ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য কেরালায় ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ রোগ প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিংগোএনসেফালাইটিস (পিএএম)। এখন পর্যন্ত এতে আক্রান্ত হয়েছেন ৬৯ জন, এর মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৯ জন। রোগটি সাধারণভাবে পরিচিত ‘মগজ-খেকো অ্যামিবা’ নামে। নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি নামের এই অণুজীব মানুষের মস্তিষ্কে ভয়াবহ সংক্রমণ ঘটায়।
স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের ভাষায়, এটি এখন কেরালার জন্য এক মহাজনস্বাস্থ্য সংকট। আগের বছরগুলোতে যেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা, এবার তা এক লাফে বেড়ে গেছে কয়েক গুণ। আক্রান্তদের মধ্যে রয়েছেন কয়েক মাসের শিশু থেকে শুরু করে প্রবীণ নাগরিকও।
রোগের প্রকৃতি ও বিস্তার
নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি নামের এক অণুজীব এই রোগের কারণ। এটি মানুষের মস্তিষ্কে প্রবেশ করে স্নায়ুতন্ত্র আক্রমণ করে এবং মস্তিষ্কের টিস্যু ধ্বংস করে ফেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পানিতে খেলার সময় বা সাঁতার কাটতে গিয়ে নাক দিয়ে এই জীবাণু প্রবেশ করে। তবে পান করার মাধ্যমে সংক্রমণ ঘটে না।
২০১৬ সালে প্রথমবার কেরালায় এই রোগ শনাক্ত হয়। তখন কেবল কয়েকটি কেস ছিল। কিন্তু ২০২৩ সালে হঠাৎ করে কেস বেড়ে যায় ৩৬ জনে এবং মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়ায় ৯–এ। চলতি বছর মৃত্যুর হার প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্যজুড়ে।
লক্ষণ কী কী?
এই রোগের মৃত্যুহার অত্যন্ত বেশি, কারণ সময়মতো শনাক্ত করা কঠিন। প্রাথমিক লক্ষণগুলো ব্যাকটেরিয়াজনিত মেনিনজাইটিসের মতো, যেমন- তীব্র মাথাব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব ও বমি। সাধারণত ১ থেকে ৯ দিনের মধ্যে উপসর্গ দেখা দেয় ও কয়েক ঘণ্টা থেকে এক-দুই দিনের মধ্যে মারাত্মক পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মস্তিষ্কে প্রবেশের পর নিগ্লেরিয়া ফাউলেরি খুব দ্রুত প্রতিরোধব্যবস্থা অকার্যকর করে ফেলে। এতে কয়েক দিনের মধ্যেই রোগীর মৃত্যু ঘটে।
চিকিৎসা কীভাবে হয়?
গত ছয় দশকে পিএএম থেকে বেঁচে যাওয়া রোগীদের প্রায় সবাইকে প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্ত করা হয়েছিল। নথিতে বলা হয়েছে, দ্রুত শনাক্তকরণ ও অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধের সমন্বিত প্রয়োগ প্রাণরক্ষাকারী হতে পারে। তবে রোগটির বিরলতা, দ্রুত মৃত্যুঝুঁকি ও দেরিতে শনাক্তকরণের কারণে কার্যকর ওষুধের পরীক্ষা-নিরীক্ষা কঠিন হয়ে উঠছে।
মন্ত্রী বীণা জর্জ জোর দিয়ে বলেছেন, প্রাথমিক শনাক্তকরণই এই রোগ থেকে বাঁচার মূল চাবিকাঠি।
কীভাবে সুরক্ষা পাওয়া যাবে?
কেরালার স্বাস্থ্য দপ্তর জানিয়েছে, অপরিশোধিত বা স্থির পানিতে যেমন- পুকুর, হ্রদ, জলাশয়ে সাঁতার বা গোসল এড়িয়ে চলতে হবে। যারা এ ধরনের পানিতে নামবেন, তাদের অবশ্যই নাকের ক্লিপ ব্যবহার করতে হবে। কূপ ও পানির ট্যাংক নিয়মিত পরিষ্কার ও ক্লোরিন ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
কেরালা স্বাস্থ্য দপ্তর জাতীয় রোগ নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের সঙ্গে যৌথভাবে সম্ভাব্য সংক্রমণ উৎস শনাক্তে পরিবেশগত নমুনা সংগ্রহ করছে। একই সঙ্গে জনগণকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, যদি কারও স্থির পানির সংস্পর্শের পর এ ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।