Saturday 13 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সাংবাদিকদের বেতন নূন্যতম ৩৫ হাজার টাকা হওয়া উচিত: প্রেস সচিব

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট 
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২০:৩২ | আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২১:২২

‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

ঢাকা: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেছেন, বিগত ১৫ বছরে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) সাংবাদিক নেতাদের ছেলে-মেয়েদের ডাম্পিং স্টেশনে পরিণত হয়েছিল। যাদের সন্তানরা কিছু করতে পারতো না, বাসসে চাকরি দেওয়া হয়েছে। একজন বিচারকের নেতৃত্বে স্বাধীন তদন্ত করে এই অনিয়মের বিচার করা উচিত।

তিনি আরও বলেন, ‘তবে যোগ্যরা যেন বঞ্চিত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। শুধুমাত্র সুপারিশে যেসব অযোগ্যরা সেখানে সরকারি সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া সাংবাদিকদের বেতন নূন্যতম ৩৫ হাজার টাকা হওয়া উচিত।’

শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি কার্যালয়ের শফিকুল কবির মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা ও করণীয়’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে শফিকুল আলম এ কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

শফিকুল আলম বলেন, ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে অনেক ভালো সুপারিশ আছে। আর যেসব জায়গায় অসংগতি রয়েছে সেগুলোর সমালোচনা করা প্রয়োজন। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের যে ধারা তুলে দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে তা থাকা প্রয়োজন। কেননা ধর্মীয় কারণে অনেক ভায়োলেন্স তৈরি হয়। এসব ভায়োলেন্স বন্ধ করার জন্য ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের শাস্তির বিধানটা থাকা প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘নো ওয়েজ বোর্ড নো মিডিয়া নীতির সঙ্গে আমি একমত। এটি বাস্তবায়ন করার প্রয়োজন। যারা সম্পাদক ও প্রকাশক হবেন তাদেরকে ইউনিয়ন থেকে পদত্যাগ করা উচিত। কারণ এটি নীতি বিরুদ্ধ। সাংবাদিকদের অবশ্যই সার্টিফিকেশন থাকতে হবে। কারণ অপসাংবাদিকতার কারণে দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় পড়লে এর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মিডিয়া মালিককে নিতে হবে। প্রয়োজনে মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে। তিনি প্রতিবাদকে মব হিসেবে না দেখার জন্য সকলকে অনুরোধ করেছেন। মিডিয়া লাইসেন্স নিতে হলে অনলাইনের জন্য ১০ থেকে ১৫ কোটি, পত্রিকার জন্য ২০ কোটি ও টিভির জন্য ২০-২৫ কোটি টাকা সিকিউরিটি হিসেবে সরকারের কাছে জমা রাখতে হবে। যখন হাউজগুলো ভালনারেবল হবে তখন সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য এগুলো কাজে আসবে।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতীয় টেলিভিশন, রেডিও এবং সংবাদ সংস্থা এক প্রতিষ্ঠানের পরিণত করা হয়েছে। কমিশনের এই সুপারিশও ভালো। কারণ এতে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আরও বেশি গ্রহণযোগ্য এবং মানসম্পন্ন খবর প্রকাশ ও প্রচার করা সম্ভব হবে। সংবাদ সংস্থাকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া সম্ভব হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘নতুন সাইবার সিকিউরিটি আইনের বিভিন্ন ধারা বেশ আধুনিক।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইউটিউব ভিত্তিক গণমাধ্যমে আরও দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। কারণ পৃথিবীর কোনো দেশেই সেনাবাহিনীর মতো স্পর্শকাতর ইস্যুতে ২০ মিনিটের ভিডিও প্রকাশ করা হয় না। অথচ বাংলাদেশে এগুলো প্রতিনিয়তই ঘটছে। বিশেষ করে মাইলস্টোন কলেজের শিক্ষার্থী নিখোঁজের গুজবটি মারাত্মকভাবে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।’

প্রেস সচিব আরও বলেন, ‘ভবিষ্যতে কোনো সাংবাদিক নেতা যখন সম্পাদক হবে তখন সাংবাদিক সংগঠনের পদ থেকে পদত্যাগ করতে হবে। কারণ যখন কোনো নেতা মালিক হবে তখন আর তিনি সাংবাদিকদের স্বার্থ দেখেন না। সেই কারণ সম্পাদক বা মালিকদের নেতৃত্বে না থাকাই উচিত।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিকরা কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতায় পড়লে এর দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট মিডিয়া মালিককে নিতে হবে। প্রয়োজনে মালিকের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের ব্যবস্থা রাখা যেতে পারে।’

তিনি প্রতিবাদকে মব হিসেবে না দেখার জন্য সকলকে অনুরোধ করেছেন। তিনি বলেন, ‘মিডিয়া লাইসেন্স নিতে হলে অনলাইনের জন্য ১০ থেকে ১৫ কোটি, পত্রিকার জন্য ২০ কোটি ও টিভির জন্য ২০-২৫ কোটি টাকা সিকিউরিটি হিসেবে সরকারের কাছে জমা রাখতে হবে। যখন হাউজগুলো ভালনারেবল হবে তখন সাংবাদিকদের বেতন-ভাতা দেওয়ার জন্য এগুলো কাজে আসবে।’

সভাপতির বক্তব্যে আবু সালেহ আকন বলেন, ‘আমাদের অধিকার আমাদের আদায় করে নিতে হবে। বিপ্লবের পরে মিডিয়ার কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন হয়নি। সাংবাদিকরা এখনো মবের শিকার হচ্ছে। ডিএফপির অনিয়মের কারণে সমালোচনার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কিন্তু ব্যবস্থা নিচ্ছে না সরকার।’

এম আবদুল্লাহ বলেন, ‘ইউনিয়নের পাশাপাশি ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, প্রেস ক্লাব ও অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে সরকারের স্বীকৃতি দেওয়া দরকার। কারণ সারাদেশে ইউনিয়নের শাখা নেই। প্রবীণ সাংবাদিকদের ভাতার আওতায় আনতে হবে।’

সেখানে ওবায়দুর রহমান শাহীন বলেন, ‘গণমাধ্যম কমিশন মূলত বিভিন্ন জেলায় পিকনিক করেছে। স্বচ্ছতা ও সত্যতার অনেক ঘাটতি রয়েছে তাদের রিপোর্টে। এই রিপোর্ট রিভিউ হওয়া দরকার।’

মাইনুল হাসান সোহেল বলেন, ‘যারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত এবং পদধারী তারা সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতে নৈতিকভাবেই পারেন না। সাংবাদিকদের নূন্যতম বেতন ৩৫ হাজার টাকা, সাংবাদিকতাকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালু করা দরকার।’

সাখাওয়াত হোসেন বাদশা বলেন, ‘গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনসহ সরকারের মিডিয়াবিষয়ক বিভিন্ন কমিটিতে ডিআরইউ’র প্রতিনিধি না থাকলে সত্যিকারের গণমাধ্যম সংস্কার হবে না। সাংবাদিক সুরক্ষা আইন যথাযথ হওয়া দরকার।’

রফিকুল ইসলাম আজাদ বলেন, ‘সাংবাদিকদের চিকিৎসার জন্য আলাদা হাসপাতাল বানানো জরুরি।’

মসিউর রহমান খান বলেন, ‘মিডিয়ার সংখ্যা বাড়লেও কোনো সরকারই সাংবাদিকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিতে কোনো কাজ করে নাই। মালিকরা মিডিয়ায় বিনিয়োগ করে তাদের পুঁজির নিরাপত্তার জন্য।’

লোটন একরাম বলেন, ‘টিভি এবং অনলাইনকে ওয়েজবোর্ডের নীতিমালায় আনা দরকার। পত্রিকার সার্কুলেশনের মত টিভির টিআরপিও হাস্যকর।’

হারুন জামিল বলেন, ‘সাংবাদিকদের সপ্তাহে দুই দিন ছুটি দেওয়া খুবই জরুরি।’

গাযী আনোয়ার বলেন, ‘কমিশনের রিপোর্টে আদিবাসী অথবা উপজাতি কোনো শব্দই আসা উচিত নয়। সবাই বাংলাদেশি। আর সাংবাদিকদের হত্যা-নির্যাতনের বিচারের জন্য আলাদা কমিশন গঠন করতে হবে।’

দিদারুল আলম বলেন, ‘সাংবাদিকদের আয়কর মালিকদের দেওয়ার বিষয়ে আপিল বিভাগের রায় আছে। এটি বাস্তবায়ন করার দরকার। তাছাড়া মফস্বল সাংবাদিকদের বেতন কাঠামো বিষয়ে সুপারিশে বিস্তারিত আসা দরকার।’

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশের সদস্য সচিব মো. মিয়া হোসেন। মিয়া হোসেন তার বক্তব্যে বলেন, ‘কমিটির সুপারিশের ১৩ ধারাতে সাংবাদিক নির্যাতন ধারাকে জামিনযোগ্য করা হয়েছে। অথচ বিদ্যমান দণ্ডবিধিতে সাংবাদিক নির্যাতনের ধারা অজামিনযোগ্য রয়েছে। এর মাধ্যমে অপরাধীকে ছাড় দেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যার কারণে অপরাধীরা আরও নির্যাতনে উৎসাহিত হবে। তিনি আরও বেশ কিছু ধারা ও উপধারায় সীমাবদ্ধতার কথা বলেন।’

সারাবাংলা/একে/এইচআই

নূন্যতম ৩৫ হাজার টাকা প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর