ঢাকা: বিশ্বের সর্ববৃহৎ হালাল পণ্য ও সেবার প্রদর্শনী মালয়েশিয়া ইন্টারন্যাশনাল হালাল শোকেস (মিহাস) ২০২৫তে অংশ নিয়েছে রিমার্ক এইচবি লিমিটেড। প্রদর্শনীতে বাংলাদেশে উৎপাদিত রিমার্কের পণ্য দেখে জাতীয় ঐক্য মন্ত্রণালয়ের মহাসচিব দাতো’ হাসলিনা বিনতি আব্দুল হামিদ উচ্ছ্বসিত প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। শুধু তাই নয় হারল্যানের বাংলাদেশে উৎপাদিত লিপস্টিক ব্যবহার করে এর গুণগত মান ও বিশ্বমানের প্যাকেজিং দেখে মালয়েশিয়াতে এর ব্যবহারকারীদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। প্রদর্শনীতে এসে রিমার্কের স্টল ঘুরে দেখেন।
দেশের প্রথম হালাল স্কিনকেয়ার ও কসমেটিকস প্রস্তুতকারক হিসেবে রিমার্ক এই প্রদর্শনীর মাধ্যমে ১শ বিলিয়ন ডলারের গ্লোবাল হালাল ইন্ডাস্ট্রিতে অংশ নিয়েছে। রিমার্কের লিলি, নিওর, সিওডিল, হারল্যান, স্কিনমিন্ট, অরিক্স, ক্যাভোটিন, একনল, ডার্মাইউসহ ব্র্যান্ডগুলোর হালাল সার্টিফিকেশন পাওয়া উচ্চ মান সম্পন্ন দুই শতাধিক পণ্য এই পদর্শনীতে উপস্থাপন করা হচ্ছে।
এই প্রদর্শনীতে এসে বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ার ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার মোসাম্মত শাহানারা মনিকা ও রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) মহাপরিচালক-১ বেবী রাণী কর্মকারও প্রশংসা করেছেন রিমার্কের। বুধবার সকালে মেলা প্রাঙ্গণে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন উদ্বোধনকালে রিমার্কের পণ্যের মান ও প্যাকেজিং দেখে ভূয়সী প্রশংসা করেন তারা।
হালাল শোকেসে চতুর্থ বারের মত বাংলাদেশ এবারও অংশগ্রহণ করেছে। গ্লোবাল কসমেটিকস ব্র্যান্ডের বাংলাদেশে উৎপাদিত বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদক প্রতিষ্ঠান রিমার্কসহ খাদ্য, জামদানী, হস্তশিল্প, পাটজাত, সিরামিক, লেদার, স্ক্রিন কেয়ার সামগ্রীর বুথসহ বাংলাদেশের পর্যটন ও পণ্যকে বিশ্ব দরবারে পরিচিত করে তুলতে বাংলাদেশ হাইকমিশনের দুইটি বুথসহ মোট বারটি বুথ স্থান পায় এবারের প্রদর্শনীতে।
রিমার্কের ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইউনিটের (আইবিইউ) ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর রাশেদুল ইসলাম জানান, রিমার্ক এলএলসি ইউএসএ এবং দক্ষিণ এশিয়া বিজনেস ইউনিট-রিমার্ক এইচ বি লিমিটেড ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া বিজনেস ইউনিট- হারল্যান নিউ ইয়র্ক কোম্পানি লিমিটেড, থাইল্যান্ড যৌথভাবে এতে অংশ নিয়েছে। আমরা উদ্বোধনী দিনেই অভূতপূর্ব সাড়া পেয়েছি। বিভিন্ন দেশের ক্রেতারা আমাদের পণ্যগুলোর ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়েছেন। আশা করছি মেলা থেকে রপ্তানির বড় সাড়া মিলবে।
তিনি বলেন, আমাদের ব্র্যান্ডগুলো সর্বস্তরের ভোক্তাদের আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এই সুদৃঢ় অবস্থানকে বিশ্বব্যাপী আরও ছড়িয়ে দিতেই আমাদের প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ। গ্লোবাল ব্র্যান্ডের বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য নিয়ে অংশগ্রহণ উৎপাদন খাতে বাংলাদেশের সুনাম আরও নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে সক্ষম হবে। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দর্শনার্থী ও ব্যবসায়ীদের সামনে ব্র্যান্ডগুলোকে তুলে ধরতেই এই প্রদর্শনীতে অংশ নিচ্ছে রিমার্ক।
হালাল কসমেটিকস ব্যবহার করার বৈশ্বিক প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে, শুধুমাত্র মুসলিমদের মধ্যে নয়, নিরাপদ এবং নৈতিক গুণাবলীর কারণে অ-মুসলিমদের মধ্যেও জনপ্রিয়। হালাল পণ্যের বিশ্ব বাজার প্রতি বছর ৮ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। রিমার্ক ইতিমধ্যেই সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া এবং আজারবাইজানে তার কার্যক্রম চালু করেছে। উদ্ভাবন ও কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে রিমার্কের হালাল পণ্য বিশ্ব জুড়ে সম্প্রসারণের পরিকল্পনায় এই প্রদর্শনী একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে বলে আমরা আশাবাদী বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও জানান, এরই মধ্যে থাইল্যান্ডের সুবিশাল বাজারে বাংলাদেশে উৎপাদিত আমাদের কসমেটিকস ও স্কিন কেয়ার পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। প্রদর্শনী থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে রিমার্কের পণ্য রপ্তানির আরও বড় সুযোগ সৃষ্টি হবে বলে আশা করছি। এবারের কসমোপ্রফ থেকে নতুন রপ্তানি আদেশ বাংলাদেশে কসমেটিকস পণ্য উৎপাদনের আরেকটি মাইলফলক পার করবে বলে মনে করছি। তাছাড়া রিমার্ক এর অপরাপর ত্বক সুরক্ষা ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে হালাল সার্টিফিকেশন প্রাপ্ত পণ্যও বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হবে। আশা করছি মধ্যপ্রাচ্যসহ হালাল কসমেটিকস এর বিশ্ব বাজারে প্রবেশ করতে পারবো আমরা।
উল্লেখ্য, লাখো ভোক্তার আস্থা অর্জন করে রিমার্ক এইচবি দক্ষিণ এশিয়ায় কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার পণ্য উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। গুণগত মান, সাশ্রয়ী মূল্য ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এই শিল্পে একটি নতুন সংজ্ঞা রচনা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় ত্বকের নানান সমস্যার সমাধানে অগ্রণী ভূমিকা রেখে যাচ্ছে রিমার্কের গ্লোবাল ব্র্যান্ডগুলো। ইতোমধ্যে রিমার্কের আন্তর্জাতিক পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশে উৎপাদিত কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার পণ্য অনেক দেশে রপ্তানি হচ্ছে এবং নতুন নতুন গন্তব্যে রপ্তানি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এখন থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাজার থেকে রিমার্কের পণ্যগুলো কিনতে পারবেন। বিশেষ করে যারা বিদেশী পণ্যের প্রতি বেশি আগ্রহী তাদের জন্য দারুণ সুযোগ।
মালয়েশিয়া বহিমুখী বাণিজ্য উন্নয়ন করপোরেশন (ম্যাট্রেড) এর এক বিবৃতিতে জানানো হয়, মিহাস ২০২৫-এ বাংলাদেশসহ ৮০টি দেশের ১ হাজার ১৯টি কোম্পানির ২ হাজার ৩৮০টি বুথ ও আন্তর্জাতিক প্রদর্শক অংশ নিয়েছে। এবারের আয়োজনে প্রায় ৪৫ হাজার দর্শনার্থীর উপস্থিতি আশা করছে আয়োজকরা। ইভেন্টে প্রদর্শনীর পাশাপাশি ছিল বিশেষ ক্রয় মিশন (আইএনএসপি), নলেজ হাব সেমিনার, পুরস্কার বিতরণী ও ব্যবসায়িক সংলাপের সুযোগ। হালাল খাদ্য ও পানীয়, ওষুধ, চিকিৎসা সরঞ্জাম, ইসলামিক অর্থায়ন, ফ্যাশন ও লাইফস্টাইল পণ্য, ব্যক্তিগত যত্ন, প্রসাধনী এবং মুসলিম-বান্ধব পর্যটন—সব মিলিয়ে একটি সমন্বিত প্রদর্শনী এটি। আয়োজকদের মতে, মিহাস ২০২৫ কেবল প্রদর্শনী নয় বরং বৈশ্বিক হালাল শিল্পে মান, উদ্ভাবন এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারত্বের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন। ২০২৪ সালে মিহাস ৪ দশমিক ৩ বিলিয়ন রিঙ্গিত বিক্রি রেকর্ড করে নতুন মাইলফলক সৃষ্টি করেছিল।