ঢাকা: ৫ আগস্ট ২০২৪। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেলে ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটে। এর পর থেকে দুয়েকদিন দেশ ছিল প্রশাসন শূন্য। এমনকি সরকার পতনের পর পরই পুলিশবিহীন হয়ে পড়ে থানাগুলো। ফলে সেখান থেকে অস্ত্র লুট করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। পরে ৮ আগস্ট নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় বসে। এর পর সেনাবাহিনীর সহায়তায় অস্ত্র উদ্ধার কার্যক্রম শুরু হয়। ওই সময় আহ্বান জানানো হয়, অবৈধ অস্ত্রগুলো যাতে সবাই নিজ নিজ থানায় জমা দেয়। এতে সাড়া দিযে অনেকে অস্ত্র জমাও দেয়। পাশাপাশি অভিযান চালিয়েও কিছু অস্ত্র উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তবে লুট হওয়া অসংখ্য অস্ত্র এখনো উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
পুলিশ বলছে, অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে। এসব অস্ত্র উদ্ধার করা না গেলে নির্বাচনে সেগুলো ব্যবহারের আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া, দেশকে অস্থিতিশীল করতে এসব অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারের জোড়ালো আশঙ্কা রয়েছে। গত ৭ সেপ্টেম্বর গাজীপুরে র্যাব অস্ত্র উদ্ধার অভিযানে গেলে পাড়া-প্রতিবেশিদের দিয়ে মব সৃষ্টি করে আটকে রাখে তাদের। একই দিন রাতে টঙ্গীতে অস্ত্র, গুলিসহ একটি ট্রাক জব্দ করে র্যাবের টহল দল। অন্যদিকে, বেনাপোলে ভারত থেকে আসা মরিচের ট্রাক থেকে অস্ত্র ও গুলি জব্দ করেছে বিজিবি।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘আগের তুলনায় দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। এই সুযোগে আগের সরকারের লোকজন বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছে। গণমাধ্যমে তাদের ষড়যন্ত্রের বিষয়গুলো উঠে আসছে। এসব নিয়ে নতুন করে পরিকল্পনা করা হয়েছে। কীভাবে তাদের মোকাবিলা করতে হবে সেটা নিয়ে কাজ চলছে।’ অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার যে কারও জন্য অশনি সংকেত বলেও সাবধান করে দেন তিনি।
নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন্দ্রীয় ছাত্রসংসদ ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন সামনেই। এছাড়া, অক্টোবরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা রয়েছে। আবার ড. ইউনুস এই মুহূর্তে জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে আমেরিকায় রয়েছেন। এর পর ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। সবমিলিয়ে আওয়ামী লীগের সুযোগ বুঝে ঝাঁপিয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়া, যেসব অবৈধ অস্ত্র ধরা পড়ছে তার বেশিরভাগই অসৎ উদ্দেশ্যে বহন করা হচ্ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ সদস্যরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর থেকেই আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা নানানভাবে ষড়যন্ত্র করেই চলেছে। এই ষড়যন্ত্র গভীর থেকে গভীরতর জায়গায় পৌঁছেছে। তারা থেমে নেই। বাংলাদেশকে প্রয়োজনে ভারতের কাছে দিয়ে হলেও তারা দেশের ক্ষমতা নিতে চাইছে। এজন্য অবৈধ অস্ত্র গুরুত্বপুর্ণ ফ্যাক্ট হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবৈধ অস্ত্র দিয়ে বড়ধরনের নাশকতা করতে পারে- এমন তথ্য রয়েছে গোয়েন্দা সংস্থার হাতে। তাই তারা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে প্রতিদিন অভিযান চালাচ্ছে। এতে অনেক অস্ত্র উদ্ধারও হয়েছে।
সেনাবাহিনীর তথ্যমতে, গত এক মাসে ৮০টির মতো অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করেছে। সেইসঙ্গে আরও অনেক দেশীয় অস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। পাশাপাশি গ্রেফতার করা হয়েছে শতাধিক সন্ত্রাসীকে। অন্যদিকে, গোয়েন্দা সংস্থার তথ্যে উঠে এসেছে, কারাগার থেকে জামিনে বের হওয়া সন্ত্রাসীদের নজরদারি করা হচ্ছে। তাদের গতিবিধি নজরদারিতে এনে নিয়মিত তদারকি করা হচ্ছে। প্রয়োজনে তাদের ফের গ্রেফতারের কথাও ভাবা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগের বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্মে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে, সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে ড. ইউনুস জাতিসংঘে থাকাবস্থায় দেশে একটা গোলযোগ করতে হবে। সেই সুবাদে আওয়ামী লীগের দেশে ফিরে আসার পথ সুগম হবে বলে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনো কিছুতেই কাজ হবে না। আওয়ামী লীগের ফেরার কোনো সম্ভবনা নেই। সময়মতো নির্বাচন হবে। সেই নির্বাচনে গণতন্ত্রের বিজয় সুনিশ্চিত।