ঢাকা: বাংলাদেশে সরকারি হিসাবে আর্থিক স্বচ্ছতা বাড়াতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিমালা অনুযায়ী বাজেট নথি প্রণয়ন, সরকারের আয়-ব্যয়ের পূর্ণাঙ্গ চিত্র বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করা, সরকারি ক্রয় চুক্তির তথ্য জনসমক্ষে আনা এবং সর্বোচ্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী স্বাধীনতা দিতে হবে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনের জন্য চুক্তি এবং লাইসেন্স প্রদানের তথ্যও প্রকাশ করতে হবে।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর কর্তৃক প্রকাশিত ‘অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা প্রতিবেদন ২০২৫’- এ এসব সুপারিশ ও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বাজেট নথির প্রাপ্যতা, পূর্ণতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং সরকারি চুক্তি ও লাইসেন্স প্রদানের প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং ২০১৪ সালের অর্থনৈতিক স্বচ্ছতা প্রতিবেদনে চিহ্নিত দেশ ও সংস্থাগুলো এবং গত এক বছরে ন্যূনতম আর্থিক স্বচ্ছতা মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ দেশগুলোকে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
প্রতিবেদনে বাংলাদেশের জন্য করণীয় আরও কিছু সুপারিশ করা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- বাজেটে নির্বাহী দফতরগুলোর ব্যয় খাত আলাদাভাবে উপস্থাপন করা; সব সম্পদ ও সময়োপযোগী পূর্ণাঙ্গ তথ্য বাজেট নথিতে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করা; অর্থবছর শেষে যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন প্রকাশ করা এবং নিরীক্ষা প্রতিবেদনে সুপারিশ-বিশ্লেষণ ও পূর্ণাঙ্গ বর্ণনা প্রকাশ করা।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বিগত সরকার তাদের নির্বাহী বাজেট প্রস্তাব ও অনুমোদিত বাজেট জনসমক্ষে প্রকাশ করেছিল, অনলাইনেও তা পাওয়া যেত। তবে অর্থবছর শেষে প্রতিবেদন নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ করা হয়নি। বাজেটের তথ্য সাধারণভাবে নির্ভরযোগ্য হলেও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নীতিমালা অনুযায়ী বাজেট নথি তৈরি করা হয়নি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পর্যালোচনাকালীন সময়ে বাংলাদেশে অরাজনৈতিক অন্তর্বর্তী সরকার আগের সরকারকে প্রতিস্থাপন করেছে। তারা আগের সরকারের বাজেট সুপারিশ ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছে। ঋণ সংক্রান্ত তথ্য জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। বাজেট নথিতে পরিকল্পিত আয় ও ব্যয়ের চিত্র ছিল, এর মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের আয়ও অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে নির্বাহী দফতরগুলোর ব্যয় আলাদা করে দেখানো হয়নি এবং পূর্ণাঙ্গ আয়-ব্যয়ের চিত্রও বাজেটে প্রতিফলিত হয়নি। যদিও বাজেট নথিতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানের বরাদ্দ ও আয়ের তথ্য অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার আর্থিক স্বচ্ছতা উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার শুরু করেছে- উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, তবে সরকার পরিবর্তনের কারণে দেশের সর্বোচ্চ নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান সরকারের হিসাব নিরীক্ষা করেনি, তবে সংক্ষেপে কিছু ফলাফল প্রকাশ করেছে, যেগুলো যুক্তিসঙ্গত সময়ের মধ্যে জনগণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। তবে ওই নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান আন্তর্জাতিক মান অনুসারে স্বাধীন নয়- বলে প্রতিবেদনে দাবি করা হয়।
প্রতিবেদনে প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলন সম্পর্কে বলা হয়, প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনের ক্ষেত্রে সব ধরনের ক্রয় প্রক্রিয়া পুরোপুরি উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। একই সঙ্গে আইন বা বিধির মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলনের জন্য চুক্তি ও লাইসেন্স দেওয়ার মানদণ্ড ও প্রক্রিয়া নির্ধারণ করেছে এবং কার্যক্ষেত্রে সেসব বিধিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে। এর ফলে বিগত সরকারের অধীনে চলমান সব সরাসরি দরকষাকষি বা আলোচনাকে স্থগিত করা হয়েছে। তবে সরকারি ক্রয় চুক্তি সম্পর্কিত সীমিত তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে।
প্রতিবেদন প্রকাশকালে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের মুখপাত্র বলেন, আর্থিক স্বচ্ছতা কার্যকর সরকারি আর্থিক ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। এটি বাজারে আস্থা তৈরি করে, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে শক্তিশালী করে এবং মার্কিন কোম্পানিগুলোর জন্য সমান প্রতিযোগিতার সুযোগ তৈরি করে।
তিনি বলেন, আর্থিক স্বচ্ছতা সরকারকে আরও জবাবদিহিমূলক করে তোলে। কারণ এতে সরকারের বাজেট ও ব্যয়ের স্বচ্ছতা জনসমক্ষে উন্মুক্ত হয়। বার্ষিক এই স্বচ্ছতা মূল্যায়ন করদাতাদের অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেও সহায়ক বলেও মনে করেন তিনি।
প্রতিবেদনে দেখা যায়, ১৪০টি সরকার ও সংস্থার মধ্যে ৭১টি ন্যূনতম আর্থিক স্বচ্ছতার মানদণ্ড পূরণ করেছে। বাকি ৬৯টি মানদণ্ড পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। তবে এদের মধ্যে ২৬টি সরকার উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।