Friday 19 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মৌসুম প্রায় শেষ—পাতে জোটেনি ইলিশ, সবজির উত্তাপ কমছে

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:১১ | আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:১৩

ইলিশের বাজার। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: ইলিশের মৌসুম শেষ হয়ে আসছে। কিন্তু গরীব-মধ্যবিত্তের পাতে জোটেনি ইলিশ। চড়া দামের কারণে ক্রেতা না মেলায় বাজার থেকেই ‘আউট’ হয়ে গেছে বড়-মাঝারি আকারের ইলিশ।

এদিকে বাজারে সবজির আগুনঝরা দামের উত্তাপ হালকা কমতে শুরু করেছে, যদিও তা অব্যাহত থাকবে কী না, তা নিয়ে সন্দিহানে খোদ খুচরা বিক্রেতারা। মুরগির দাম আরও বেড়েছে। মাছ, গরু-ছাগলের মাংস, চাল, মুদিপণ্য অপরিবর্তিত আছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম নগরীর কাজীর দেউড়ি ও দুই নম্বর গেইটে কর্ণফুলী বাজার ঘুরে এ চিত্র দেখা গেছে।

সাধারণত বৈশাখ থেকে আশ্বিন মাসকে ইলিশ আহরণের মৌসুম হিসেবে ধরা হয়। আষাঢ় থেকে আশ্বিন এ সময়ে সবচেয়ে বেশি ইলিশ ধরা পড়ে, যাকে ভরা মৌসুম হিসেবে বলে থাকেন জেলেরা। এ হিসেবে ইলিশের মৌসুম শেষ সময়ে এসে পৌঁছেছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবছরের মতো এবারও বৈশাখের শুরু অর্থাৎ ১৪ এপ্রিল মধ্যরাত থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮দিন বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়। নিষেধাজ্ঞা শেষে ১২ জুন থেকে সাগরে আবার মাছ আহরণ শুরু করেন জেলেরা। আগামী অক্টোবর মাসে ইলিশের প্রজনন মৌসুম শুরু হবে, তখন আবারও সাগরে মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা আসবে।

ছবি: সারাবাংলা

গত তিনমাস ধরে বিপুল পরিমাণ ইলিশ আহরণ করেন জেলেরা। কিন্তু এবার দাম গরীব-মধ্যবিত্তের নাগালেই আসেনি। উচ্চবিত্তদেরও বাজারে গিয়ে ইলিশ কেনার আগে ভাবতে হয়েছে।

বৈচিত্র্যময় রান্নার জন্য চট্টগ্রামে আলোচিত কাজীর দেউড়ির ‘রোদেলা বিকেল’ রেস্তোঁরার ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ শামসুদ্দিন সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা সাধারণত বড় ইলিশ কিনি। এক কেজির চেয়ে বেশি ওজনের ইলিশ সুস্বাদু হয়, কাস্টমারের চাহিদা বেশি থাকে। এবার শুরু থেকেই ইলিশের দাম বেশি। ২২০০ থেকে ৩৫০০ টাকা দামে আমাদের ইলিশ কিনতে হয়েছে। এক কেজিতে সর্বোচ্চ পাঁচ পিস করা যায়। এক পিস রান্না করা ইলিশ মাছ বিক্রি করে লাভ করতে হলে কমপক্ষে এক হাজার টাকা লাগবে। কিন্তু এত টাকা দিয়ে তো কাস্টমার খাচ্ছে না। এবার পুরো লোকসান হয়েছে।’

নগরীর কাজীর দেউড়ি বাজারে বড় আকারের ইলিশ মেলে। অন্যান্য বাজারের মধ্যে রিয়াজউদ্দিন বাজার, কর্ণফুলী বাজার, বকশিরহাট, সাবএরিয়া বাজারেও পরিমাণে কম হলেও কিছু বড় ইলিশ পাওয়া যায়। এর বাইরে অন্য কোনো বাজার কিংবা ভ্রাম্যমাণ দোকান থেকে গত এক সপ্তাহ ধরে বড় ইলিশ উধাও হয়ে গেছে। এসব বাজারে ছোট আকারের ইলিশ অর্থাৎ যেগুলো এক কেজিতে ৬-৭টি ধরে সেগুলো ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা আর এক কেজিতে ৪টি ধরে এমন ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৮০০ টাকা দরে।

কাজীর দেউড়ি বাজারে এক কেজি বা তার চেয়ে সামান্য বেশি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এখনো প্রতিকেজি ২২০০ টাকায়। দেড় থেকে দুই কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২৬০০ থেকে ২৮০০ টাকায়।

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউসেপ’র কর্মকর্তা দেবাশীষ সেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এবার ইলিশ মাছ বলতে গেলে পাতে জোটেনি। দুই হাজার, আড়াই হাজার টাকা দিয়ে ইলিশ কিনে খাবার সামর্থ্য নেই। একবার ৭০০-৮০০ টাকা দামের ইলিশগুলো এক কেজি কিনেছিলাম। সেগুলোর একেবারেই স্বাদ নেই, এমনকি ইলিশের ঘ্রাণটাও পাওয়া যায় না।’

বাজারে অন্যান্য মাছের মধ্যে লইট্যা ও ফাইস্যা ১৫০ থেকে ২০০ টাকা, পোয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, শাপলা পাতা মাছ ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, কোরাল ৬০০ থেকে ৯০০ টাকা, রুপচান্দা ৩৫০ থেকে ৭০০ টাকা, আইড় ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা, চিংড়ি (বাগদা ও গলদা) আকারভেদে ৬৫০ থেকে ১২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এছাড়া খাল-নদী ও চাষের মাছের মধ্যে রুই ও কাতলা বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকা, পাবদা ছোট আকারের ৪০০ টাকা, মাঝারি সাইজের ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, শিং ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা, টেংরা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, পুঁটি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, সরপুঁটি ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা, নাইলোটিকা ২২০ থেকে ২৮০ টাকা, কৈ ২০০ থেকে ২২০ টাকা এবং পাঙ্গাস, সিলভার কার্প মিলছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। ছোট চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭০০ থেকে ১২০০ টাকা দরে।

ডিম। ছবি: সারাবাংলা

বাজারে সোনালি মুরগির দাম বেড়েছে। গত সপ্তাহের চেয়ে কেজিতে অন্তঃত ৫০ টাকা বেড়ে সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩৫০ টাকায়। ব্রয়লার মুরগি প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ টাকা থেকে ১৭৫ টাকা দরে। পাকিস্তানি কক ৩৪০ থেকে ৩৫০ টাকা, দেশি মোরগ ৬৫০ টাকা এবং জাতভেদে প্রতি পিস হাঁস বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। অন্যান্য মাংসের মধ্যে গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৯৫০ টাকা, খাসি ও পাঁঠা ছাগলের মাংস ১২০০ থেকে ১২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ফার্মের মুরগির ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা, দেশি মুরগির ডিম ১৮০ টাকা ও হাঁসের ডিম ২৩০ টাকা ডজনপ্রতি বিক্রি হচ্ছে।

ছবি: সারাবাংলা

বাজারে বেগুন, কাঁকরোল, শিমসহ কয়েক পদের সবজির দাম কমেছে। বেগুন ১০০ থেকে ১২০ টাকা ছিল গত সপ্তাহে। এ সপ্তাহে ৮০-৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁকরোল, পটল ১০০ টাকা থেকে কমে ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙ্গা ১০০ টাকা থেকে ৬০-৭০ টাকা, বরবটিও ৬০-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতীয় টমেটো ১৬০ টাকা থেকে কমে ১২০ টাকায় এসেছে। শিম গত সপ্তাহে ২০০ থেকে ২৪০ টাকা ছিল। এ সপ্তাহে ১৬০-১৭০ টাকায় এসেছে। কচুরমুখী, লাউ, মূলা কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। কচুর লতি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। গাজর ১৬০ টাকা, হাইব্রিড শসা ৬০ টাকা, কাঁচা কলার হালি ৪০ টাকা, শালগম ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফুলকপি ও বাঁধাকপি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতিকেজি আলু মানভেদে ২৫ থেকে ৩০ টাকার মধ্যে বিক্রি হচ্ছে। আর মিষ্টিকুমড়োর দাম ৩০ থেকে ৩৫ টাকা। ধনেপাতা প্রতিকেজি ১৫০ টাকা আর শাকের মধ্যে কচুশাক ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া শাক ৫০ টাকা, পুঁইশাক ৪০ টাকা ও লালশাক ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কাঁচামরিচের দাম আবার বেড়ে ২০০ টাকায় পৌঁছেছে।

বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ছোট রসুন বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা আর বড় রসুন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা। ভারতের কেরালার আদা ১২০ টাকা, চীনের আদা ১৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

চালের দাম অপরিবর্তিত আছে। খুচরা দোকানে মিনিকেট চালের দাম কেজি প্রতি ৭৮ থেকে ৮৫ টাকা, আটাশ বালাম কেজি প্রতি ৭০ থেকে ৭৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা, স্বর্ণা মোটা চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, পাইজাম ৬২ থেকে ৬৫ টাকা, বাসমতী ৯৫ থেকে ১২০ টাকা, চিনিগুঁড়া প্যাকেট ১৩০ থেকে ১৫০ টাকা ও খোলা পোলাও চাল মানভেদে ১১০ থেকে ১২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

চালের দোকান। ছবি: সারাবাংলা

অন্যান্য মুদিপণ্যের মধ্যে বাজারে খোলা আটা বিক্রি হচ্ছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। প্যাকেটজাত আটার মধ্যে সেনা, ডায়মন্ড, ফ্রেশ, আফতাবসহ বিভিন্ন ব্র্যান্ডের আটা বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১১০ টাকায়। আর খোলা ময়দা ৫৫ টাকা, প্যাকেটজাত ময়দা ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বাজারে কেজিপ্রতি নেপালি মসুর বিক্রি হয়েছে ১৬০ টাকায়। আর মোটা দানার মসুর ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এছাড়া প্রতিকেজি খোলা সাদা চিনি ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, প্যাকেট চিনি ১২০ টাকা, লালচিনি ১১৫ টাকা, ছোট মুগডাল ১৩০ থেকে ১৪০ টাকা, খেসারি ডাল ১০০ টাকা, বুটের ডাল ১১০ টাকা, মাষকলাই ডাল ১৮০ টাকা, ডাবলি ৬০ টাকা, ছোলা ১০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯৫ টাকা, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেলের দাম ১৮০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২৫০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ৯০ টাকা, কাজু বাদাম ১ হাজার ৭০০ টাকা, পেস্তা বাদাম ২ হাজার ৭০০ টাকা, কাঠ বাদাম ১ হাজার ২২০ টাকা, কিশমিশ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা, দারুচিনি ৫২০ টাকা, লবঙ্গ ১ হাজার ৪০০ টাকা, কালো গোলমরিচ ১ হাজার ৩০০ টাকা, সাদা গোলমরিচ ১ হাজার ৬০০ টাকা, জিরা ৬০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।

সারাবাংলা/আরডি/এনজে

ইলিশ বাজারদর মৌসুম সবজি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর