Tuesday 14 Oct 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাটের ভালো দামে কৃষক খুশি, ফিরছে আগ্রহ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৮:০৩ | আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১০:০৬

জেলার মান্দা উপজেলার সতিহাট পাটের বাজার

নওগাঁ : দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সোনালি আঁশ পাট চাষে নওগাঁর কৃষকরা আশার আলো দেখছেন। পাটের ভালো দাম পেয়ে তারা খুশি। যদিও পানি স্বল্পতা, শ্রমিক সংকট ও আঁশ ছাড়ানোর জটিলতার মতো বিভিন্ন কারণে এই অঞ্চলে পাটের আবাদ কমেছে, তবুও এবার ভালো ফলন ও বাজারের সন্তোষজনক দাম কৃষকদের মধ্যে নতুন করে আগ্রহ সৃষ্টি করছে।

নওগাঁর মান্দা উপজেলার সতিহাট জেলার সবচেয়ে বড় পাটের বাজার। সেখানে ভোর থেকেই কৃষকরা ভ্যান, সাইকেল ও ভটভটিতে করে পাট নিয়ে আসেন। সকাল ৮টার মধ্যেই সব পাট কেনাবেচা শেষ হয়ে যায়।

স্থানীয় কৃষকদের কেউ কেউ বলছেন, গত বছর পাটের দাম কম থাকায় লোকসান হয়েছে। ভেবেছিলাম আর পাট চাষ করব না। কিন্তু এবার ভালো দাম পেয়েছি, তাতে সব খরচ বাদেও কিছু লাভ থাকবে। পরের বছর আরও বেশি জমিতে পাট চাষ করার কথা ভাবছি।’

বিজ্ঞাপন

পাট চাষি সুলতান জানান, ‘পাট জাগ দেওয়া ও আঁশ ছাড়ানোর জন্য পর্যাপ্ত পানি পাওয়া খুবই কঠিন। শ্রমিকও পাওয়া যায় না, পেলেও মজুরি অনেক বেশি। তারপরও এবার ভালো ফলন হয়েছে। দামও ভালো। প্রতি মণ পাট এবার ৩৯০০ টাকায় বিক্রি করেছি। এবার ভালো দাম পাওয়ায় তিনি বেশ খুশি।

তিনি বলেন, যদি সরকার নদী বা খাল সংস্কার করে সেচের ব্যবস্থা করে, তাহলে আমাদের মতো ছোট কৃষকদের জন্য পাট চাষ আরও সহজ হবে।’

পাট চাষি ফরিদ হোসেন জানান, এক বিঘা জমিতে পাট চাষে ১১ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হয়। এতে ফলন পাওয়া যায় ৭ থেকে ১০ মণ। তবে এবার খরচ বেশি হলেও দাম বাড়তি পাচ্ছি।

আরেক পাট চাষি আরিফ বলেন, শুরুর দিকে বেশি বৃষ্টির কারণে কিছু পাট নষ্ট হয়েছিল। তবে তিনি বিঘাপ্রতি ৮ মণ ফলন পেয়েছেন।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) মো. খলিলুর রহমান জানান, পানির অভাব, আঁশ ছাড়ানোর জটিলতা ও শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকরা পাট চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। ফলে গত পাঁচ বছরে প্রায় আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ কমেছে।

তিনি আরও বলেন, ‘এ বছর জেলায় ৩ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে প্রায় ৯ হাজার ৬৮৫ টন পাট উৎপাদনের লক্ষ্য ধরা হয়েছে। তার মতে, পলিথিনের ব্যবহার কমিয়ে পাটজাত পণ্যের ব্যবহার বাড়ানো গেলে পাটের চাহিদা এবং দাম উভয়ই বাড়বে।

পাট চাষে দীর্ঘদিনের লোকসান আর নানা সমস্যার পর এবার কৃষক লাভের মুখ দেখছেন। তারা যদি ন্যায্য মূল্য পান, তবে আবারও পাট চাষে আগ্রহী হবেন। সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সহায়তা দেওয়া হলে পাটের উৎপাদন আরও বাড়বে। দেশের অর্থনীতিতে এর ভূমিকা আরও শক্তিশালী হবে। একইসঙ্গে পাটের ব্যবহার বাড়াতে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা গেলে সোনালি আঁশের হারানো গৌরব আবার ফিরে আসবে।

সারাবাংলা/এসআর