কুষ্টিয়া : লোকসংগীতের কিংবদন্তি, লালনকন্যাখ্যাত শিল্পী ফরিদা পারভীনকে তার শেষ ইচ্ছা অনুযায়ী বাবা-মায়ের কবরেই দাফন করা হয়েছে। রোববার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাত ৯টার দিকে কুষ্টিয়া পৌর কেন্দ্রীয় গোরস্থানে জানাজা শেষে তাকে সমাহিত করা হয়।
রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফরিদা পারভীনের মরদেহ কুষ্টিয়ায় পৌঁছালে স্বজন, বন্ধু, ভক্ত ও অনুসারীরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। শ্রদ্ধা ও আবেগঘন পরিবেশে জেলা প্রশাসনসহ সর্বস্তরের মানুষ তাকে শেষ বিদায় জানান।
এর আগে, আজ বেলা ১২টায় ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষ ফরিদা পারভীনকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। বৃষ্টি মাথায় নিয়েও অগুনতি মানুষ প্রিয় শিল্পীকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে ছুটে আসেন। সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় মসজিদে বাদ জোহর তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।
শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা ১৫ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৭৩ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফরিদা পারভীন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন।
কুষ্টিয়া পৌর গোরস্থানের প্রবীণ খাদেম নূর ইসলাম বলেন, “১৯৯৬ সালে ফরিদার বাবা দেলোয়ার হোসেনের কবর আমিই খুঁড়েছিলাম। পরে তার মা রৌফা বেগমকেও একই কবরে দাফন করা হয়। আজ তাদের পাশেই ফরিদাকে সমাহিত করা হলো।”
১৯৫৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়ায় জন্মগ্রহণ করেন ফরিদা পারভীন। বাবার চাকরির সুবাদে ছোটবেলা থেকেই তিনি কুষ্টিয়ায় বেড়ে ওঠেন। মাত্র ১৪ বছর বয়সে, ১৯৬৮ সালে তার পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয়। দীর্ঘ ৫৫ বছরের সংগীতযাত্রায় তিনি লালনগীতিকে এক নতুন রূপ ও নিজস্ব ঘরানা উপহার দেন।
তার কণ্ঠে ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি’, ‘বাড়ির কাছে আরশিনগর’, ‘তুমি কার কে কার তুমি’-সহ অসংখ্য লালনগীতি পেয়েছে অনন্য ব্যাখ্যা ও দার্শনিক বয়ান। শ্রোতাদের ভালোবাসায় তিনি হয়ে উঠেছিলেন সত্যিকারের ‘লালনকন্যা’।