চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম বন্দর বিদেশিদের কাছে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ না করলে অন্তর্বর্তী সরকারের মুখোশ খুলে দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ার করেছেন শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ)। এ প্রক্রিয়ায় যেসব রাজনৈতিক দল সমর্থন দিচ্ছে জনগণের কাছে তাদেরও মুখোশ খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্কপ নেতারা।
চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) ও লালদিয়ার চর বিদেশি প্রতিষ্ঠানকে ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে ‘পদযাত্রা ও সমাবেশ’ কর্মসূচিতে তারা এসব কথা বলেন।
রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে নগরীর বারিক বিল্ডিং মোড় থেকে পদযাত্রা করে বন্দর ভবন গেইটে যান হাজারো শ্রমিক-কর্মচারী। পদযাত্রা শেষে সেখানে এক প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে স্কপ নেতা ও বিভাগীয় শ্রমিক দলের সভাপতি নাজিম উদ্দিন বলেন, ‘আমাদের চট্টগ্রামে একটা কথা আছে- জান দেব, তবু জমির আইল দেব না। আমরাও বলতে চাই- জান দেব, তবু বন্দর বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে দেব না। আমরা বারবার প্রতিবাদ করছি। বন্দর ইজারা দেওয়ার প্রক্রিয়া বন্ধ করার দাবি জানাচ্ছি। বন্দর বিদেশিরা নিয়ে আমরা শ্রমিক-কর্মচারীদের ওপর জুলুম করবে, চাকরি কেড়ে নেবে, এটা আমরা হতে দেব না।’
সরকারকে উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, ‘এখনও সময় আছে। এসব বন্ধ করেন। বন্দর ইজারা দেওয়ার ম্যান্ডেট আপনাদের কে দিয়েছে ? আওয়ামী লীগের কাজ আপনারা বাস্তবায়ন করছেন কেন? আপনাদের স্বার্থ কি? আমরা সারাদেশে মানুষের কাছে যাবো। পথসভা করব, গণসংযোগ করব। এরপরও আপনারা ষড়যন্ত্র বন্ধ না করলে সংবাদ সম্মেলন করে আপনাদের মুখোশ খুলে দেব।’
‘আরেকটি বিষয় বলতে চাই, যেসব রাজনৈতিক দল সরকারকে বন্দর ইজারা দিতে সাপোর্ট দিচ্ছে, তাদের নেতাদের মুখোশও আমরা জনগণের সামনে খুলে দেব। আমরাও সরকারকে সাপোর্ট করি, কিন্তু ভালো কাজের জন্য। বন্দরকে বিদেশিদের হাতে দেবে, এটা আমরা কোনোভাবেই সাপোর্ট করতে পারি না, এটা আমরা রুখে দেব।’
ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র (টিইউসি), চট্টগ্রাম জেলার সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য তপন দত্ত বলেন, ‘নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল গোপন চুক্তির মাধ্যমে বিদেশি কোম্পানির হাতে তুলে দেওয়ার পাঁয়তারা জাতীয় স্বার্থবিরোধী, শ্রমিকের স্বার্থবিরোধী এক গভীর ষড়যন্ত্র। লালদিয়ার চর ইজারা দেওয়ারও ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এসব সিদ্ধান্ত দেশের বন্দরনির্ভর অর্থনীতিকে বিপন্ন করবে এবং হাজার হাজার শ্রমিক-কর্মচারীর জীবন-জীবিকাকে ঝুঁকির মুখে ফেলবে।’
‘অবিলম্বে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র বাতিল করতে হবে। অন্যথায় দেশব্যাপী শ্রমিকদের নিয়ে দুর্বার আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে। জাতীয় সম্পদ ও শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষায় কোনো আপস করা হবে না।’
সমাবেশ থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে পথসভা, শ্রমিক কনভেনশনর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম স্কপের যুগ্ম আহ্বায়ক রিজওয়ানুর রহমান খানের সঞ্চালনায় সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন- শ্রমিক দলের চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক শেখ নুরুল্লাহ বাহার, ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সভাপতি খোরশেদুল আলম, বিএলএফ চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক নুরুল আবসার ভূঁইয়া, বাংলাদেশ জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক জাহিদ উদ্দিন শাহিন।