংশ ছাত্রী। এবারের জাকসু নির্বাচনে ২১টি কেন্দ্রে ভোট দেবেন প্রায় ১২ হাজার শিক্ষার্থী। এ জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে ৬৭ জন পোলিং অফিসারসহ ২১ জন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
অপরদিকে শেষ মুহূর্তে জিএস পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী সৈয়দা অনন্যা ফারিয়া। অন্যদিকে হাইকোর্টের আদেশে প্রার্থিতা ফিরে পাওয়ার পর চেম্বার আদালতে এ রায় স্থগিত হওয়ায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারছেন না সম্প্রীতির ঐক্য প্যানেলের ভিপি প্রার্থী অমর্ত্য রায়।
সুষ্ঠু ভোটিং ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ২১ জন অধ্যাপকের সমন্বয়ে গঠন করা হয়েছে মনিটরিং টিম। স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে সেনাবাহিনীর পাশাপাশি থাকবে পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনী। এদিকে পাঁচ সদস্যের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচন কমিশন এরই মধ্যে প্রার্থীদের সঙ্গে একাধিক বৈঠকও করেছেন। তবে ওএমআর পদ্ধতিতে ভোট গণনা ও অতিরিক্ত ব্যালটের বিষয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রার্থীরা। অন্যদিকে প্রার্থীদের নির্বাচনি ইশতেহারে ক্ষোভ ঝেড়েছেন ভোটাররা।
নির্বাচনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ কমিটির পাশাপাশি থাকবে পুলিশ, র্যাব, আনসার ও সেনাবাহিনী। নির্বাচনি প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টোরিয়াল বডির তত্ত্বাবধানে এরই মধ্যে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট কার্যক্রমও সম্পন্ন হয়েছে। ভোট গ্রহণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি হলে স্থাপন করা হয়েছে বুথ। নিরাপত্তার স্বার্থে বুথগুলোর পাশেই যুক্ত করা হয়েছে অতিরিক্ত সিসিটিভি ক্যামেরা। এছাড়া, নির্বাচনের দিন তাৎক্ষণিক অভিযোগ নিষ্পত্তিতেও গঠন করা হয়েছে বিশেষ কমিটি।
এদিকে যাদের ছাত্রত্ব শেষ নিরাপত্তার স্বার্থে বুধবার (১০ সেপ্টেম্বর) বেলা ১২টার মধ্যে তাদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বুথ ২২৪টি, নিরাপত্তায় পুলিশ-আনসার
নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, জাকসু নির্বাচনে বিভিন্ন হলে ২২৪টি বুথ বসানো হয়েছে। ব্যালট পেপারে টিক চিহ্নের মাধ্যমে ভোট দিতে হবে। প্রতি ২০০ ব্যালট পেপারের জন্য একটি বাক্স থাকবে। কেন্দ্রীয় সংসদ ও হল সংসদের ব্যালট বাক্স আলাদা করে চিহ্নিত থাকবে। নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য ৬৭ জন পোলিং এজেন্ট এবং ৬৭ জন সহকারী অফিসার কেন্দ্রগুলোতে উপস্থিত থাকবেন, যারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। বিশ্ববিদ্যালয়ের ১২টি গেটে এক হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবেন। ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তার জন্য আনসার মোতায়েন করা হবে।
দুই হলে হবে না হল সংসদের ভোট
হল সংসদ নির্বাচনে বেগম সুফিয়া কামাল হল ও নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে সব প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন। এই দুই হলে শুধু কেন্দ্রীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট হবে। বেগম সুফিয়া কামাল হলে ১৫ পদের ১০টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় প্রার্থীরা জয়ী হয়েছেন, বাকি পাঁচ পদ শূন্য রয়েছে। নওয়াব ফয়জুন্নেছা হলে ১৫ পদের ছয়টিতে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন প্রার্থীরা, বাকি নয়টি পদ শূন্য রয়েছে।
প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক
এদিকে নির্বাচনের আগে প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে কেন্দ্রীয় ও হল সংসদের প্রার্থীদের ডোপ টেস্ট করা হয়। কেন্দ্রীয় সংসদের ১৬৩ জন ও হল সংসদের ৪০৩ জন পরীক্ষার নমুনা দিয়েছেন। বাধ্যতামূলক করা হলেও ৫৬ প্রার্থী নমুনা দেননি।