রাজবাড়ী: একটা সময় মানুষের আবেগ ও অনুভূতির সঙ্গে চিঠি ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল। কিন্তু প্রযুক্তির প্রসারে এখন আর ডাকপিয়নের বাইসাইকেলের বেল শোনা যায় না। মোবাইল, কম্পিউটার ও এআই-এর এই যুগে ফেসবুকের মতো মাধ্যমগুলো চিঠির স্থান দখল করেছে।
প্রযুক্তির এই বিপ্লব যোগাযোগের গতি বাড়ালেও চিঠির সেই আবেগপূর্ণ আবেদনকে ম্লান করে দিয়েছে। এখন হাতের স্পর্শ বা কাগজের ঘ্রাণের মতো ব্যক্তিগত অনুভূতিগুলো হারিয়ে গেছে। হারিয়ে যাওয়া চিঠি লেখার ঐতিহ্য নিয়ে রাজবাড়ীতে ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় রাজবাড়ী জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘চিঠি দিও’ নামের ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এসময় মঞ্চের সামনে রাখা ছিল ডাকবাক্স, ডাকপিয়নের বাইসাইকেল এবং ব্যাগভর্তি চিঠি।
রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদ এ আয়োজন করে। আয়োজনে ছিল চিঠি নিয়ে গান, কবিতা, স্মৃতিচারণ ও চিঠি পাঠ।
অনুষ্ঠানে চিঠি নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এই আয়োজনটি যেন প্রযুক্তির ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া চিঠি লেখার ঐতিহ্যকে নতুন করে ফিরিয়ে এনেছিল।
রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদের সভাপতি নাসিম শফির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে স্মৃতিচারণ করেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজবাড়ী-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম।
আলী নেওয়াজ মাহমুদ খৈয়ম তার বক্তব্যে বলেন, ‘মানুষের আবেগ ও অনুভূতির সঙ্গে চিঠি ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। একটা সময় চিঠিই ছিল যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। কিন্তু প্রযুক্তির প্রসারের কারণে চিঠির কদর কমেছে। মোবাইল ও ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম চিঠির স্থান দখল করে নিয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই পরিবর্তনের ফলে এখন আর ডাকপিয়নের বাইসাইকেলের বেল শোনা যায় না। মানুষের চিন্তাভাবনা ও মনের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। একসময় একটি চিঠি পৌঁছাতে অনেক দিন সময় লাগত, সেই চিঠি পাওয়ার জন্য অপেক্ষার অনুভূতি ছিল অন্যরকম। এখন আর ডাকবাক্স দেখা যায় না।’
নিজের শৈশবের স্মৃতিচারণ করে তিনি বলেন, সে সময় আমি নিজেই নিজের নামে চিঠি লিখতাম। সেই চিঠি নিয়ে ডাকপিয়ন বাইসাইকেলে করে এসে ‘খৈয়ম’ নাম ধরে খুঁজে বেড়াতেন, তখন এক অন্যরকম আনন্দ পেতাম। এরপর আমারও অনেক চিঠি এসেছে। সেই চিঠি গুলো আমার স্ত্রী আমাকে দিয়েছে। আমিও তাকে দিতাম চিঠি। সেই চিঠি এখনো বের করে মাঝে মাঝে পড়ি। যা স্মৃতির পাতায় এক আবেগঘন অনুভূতি জাগিয়ে তোলে।’
আয়োজকেরা বলেন, একসময় চিঠিই ছিল মানুষের আবেগ ও অনুভূতির প্রধান মাধ্যম। প্রযুক্তির প্রসারের ফলে চিঠির কদর কমে যাওয়ায়, এর ইতিহাস ও ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে তারা এই ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন।
রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক খোকন মাহমুদের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে চিঠি নিয়ে স্মৃতিচারণ করেন- ফরিদপুর সাহিত্য পরিষদের সভাপতি আলতাফ হোসেন, সম্পাদক মফিজ ইমাম মিলন, অ্যাডভোকেট দেবাহুতী চক্রবর্তী, রাজবাড়ী সাহিত্য পরিষদের সহ-সভাপতি চৌধুরী আহসানুল করিম হিটু, সাহিত্য পরিষদের সহ-সভাপতি ও সাবেক জেলা শিক্ষা অফিসার আজিজা খানম, ডা. আবুল হোসেন কলেজের সহকারী অধ্যাপক সানজিদা আক্তার ও নুরুল হক আলম প্রমুখ।