পাবনা: যে বাড়িতে কয়েক মাস আগে আনন্দ-উৎসবের প্রস্তুতি ছিল, আজ সেই বাড়ি নিস্তব্ধ। চারদিকে শোকের ছায়া। পাবনার মেধাবী কন্যা ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জান্নাতুল ফেরদৌস মৌমিতা চলে গেছেন না ফেরার দেশে। মাত্র ৩০ বছরের জীবনের সব রঙিন স্বপ্ন থেমে গেল হঠাৎ করেই।
মৃত্যুর আগ মুহূর্তে বাবাকে পাঠানো হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ যেন এখন অসহ্য যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে পরিবারের কাছে। পাবনার বিশিষ্ট সাংবাদিক ও শিক্ষাবিদ রুমি খন্দকারের একমাত্র মেয়ে মৌমিতা লিখেছিলেন—“বাবা, আমি ভোট গণনার জন্য যাচ্ছি।” এই ছিল তাঁর বাবাকে জানানো শেষ বার্তা।
১৯৯৫ সালে জন্ম নেওয়া মৌমিতা ছোটবেলা থেকেই ছিলেন মেধাবী। পাবনা সরকারি বালিকা বিদ্যালয় থেকে ২০০৯ সালে এসএসসি, পরে পাবনা মহিলা কলেজ থেকে ২০১১ সালে গোল্ডেন জিপিএ-৫ অর্জন করেন। উচ্চশিক্ষার জন্য ভর্তি হন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে তিনি অনার্স ও মাস্টার্স শেষ করেন। শিক্ষার প্রতি তাঁর একাগ্রতা ও শিল্পপ্রেমের কারণে ২০২১ সালে চারুকলা বিভাগে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে যোগ দেন।
শিক্ষার্থীরা তাকে শুধু শিক্ষক নয়, অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখতেন। সহকর্মীদের কাছে তিনি ছিলেন প্রাণবন্ত ও সৃজনশীল।
পারিবারিকভাবে জানুয়ারি মাসে মৌমিতার বিয়ে রেজিস্ট্রি হয়েছিল। পরিবারের স্বপ্ন ছিল জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে মেয়েকে শ্বশুরবাড়ি পাঠানো। কিন্তু সেই স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেল। স্বজনরা বলছেন, “যে সংসার জীবনের আনন্দ শুরু হওয়ার কথা ছিল, সেখানে নেমে এলো মৃত্যুর শোক।”
বাবা রুমি খন্দকার ভাঙা গলায় জানান, “মৃত্যুর আগ মুহূর্তে মেসেজ দিয়েছিল আমাকে। রাতে শিক্ষক কোয়ার্টারে ফিরলেও সকালে ভোট গণনার কক্ষে যাওয়ার পথে দরজার সামনেই পড়ে যায়। এরপর আর কোনো সাড়া দেয়নি। গতকাল রাতে ওর সঙ্গে কথা হয়েছিল। তখন খুব খুশি ছিল নির্বাচন নিয়ে।”
মৌমিতার মরদেহ পাবনার পৌছানোর পর বাদ এশা পৌর এলাকার জেলাপাড়া মসজিদে জানাজা শেষে আরিফপুর কবরস্থানে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। সহকর্মী, শিক্ষার্থী, প্রতিবেশী—সবার মুখে একই কথা, “এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না।”
শিক্ষার্থীরা জানান, চারুকলার শিক্ষার্থী হিসেবে যিনি রঙে-তুলিতে আঁকতেন স্বপ্নের ছবি, সেই মৌমিতা ম্যাম নিজের জীবনের ছবিটি শেষ করার আগেই চলে গেলেন। রেখে গেলেন অপূর্ণ স্বপ্ন, ভেঙে যাওয়া আয়োজন আর শোকাহত প্রিয়জন।