সাতক্ষীরা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা জেলার সাত শিক্ষার্থী জয়ী হয়েছেন। এবারের নির্বাচনে অন্যতম চমক হয়ে উঠেছেন তারা। তাদের এই জয়কে অনেকেই তুলনা করছেন সাত রঙের সমাহারের সঙ্গে। কেউ সাহিত্যচর্চায়, কেউ ক্রীড়াঙ্গনে, কেউ নারী অধিকার বা একাডেমিক উন্নয়নের অঙ্গনে—তাদের প্রতিশ্রুতি ও অঙ্গীকার যেন মিলেমিশে তৈরি করছে নতুন নেতৃত্বের ছবি। কলারোয়া, কালিগঞ্জ, তালা ও সদর উপজেলার শিক্ষার্থীরা ভিন্ন ভিন্ন পদে বিজয়ী হয়ে শুধু নিজেদের পরিবার নয়, সমগ্র সাতক্ষীরার নাম উজ্জ্বল করেছেন।
তাদের জয়কে স্বাগত জানিয়ে গ্রামের মানুষজন আনন্দ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ বলেছেন, প্রান্তিক জেলা থেকে উঠে এসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডাকসুর নেতৃত্বে জায়গা করে নেওয়া সত্যিই অনুপ্রেরণার। নির্বাচিতরা জানিয়েছেন, তারা শিক্ষার্থীদের অধিকার, কল্যাণ ও সাংস্কৃতিক বিকাশে কাজ করবেন।
বিজয়ী সাতক্ষীরার সাত শিক্ষার্থী হলেন: কলারোয়া উপজেলার ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আহসান হাবীব ইমরোজ। তিনি শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদের ভাইস-প্রেসিডেন্ট (ভিপি) পদে ৭৮৩ ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, আমি শিক্ষার্থীদের কল্যাণে নিরলসভাবে কাজ করে যাব।
কালিগঞ্জের ইমরান হোসেন বিজয় একাত্তর হল সংসদের অ্যাসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি (এজিএস) নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি সবার সহযোগিতায় ছাত্রদের স্বার্থকে সর্বাগ্রে রাখব প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
তালা উপজেলার খেশরা ইউনিয়নের দলুয়ার মেয়ে দীপিকা সানা, আইন বিভাগের ছাত্রী, শামসুন্নাহার হল সংসদের কার্যকরী সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘নারী শিক্ষার্থীদের অধিকার ও কল্যাণে কাজ করার অঙ্গীকার করছি।’
একই উপজেলার রহিমাবাদের তাসনিম রুবায়েত, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের শিক্ষার্থী, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল সংসদের কার্যকরী সদস্য হয়েছেন। তার প্রতিশ্রুতি, শিক্ষার্থীদের একাডেমিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নে পাশে থাকতে চাই।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মামুন সলিমুল্লাহ মুসলিম হল সংসদে সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিকাশে ভূমিকা রাখবেন বলে জানিয়েছেন।
এদিকে কালিগঞ্জ উপজেলার সন্তান ও দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী খাদিজা পারভিন রোকেয়া হল সংসদে সদস্য পদে সর্বোচ্চ ১৪’শর অধিক ভেটে জয়ী হয়েছেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি ছাত্রী যেন সমান সুযোগ পায়, সেজন্য কাজ করব।
অন্যদিকে, কালিগঞ্জের মহৎপুরের অভিজিৎ দত্ত, ট্যুরিজম এন্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী, জগন্নাথ হল সংসদের অভ্যন্তরীণ ক্রীড়া সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি বলেন, ‘খেলাধুলা ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশে ভূমিকা রাখব।’
এই সাতজনের জয় সংবাদে সাতক্ষীরার বিভিন্ন গ্রামে উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে। কলারোয়া, কালিগঞ্জ, তালা ও সদরের গ্রামীণ জনপদে আত্মীয়-স্বজন, শিক্ষক ও প্রতিবেশীরা অভিনন্দন জানাতে ছুটে আসছেন। চায়ের দোকানে চলছে আলোচনা—আমাদের ছেলেমেয়েরা ডাকসুতে জয়ী হয়েছে, এখন তারা দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য কাজ করবে।
নাহিদ হাসান নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমার সহপাঠীরা ঢাকসু নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করে বিজয়ী হয়েছে এতে আমি আনন্দিত। আমারা সাতক্ষীরার শিক্ষার্থীরা প্রমাণ করতে পেরেছি প্রান্তিক জেলা থেকেও নেতৃত্ব তৈরি হয়। সাহিত্য থেকে ক্রীড়া, নারী অধিকার থেকে একাডেমিক উন্নয়ন—সব ক্ষেত্রে তারা ক্যাম্পাসকে এগিয়ে নেবেন।