Sunday 21 Sep 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ট্রাম্পের এইচ-১বি ভিসা নীতি ঘিরে অস্থিরতায় ভারতীয়রা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০০:৫৯ | আপডেট: ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০০:৫৬

সান ফ্রান্সিসকো বিমানবন্দরে এমিরেটসের একটি ফ্লাইট ছাড়ার আগে আতঙ্কে কয়েকজন ভারতীয় যাত্রী নেমে যান। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিক সিদ্ধান্তে এইচ-১বি ভিসায় ১ লাখ ডলারের ফি আরোপের ঘোষণায় চরম অস্থিরতা তৈরি হয়েছে ভারতীয় তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। এই নীতির প্রতিক্রিয়ায় শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) ভারত সরকার জানায়, এই ধরনের পদক্ষেপে গুরুতর মানবিক পরিণতি হতে পারে এবং তারা আশা করছে বিষয়টি দ্রুত সমাধান করা হবে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ইনডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, ট্রাম্পের ঘোষণাটি রোববার (২১ সেপ্টেম্বর) থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকায় এইচ-১বি ভিসার আওতায় ভারতের হাজার হাজার পেশাজীবী ও তাঁদের পরিবার আতঙ্কে পড়ে যান। অনেকেই তড়িঘড়ি করে আমেরিকায় ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁদের আশঙ্কা, আমেরিকার বাইরে ভ্রমণে গেলে আর ফিরে যেতে পারবেন না।

বিজ্ঞাপন

অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে—সান ফ্রান্সিসকো বিমানবন্দরে এমিরেটসের একটি ফ্লাইট ছাড়ার আগে আতঙ্কে কয়েকজন ভারতীয় যাত্রী নেমে যান। এর ফলে ফ্লাইটটি পরিচালনায় বেশ কয়েক ঘণ্টা বিলম্ব হয়ে যায়।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে—হায়দরাবাদ, বেঙ্গালুরু ও পুনের মতো শহরগুলোতে প্রচুর আইটি কর্মী রয়েছেন। ট্রাম্পের ঘোষণায় তাঁদের পরিবারগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় রোববারকে সামনে রেখে আমেরিকায় যাওয়ার জন্য ওই শহরগুলোতে প্রচুর টিকিট বুকিং হয়। অ্যামাজন, মাইক্রোসফট, মেটা ও গুগলের মতো প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোও নিজেদের কর্মীদের সতর্ক করে জানায়—যুক্তরাষ্ট্র ছেড়ে বাইরে গেলে নতুন নিয়মের বিপাকে পড়তে হবে।

এ অবস্থার মধ্যেই হোয়াইট হাউস অবশ্য পরিষ্কার করে জানিয়েছে, ফি শুধুমাত্র নতুন আবেদনকারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে, পুরোনো ভিসাধারী বা নবায়নকারীদের ক্ষেত্রে কোনো ফি লাগবে না। তবে এর আগে মার্কিন বাণিজ্যসচিব হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছিলেন, ফি প্রতি বছর দিতে হবে এবং নবায়নের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে।

যুক্তরাষ্ট্রে এইচ-১বি ভিসাধারীদের প্রায় ৭০ শতাংশই ভারতীয়। শুধু গত বছরই প্রায় ২ লাখ ৮৫ হাজার ভারতীয় এই ভিসা পেয়েছেন। ফলে এই সিদ্ধান্তটি ভারতীয় আইটি খাত ও পরিবারগুলোর জন্য বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় ওয়াশিংটনে ভারতীয় দূতাবাস জরুরি হেল্পলাইন চালু করেছে।

এই বিষয়টিকে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতো অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্থ রেড্ডি। অন্যদিকে বিরোধী নেতারা ট্রাম্পের এমন পদক্ষেপের জন্য মোদিকেই দায়ী করছেন। কংগ্রেস নেতা অখিলেশ প্রসাদ সিং বলেন, ‘এতে প্রমাণ হয়, তারা ভারত বা মোদিকে দেখতে চায় না।’

মার্কিন চেম্বার অব কমার্সও উদ্বেগ প্রকাশ করে জানিয়েছে—এটি প্রবাসী কর্মী, পরিবার ও নিয়োগদাতাদের ওপর ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে। অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা মন্তব্য করেছেন, মাত্র একদিনের নোটিশে এমন নিয়ম জারি করা প্রক্রিয়াটিকে অস্থিতিশীল ও বিশৃঙ্খল করে তুলেছে।

এইচ-১বি ভিসার আওতায় মূলত বিজ্ঞানী, প্রকৌশলী ও প্রোগ্রামারদের ছয় বছর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হয়। ট্রাম্প বরাবরই দাবি করে আসছেন, ভারতীয় আউটসোর্সিং কোম্পানিগুলো এই ভিসা ব্যবস্থাকে ব্যবহার করে মার্কিনদের চাকরি কেড়ে নিচ্ছে। তিনি এটিকে ‘জাতীয় নিরাপত্তা হুমকি’ হিসেবেও উল্লেখ করেছেন।

বিশ্লেষকেরা সতর্ক করেছেন, হঠাৎ এই ধাক্কা শুধু ভারত নয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিজের অর্থনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। বিশেষ করে, সফটওয়্যার উন্নয়ন থেকে শুরু করে ব্যাংকিং খাত পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে এর প্রভাব পড়তে পারে।

সারাবাংলা/এসএস

অস্থিরতা এইচ-১বি ট্রাম্প ভারতীয়রা ভিসা নীতি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর